ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিনোদন

পালাগানে মঞ্চ মাতাবেন শাহ আলম সরকার

সায়েম সাবু | প্রকাশিত: ১০:১৬ এএম, ১১ নভেম্বর ২০১৭

১৯৮৮ সাল। কৈশোরের হেয়ালিপনা তখনও মনেপ্রাণে। তবে ছন্নছাড়া ভাব তারও আগে থেকেই। রাত কাটে ফুটপাতেই। রজব মাসের ২৯ তারিখ। ওরশে অনেকটাই কাকতালীয়ভাবে বন্ধুদের নিয়ে বায়নায় গান করতে আসেন পুরান ঢাকার শাঁখারীপট্টিতে। গানের দলের সবাই অপরিপক্ব। তাল, লয় ছাড়া গানে মঞ্চ আর মাতানো হয় না। ঘণ্টাখানেক পরেই দর্শক সব উধাও হয় আসর ছেড়ে। ব্যর্থতার দায়ে মঞ্চের খুঁটির সঙ্গে রশি দিয়ে শিল্পীদের বেঁধে ফেলার আয়োজন করে কমিটির লোকজন। অবশেষে পা ধরে মাফ চেয়ে প্রাণে রক্ষা।

১৯৯৮ সাল। বাউল সম্রাট আবুল সরকারের যোগ্য শিষ্য তখন। সুর আর সুনামের দ্যুতি চারিদিকে। সেই শাঁখারীপট্টির বাউল গানের আয়োজক কমিটিই বায়না করে আনেন তাদের। গানে মঞ্চ মাতান। ভক্তদের কাঁদান। বখশিশে বখশিশে ভরে যায় গানের আসর।

গানের শেষ বেলায় শোনান, ‘দশ বছর আগে এই ঘাটেই পা পিছলে গিয়েছিল। আজ সেই ঘাটেই উঠে দাঁড়িয়েছি।’

এই কৃতি বাউল সাধকের নাম শাহ আলম সরকার। বাউল মঞ্চে উঠে দাঁড়ানো এক আলোকদ্যুতির নাম। আজ সন্ধ্যায় ঢাকা আন্তর্জাতিক ফোক ফেস্টিভাল মাতাবেন গুণী এই শিল্পী। শরিয়ত-মারফত পালাগানে তার সঙ্গে থাকবেন আরেক খ্যাতিমান বাউল শিল্পী আলেয়া বেগম।

শাহ আলম সরকার বলেন, পালাগান এবং কবিগান দুই বাংলার অতি জনপ্রিয় একটি বাউল পরিবেশনা। আন্তর্জাতিক ফোক ফেস্টে পালাগানকে গুরুত্ব দেয়ায় মূলত এই অঞ্চলের বাউল সাধকদের বিশেষ মূল্যায়ন করা হয়েছে বলে মনে করি।

সঙ্গীতমনা পরিবারে জন্ম। অভাবের কারণে শৈশবে বাড়ি ছাড়লেও গান ছাড়তে পারেননি। যন্ত্র আর সুরে ভরসা রেখেই তার পথচলা। সদরঘাটে দোকানে দোকানে পুরাতন জিপার (চেন) কিনে ফুটপাতে বিক্রি করতেন বাঁচার তাগিদে। এভাবেই কৈশোরেই হাল ধরেন পরিবারের। সময়ের ব্যবধানে ব্যবসার পরিধিও বাড়ে। তবে সে ব্যবসায় আর স্থিত হননি।

ব্যবসা, পরিবার ছেড়ে দ্বারস্থ হন ওস্তাদ আবুল সরকারের। গানের শিক্ষাগুরু আবুল সরকারের দলে দোহারি হন। অল্প দিনেই ওস্তাদের গায়কী ঢং, সুর, গান লেখার কৌশল রপ্ত করেন। পালাগানের শিল্পী হিসেবে খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। সাধনায় পূর্ণতা আসে গান লেখার কৌশলে। ভাববাদী, মুর্শিদী, বৈঠকী, বিচ্ছেদ, চটুল, ফোক গানে সমৃদ্ধ করেন বাউল ভাণ্ডার। আড়াই হাজারের অধিক গান আর ছয় শতাধিক অ্যালবাম করে বাউল ভক্তদের হৃদয় জয় করেছেন।

জয় করছেন এখনও, লিখছেন এখনও। তার লেখা গানেই ফোক সম্রাজ্ঞী মমতাজের খ্যাতি মিলেছে গ্রামবাংলায়। মমতাজের গাওয়া সত্তরটি অ্যালবামে গান লিখে বিশেষ পরিচিতি পেয়েছেন তিনিও। শতাধিক সিনেমায় গান লিখে নজর কেড়েছিলেন সিনেমাপাড়ায়।

গান লিখেই ভাগ্য ফিরিয়েছেন। ঢাকার অদূরে কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদে বহুতল বাড়িও বানিয়েছেন দুটি। গানের মধ্যদিয়ে সংসারে সচ্ছলতা এলেও তিনি ঠিক সংসারের মানুষ নন। সাদাসিধে জীবনযাপনে আছেন পালাগানের মঞ্চেই।

এএসএস/বিএ/আরআইপি

আরও পড়ুন