তারকা গড়ার এই কারিগরের খোঁজ রাখেন না কেউ
পড়াশোনা করেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, ব্যবস্থাপনায় মাস্টার্স। ১৯৮০ সালে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন গাজীপুর শহরের কাজী আজিম উদ্দিন কলেজে। কিন্তু নাটকের প্রতি ভালোবাসা তাকে নিয়ে এলো রঙিন আলোর এই আঙিনায়। মেধাবী মানুষটি হয়ে উঠলেন পুরোদস্তুর নাটকের মানুষ। অনেক তারকা তার হাত ধরে এসেছেন, অনেকেই পেয়েছেন আকাশ ছোঁয়া খ্যাতি। কিন্তু তিনি রয়ে গেলেন আড়ালে।
জীবনের করুণ পরিণতি বরণ করে আজ মানবেতর দিনযাপন তার। কেউ রাখেন না খোঁজ, কেউ কেউ হয়তো নামটাই ভুলে গেছেন। বলছি খ্যাতিমান নাট্যকার ও নির্মাতা মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমান গাজীপুরীর কথা। একটা সময় তিনি মেতে থাকতেন গল্প, চরিত্র আর লাইট-ক্যামেরার জৌলুশ নিয়ে। ঘিরে থাকতো রঙ বেরঙের মানুষেরা। কিন্তু আজ গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের পোড়াবাড়ির নিজ বাড়িতে নিভৃতে হাহাকার ভরা শূন্যতা নিয়ে দিন কাটে তার।
হার্টের অসুখ, কিডনির সমস্যা আর ডায়াবেটিকসের সঙ্গে যুদ্ধ করতে করতে আজ ক্লান্ত তিনি। আর অর্থের যোগান দিতে দিতে ক্লান্ত তার পরিবার। জানালেন গাজীপুরি নিজেই। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী বড়ছেলে গাজীপুরের একটি কলেজের অধ্যাপক। একাই টানছেন সংসার, ভাইয়ের পড়াশোনা খরচ, বাবার বহুমাত্রিক অসুখের চিকিৎসা ব্যায়।
গাজীপুরি জানালেন, তার প্রথম লেখা নাটকের নাম ‘শ্রাবণ বসন্তে’। এতে অভিনয় করেই টিভি নাটকে যাত্রা শুরু করেছিলেন অভিনয়ে আজকের নন্দিত মানুষ জাহিদ হাসান। শুধু তাই নয়, তার নাটক দিয়ে শ্রাবন্তী, শংকর শাওজাল, ডি এ তায়েব, সেলিম মাহবুব, ফারজানা ছবি, রুনা খান, স্বপ্না ফেরদৌসী, হোসেনে আরা পুতুলসহ অনেক অভিনেতা-অভিনেত্রী শোবিজে পা রাখেন। তিনি তৈরি করেছেন অনেক পরিচালকও।
কিন্তু দুর্দিনে এই গুণীজনের খোঁজ রাখেন না কেউ। নিজ থেকে অনেকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা এদিকে করেও তেমন লাভ কিছু হয়নি। আক্ষেপ করে গাজীপুরী আরও বলেন, ‘আমার হাত ধরে অনেক বড় বড় তারকা নাটকে অভিনয় ও নাটক নির্মাণে এসেছেন। তাদের অনেকেই আজ প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু যোগাযোগ করলেও কেউ খোঁজ নেয় না। ব্যাতিক্রম শুধু গাজীপুর শিল্পী ঐক্যজোট। সংগঠনের আহ্বায়ক গোলাম মোস্তাফা খান অন্যান্যদের নিয়ে কিছু দিন ধরে নিয়মিত খোঁজ খবর নিচ্ছেন।
দেশের দ্বিতীয় প্যাকেজ নাটকের নির্মাতা মতিউর রহমান গাজীপুরি। সেই নাটকে অভিনয় করেছিলেন অভিনেতা ডা. এজাজ। তার কাছে এই নির্মাতা সম্পর্কে জানতে চাইলে জাগো নিউজকে জানালেন, ‘আমি মতি ভাইকে সম্মান করি। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে তার কিছু নাটকে আমি কাজ করেছি। অনেকদিন ধরেই তিনি অসুস্থ। আমি নিজে তার চিকিৎসাও করেছি। মাঝখানে অনেকদিন সরাসরি কোনো যোগাযোগ নেই।
তবে উনার এক প্রতিবেশির মাধ্যমে গেল মাসে খবর পেলাম শরীরের অবস্থা কিছুটা নাজুক। আমাদের সকল প্রযোজক, পরিচালক ও শিল্পীদের উচিত মতি ভাইয়ের মতো গুণী মানুষের পাশে দাঁড়ানো। যার যেমন সাধ্য তেমন করেই সাহায্যের হাত বাড়ান।’
এদিকে মতিউর রহমান গাজীপুরি বলেন, ‘আমি সুস্থ হতে চাই। আবার নাটক রচনা ও নির্মাণ করতে চাই। এজন্যে প্রয়োজন নগদ টাকার। তাই এ ব্যাপারে সহায়তার জন্যে প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করতে চাই।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিরেক্টর গিল্ড’র সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুজ্জামান সাগর জাগো নিউজকে বলেন, ‘মতিউর রহমান গাজিপুরী ভাই আমাদের অগ্রজ। তার অনেক কাজ আজও অনুপ্রেরণা দেয়। অনেক তারকা শিল্পী ও নির্মাতা তার ছায়ায় এসেছে ও বেড়ে উঠেছে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় দীর্ঘদিন থেকেই তিনি সবকিছুর আড়ালে ছিলেন। নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন শোবিজ থেকে। তাই উনি আমাদের সংগঠনটিরও সদস্য হতে পারেননি। এটা আমাদের জন্যও কষ্টের।
অনেকদিন পর উনার খবর পেলাম আপনার মাধ্যমে, সেটাও খারাপ ইস্যু নিয়ে। আমরা অবশ্যই তার সঙ্গে যোগাযোগ করবো। এবং বিষয়টি আমি আমার সংগঠনের নেতাকর্মীদের জানাবো। আশা করছি সবাই মিলে তার পাশে দাঁড়াতে পারবো। দশের বোঝা খুব বেশি ভারি হয় না।’
এলএ