ডিভোর্স নিয়ে জালিয়াতি, নির্মাতা রনির বিরুদ্ধে মামলা করছেন স্ত্রী
চলতি বছরের শুরুর দিকে স্ত্রী নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছিল তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতা শামীম আহমেদ রনির বিরুদ্ধে। স্ত্রীকে ডিভোর্স না দিয়েই সুবর্ণ নামের এক তরুণীর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কে লিপ্ত তিনি। দেন না স্ত্রীর ভরণ-পোষণ ও দাম্পত্যের মর্যাদা।
এবার জানা গেল তার প্রতারণার নতুন খবর। স্ত্রীকে জাল তালাকনামা পাঠিয়েছেন তিনি স্ত্রী তমা খানের কাছে। এ প্রতারণার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছেন তমা, জানান জাগো নিউজকে। বলেন, রনির বিরুদ্ধে আদালতে গিয়ে নারী নির্যাতন ও প্রতারণা মামলা করবেন তিনি।
এ ব্যাপারে কথা বলতে গেলে তমা সোমবার দুপুরে জাগো নিউজকে বলেন, ‘রনি ও আমার বিয়ে হয় ২০১১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। আমরা ভালোবেসে বিয়ে করেছিলাম। সবকিছুই দারুণ চলছিল। কিন্তু কিছুদিন পর সে আমার ওপর নানা রকম নির্যাতন করতে শুরু করে।
আমি দিনের পর দিন রনির হাতে লাঞ্ছিত হতে থাকি। ও আমাকে শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার করে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে। অসহায় ও হতাশায় আমি আত্মহত্যাও করতে গিয়েছিলাম। আমার অন্যায় হচ্ছে সে অন্য মেয়েদের সঙ্গে অবৈধ মেলামেশা করত, স্ত্রী হিসেবে তার প্রতিবাদ করেছি। বলুন, একজন স্ত্রী হিসেবে চোখের সামনে নিজের স্বামী অন্য মেয়ের অবৈধ মেলামেশা কীভাবে সহ্য করব?’
তমার দাবি, যখন থেকে শামীম আহমেদ রনি শাকিব খানকে নিয়ে ছবি করতে শুরু করেন তখন থেকেই বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। বদলে যায় তার স্বাভাবিক আচরণ। বিভিন্ন ধরনের নারীর সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে তার। বারবার নিষেধ সত্ত্বেও রনি কোনো বারণ শুনেনি।
তিনি বলেন, ‘পরকীয়া নিয়ে আপত্তি তোলায় সে আমার গায়ে হাতও তুলেছে বেশ কয়েকবার। আমি হাসপাতালে থেকে চিকিৎসাও নিয়েছি। সেকথা সবাই জানেন। তবুও আমি চেয়েছি সবকিছু মিটে যাক। স্বামীকে নিয়ে সুখে সংসার করার স্বপ্ন দেখেছি। ভেবেছি ভুল ভাঙলে রনি ফিরে আসবে। কিন্তু মোটেও ব্যাপারটি সে রকম নয়। আমার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে সে আরও বেপরোয়া হয়েছে।
সবাইকে বলে বেড়াচ্ছে আমাকে ডিভোর্স দিয়েছে সে। অথচ এটি মিথ্যা কথা। আমাদের কোনো ডিভোর্সই হয়নি। নতুন বিয়ে করে অন্য মেয়েকে ঠকানোর ধান্ধায়ই সে এমন মিথ্যা কথা প্রচার করে বেড়াচ্ছে। এতে পরিবার ও সমাজের কাছে আমিও নানা বিব্রতকর প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি তার সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে চাই কেন সে ডিভোর্স না দিয়েও সবখানে ডিভোর্সের কথা ছড়াচ্ছে? জবাবে সে প্রথমে বলে আমাদের নাকি বিয়েই হয়নি। আমি যখন ছবিসহ নানা কিছু দিয়ে বিয়ের প্রমাণ দিলাম তারপর বলে আমাদের তালাক হয়ে গেছে। প্রমাণ দেখতে চাইলে তালাকের কাগজও পাঠায় ম্যাসেঞ্জারে। সেটি সম্পূর্ণই জাল তালাকনামা। সেখানে বলা হয়েছে, আমাদের বিয়ের দেনমোহর ছিল ১ লাখ টাকা। কিন্তু আমাদের কাবিননামায় ১০ লাখ টাকা দেনমোহরের কথা উল্লেখ আছে।’
আইনি ব্যবস্থা প্রসঙ্গে তমা বলেন, ‘আমি আমার পরিবার, আমার বিয়ের কাজী ও উকিলের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবার মামলা করব। অনেক ধৈর্য ধরেছি। অনেক সুযোগ দিয়েছি রনিকে। ও আসলে শোধরানোর মানুষ নয়। খ্যাতির মোহে সে অহংকারী হয়ে গেছে। তার অতীত ভুলে গেছে। আমাকে ভালোবাসার ফাঁদে ফেলে বিয়েতে রাজি করিয়েছিল।’
ওর স্ত্রী হিসেবে অনেক অভাব, অভিযোগের সঙ্গে আপস করে আমি ছিলাম। কিন্তু কোনো কিছুরই মূল্য দেয়নি সে। বাধ্য হয়েই আমাকে আইনের সাহায্য নিতে হচ্ছে। আমি আর ওর মতো প্রতারক, ভন্ডের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক রাখতে চাই না।’
তমা আরও বলেন, ‘রনি একটা প্রতারক। নাটক-সিনেমা পরিচালনার নাম ভাঙ্গিয়ে সে মেয়েদের সম্পর্কে ফাঁদ পাতে। বর্তমানে মাহি সেনগুপ্ত নামে কলকাতার এক মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক তার। বিয়ের পর আমাকে বলেছিল গান গাওয়াবে। কবির বকুলের লেখা শওকত আলী ইমনের সুর-সংগীতে একটি গানে কণ্ঠও দিয়েছিলাম আমি ‘বসগিরি’ ছবির জন্য। এটি আসলে সে করেছিল পরকীয়া নিয়ে আমার রাগ ভাঙাতে।’
এ বিষয়ে জানতে একাধিকবার রনির মোবাইলে যোগাযোগ করেও তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
শামীম আহমেদ রনি ‘মেন্টাল’ ছবি নির্মাণ করে আলোচনায় আসেন। ছবিটি সুপার ফ্লপ হলেও শাকিব খানের প্রিয়ভাজন হয়ে তিনি আরও বেশ ক’জন প্রযোজকের লগ্নিতে ছবি করার সুযোগ পান। ‘বসগিরি’ ছবিটিও আশানুরূপ ব্যবসা করতে পারেনি। এরপর ‘রংবাজ’ ছবিটি নির্মাণে হাত দেন তিনি। কিন্তু দেশের আইন না মেনে বিদেশের শিল্পী দিয়ে ছবির শুটিং করায় পরিচালক সমিতির নোটিশ দেয়া হয় তাকে। সেই নোটিশ পেয়েও ছবির কাজ বন্ধ রাখেননি রনি। দেননি নোটিশের কোনো কারণ দর্শানোর জবাবও।
তারই পরিপ্রেক্ষিতে রনিকে বেয়াদব অভিহিত করে নির্মাতা হিসেবে তার সদস্যপদ বাতিল করে দেয় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক। পরে ছবিটি আব্দুল মান্নান শেষ করে মুক্তি দেন।
এলএ