মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে সংসার টিকিয়ে রাখতে চেয়েছি বারবার : বাঁধন
‘কী না করেছি সুখের সংসারের জন্য। তার ইচ্ছেতে বিয়ের পরপরই মিডিয়ার কাজ ছেড়েছিলাম। বিয়ের মাত্র তিন মাসের মাথায় সন্তান নিয়েছিলাম। আমি যদি সংসার করতে না-ই চাইতাম, এগুলো কেন করলাম। কিন্তু সনেট বিয়ের পর বদলে যেতে থাকে। সে একজন ব্যার্থ স্বামী।’ প্রাক্তন স্বামী মেজর ও ব্যবসায়ী মাশরুর সিদ্দিকী সনেট প্রসঙ্গে এভাবেই বললেন অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন।
২০১০ সালে ভালোবেসে সনেটকে বিয়ে করেছিলেন বাঁধন। কিন্তু বিয়ের মাত্র পাঁচ মাসের মাথায় শুরু হয় সাংসারিক কলহ। শেষাবধি সংসার ভেঙ্গে যায় ২০১৪ সালের নভেম্বরে। তবে বিষয়টি এতদিন মেয়ে সায়রার মুখের দিকে তাকিয়ে আড়াল করে রেখেছিলেন বাধঁন। সম্প্রতি মেয়ে সায়রাকে কানাডায় পাঠিয়ে দিতে চাইছেন সনেট। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রকাশ্যে এলো তাদের দ্বন্দ্ব, প্রকাশ হলো ডিভোর্সের খবরটিও।
ডিভোর্সের কারণ জানতে চাইলে বাঁধনের স্বামী একগাদা অভিযোগ করেন বাঁধনকে নিয়ে। তবে সবকিছুই অস্বীকার করেন বাঁধন। তিনি সনেটকে একজন ব্যর্থ স্বামী, ব্যর্থ বাবা আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘সনেটের সঙ্গে পরিচয় হবার পর সে নিজেকে উপস্থাপন করেছিলো দারুণ একজন মানুষ হিসেবে। একটা সুখের সংসারের লোভ দেখিয়েছিলো আমাকে। আমিও একজন সাধারণ নারী হিসেবে নিজের তারকা ইমেজ ভুলে গিয়ে তাকে নিয়ে সুখী হতে চেয়েছিলাম। বাবার বয়সী একজন মানুষকে বিয়ে করেছিলাম। কিন্তু সে স্রেফ আমাকে ঠকিয়েছে। আমার জীবনটাকে সে নষ্ট করে দিয়েছে।’
স্বামীর কাছে উচ্চ বিলাসীতার জন্য হাত খরচ হিসেবে ১ লাখ টাকা চাইতেন বাঁধন। সে নিয়ে শুরু হয় দাম্পত্য কলহ। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে বাঁধন বলেন, ‘ও সবসময়ই আমার নামে মিথ্যাচার করেছে। আমাকে যা-তা বলেছে। আমাকে কলঙ্ক দিতেও ছাড়েনি সে। আমি তার কাছে হাত খরচের জন্য এক লাখ টাকা চাইতাম না। প্রতি মাসের ১৫ তারিখেই তার পকেটে টাকা থাকতো না। আমিও মিডিয়াতে কাজ করি না। সংসারটা কীভাবে চলে বলুন তো? বাসার ভাড়া আটকে থাকতো। ড্রাইভারের বেতন আটকে থাকতো। নানা বিল আটকে থাকতো।
তাই আমি তাকে বলতাম, তুমি টাকা রাখতে পারো না। প্রতি মাসের শুরুতে আমাকে টাকা দিবে। এটা তো যে কোনো স্ত্রীই বলবে, যে স্ত্রী জানে তার স্বামী সংসার চালাতে ব্যর্থ। সে মেয়ের বাবা হিসেবে ব্যর্থ। নিজের অক্ষমতা সে আমার উপর চাপাতে চাইছে। বানিয়ে বানিয়ে বলছে।’
বাঁধনের বাবার বাড়িতে ফ্ল্যাটে সনেটের দেড় কোটি টাকা ব্যয় করেছিলেন। ডিভোর্সের পর সবকিছু রেখে দিয়ে এক কাপড়ে বের করে দেয়া হয়েছিলো বলে দাবি করেন বাঁধনের প্রাক্তন স্বামী সনেট। এই অভিযোগ বানোয়াট দাবি করে বাঁধন বলেন, ‘এগুলো সবই ওর গাল-গল্প। ওর আসলে ব্যক্তিত্বও নেই। নইলে এমন কথা ও বলতে পারতো না। ওর এমন কিছু ছিলো না যে তার সঙ্গে নিয়ে যাবে। যেভাবে সে এসেছিলো সেভাবেই সে গিয়েছে। যেহেতু ডিভোর্স হয়ে গেল, বাধ্য হয়েই সে আমাদের বাসা ছেড়ে যায়।
আর আমাকে সবার কাছে ছোট করতেই ও এসব আজেবাজে কথা ছড়াচ্ছে। আমার বাবার বাসার ফ্ল্যাট তৈরিই ছিলো। যেহেতু আমরা থাকবো বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম তাই সেটিকে আমরা গুছিয়েছিলাম। সেখানে কিছু টাকা সে লগ্নি করেছিলো। এটা তো বাড়ির কর্তা হিসেবেই সে করেছিলো। সংসার চালানোর অংশ। বাসা এটা না হয়ে অন্য কোনোটা হলেও তো একই ব্যাপার ছিলো। তাই না?
যখন সে এখানে খরচ করেছিলো তখন তো সে আমার স্বামী ছিলো। এখানে আমার লোভের তো কিছু নেই। আর ও এত টাকার মালিক নয় যে দেড় কোটি টাকা খরচ করে ফ্ল্যাট সাজাবে। যদি তাই হতো তবে আমার বাবার বাসায় আসতো না। নিজে ফ্ল্যাট কিনে বউ বাচ্চা নিয়ে থাকতো। শিল্পপতিরা ঘরজামাই থাকে না।
তাছাড়া, আমার বাবার নিজের চারতলা বাড়ি আছে মিরপুরে। উত্তরাধিকার সূত্রে আমিও একটি ফ্ল্যাট পাবো। তবে কেন আমি অন্যের কাছ থেকে ফ্ল্যাট-বাড়ি আশা করবো। আল্লাহ তো আমাকে, আমার পরিবারকে কম দেয়নি।’
২০১৫ সালের কোনো এক ঈদের রাতে বাঁধনদের বাসায় মেয়েকে দেখতে গিয়ে হামলার স্বীকার হয়েছিলেন সনেট, দাবি করেন বাঁধনের প্রাক্তন স্বামী। তবে এই বিষয়টিও মিথ্যে বানানো গল্প বলে দাবি করেন বাঁধন। তিনি বলেন, ‘সেদিন আশপাশের প্রায় দেড় শতাধিক মানুষ উপস্থিত ছিলো ঘটনার সময়। তারা জানে কী হয়েছিলো। আমি এসব নিয়ে মুখ খুলতে চাইনি কখনো। কারণ, আমি চেয়েছি আমার মেয়ের বাবার সম্মান ধরে রাখতে।
আমি হয়তো চাইলে একটা বিয়ে করতে পারি। তাতে করে আমার স্বামীর অভাব মিটবে। কিন্তু আমার মেয়ে তো আরেকটা বাবা পাবে না। তার বাবা খারাপ হলেও ওই লোকটাই। আমার মেয়ের বাবা খারাপ লোক এটা প্রকাশ হলে মেয়েটা সমাজে চলতে পারবে না। এইসব ভেবে আমি চুপ থেকেছি। ভেবেছি হয়তো একদিন সব মিটে যাবে। ও আবার ফিরে আসবে। মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আপোস করতে চেয়েছি বারবার। কিন্তু উল্টো সে কানাডার এক মেয়েকে বিয়ে করে ফেলেছে। আমি যদি খারাপই হতাম, তবে ওকে ডিভোর্স দেয়ার পর আরেকটা বিয়ে করে সংসারী হতাম। মেয়েকে নিয়ে একা একা সংগ্রাম করতাম না।
মিডিয়ার সবাই জানে, আমি মাসে প্রায় ২০-২৫ দিন শুটিং করি। আজকাল কাজের মান নিয়েও ভাবি না। যা হাতে আসে সবই করছি। কেন করছি? কেবলমাত্র মেয়েটাকে নিয়ে খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকার জন্য। ওর কোটি কোটি টাকা যদি আমি মেরে দিতাম তবে সেসব টাকা কই? ব্যাংকে টাকা জমিয়ে রেখে কেউ এভাবে হাড়ভাঙা খাটে। আমার কাজের সহকর্মীরা জানেন, আমি কাজের জন্য কতোটা পাগল।
আমার কষ্ট আমি কখনো কাউকে বলতে চাইনি। প্রায় সময়ই অনুভব করি, কেন মানুষ আত্মহত্যা করে। হয়তো আমিও করতাম যদি মেয়েটা না থাকতো। ওই লোক আমার জীবনটাকে অভিশপ্ত করে দিয়েছে। না দিয়েছে সংসারের সুখ, না দিয়েছে কোনো সম্মান। বিচ্ছেদের পর থেকে নানাজনকে ডেকে নিয়ে নানারকম মিথ্যে গল্প শোনাচ্ছে আমাকে ছোট করার জন্য।’
বাঁধনের চরিত্র ও তার পরিবার নিয়ে অনেক কথাই বলেছেন সনেট। সেগুলোর প্রসঙ্গ আসলে বাঁধন বলেন, ‘আমি কেমন সেটা আমার পরিবার, পরিজন, শোবিজের মানুষেরা জানে। এখানে প্রতিটি মানুষ আমাকে ভালোবাসে, স্নেহ করেন, আদর করেন। আমার সব বিপদেই আমি এখানকার মানুষদের পাশে পেয়েছি। খারাপ কোনো মেয়ের জন্য কারো অন্তর কাঁদে না। আমি খারাপ হলে সেটা প্রকাশ হতো। লোকে বলতো। ওর বলা না বলায় কি আসে যায়।
আজ তার সঙ্গে আমার বিরোধ বলে সে মিথ্যে কথা বলে আমাকে বারবার হেয় করতে চায়। আর আমার বাবা দীর্ঘদিন সরকারি দায়িত্ব পালন করেছেন। খারাপ হলে সরকার তাকে সম্মান জানিয়ে অবসরে পাঠাতো না। আমার ভাইয়েরাও স্বশিক্ষিত। এলাকার সবাই জানে কে কেমন।
ওর এইসব মিথ্যাচারের কথা ভেবে আমি ভাবছিলাম মামলা করবো ওর বিরুদ্ধে। এর মধ্যে ও নতুন যন্ত্রণা শুরু করেছে মেয়েকে নিয়ে। সে বাবা হিসেবে বল প্রয়োগ করে মেয়েকে কানাডায় পাঠিয়ে দিতে চায়। আসলে মেয়েটাকে সে আমার কাছ থেকে সরিয়ে নিতে চায়। আমি এটা কখনোই হতে দেবো না।’
মেয়েকে বিদেশে রেখে মানুষ করতে চান সনেট। বাঁধনের পরিবারে সায়রা মানুষ হবে না বলে দাবি করেন তিনি। এই বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বাঁধন বলেন, ‘এসবই তার সাজানো কথা। একবার মেয়েটাকে দেশের বাইরে নিতে পারলে আর কখনো মেয়েটাকে আমার কাছে আসতে দেবে না। তবে আমি এই যে সংগ্রাম করেছি মেয়ের জন্য তার কী হবে?
একজন অভিনেত্রী হওয়া সত্ত্বেও মেয়ের জন্য নিজের ফিগার নিয়ে ভাবিনি। দীর্ঘ আড়াই বছর তাকে বুকের দুধ খাইয়েছি। একটা গৃহবধুও এমনটা করে না। আল্লাহ জানেন, আমার কাছের মানুষেরা জানেন, মেয়েটাকে আমি কত ভালোবাসি। এই মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে কম চেষ্টা করিনি সংসারটা টিকিয়ে রাখতে। কিন্তু পারিনি।
কে ভালো কে মন্দ সেটা মানুষ উপলব্দি করুক। সে আমার সঙ্গে বিচ্ছেদের পর আবার বিয়ে করেছে। অথচ বিচ্ছেদের পরও সে মেয়ের দোহাই দিয়ে আমাকে নিয়ে মালয়েশিয়ায় ঘুরতে গেছে। আমার সঙ্গে একই রুমে থেকেছে। বলেছে, সম্পর্কটা আবার শুরু করবে। কিন্তু সে নতুন করে অন্য একটা মেয়েকে বিয়ে করেছে। সে আসলে আগা গোড়াই একটা ঠকবাজ। আমার আগেও সে বিয়ে করেছে। বিভিন্ন নারীদের সঙ্গেও তার অনেক কাহিনী আমি জেনেছি বিয়ের পর।
কিন্তু আমি তো শোবিজে কাজ করি, কেউ বলতে পারবে এই কথা কোনো প্রেম, সম্পর্ক বা স্ক্যান্ডাল রয়েছে আমার। কোনো হিরো বা পরিচালকের সঙ্গে আমার কোনো অনৈতিক সম্পর্কের কথা কেউ বলতে পারবে? এই মিডিয়াতে কিছুই গোপন থাকে না। সম্মান জানিয়ে সাংবাদিকরা হয়তো অনেক সময় লেখেন না, কিন্তু জানেন সবকিছু। কেউ কী বলতে পারবেন যে অমুকের সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠ কোনো সম্পর্ক আছে? আমি সবার সঙ্গেই কাজের প্রয়োজনে মিশি। কেউ কেউ আছেন পরামর্শক, ভাই-বন্ধু। সবসময় আমি মন দিয়ে কাজটাই করে যেতে চেয়েছি। অথচ সে আমাকে পরকীয়ার অপবাদ দিয়েছে। কোনো প্রমাণ ছাড়াই আমাকে ছোট করে কথা বলছে।’
এই অভিনেত্রী জানালেন, একমাত্র সন্তানকে নিজের কাছে রাখার অধিকার চেয়ে পারিবারিক আদালতে মামলা করেছেন তিনি। গত ৩ আগস্ট এই মামলা দায়ের করা হয়েছে। সেখানে বাদী হয়েছেন তিনি নিজেই। তিনি বলেন, ‘আমি সবার কাছে দোয়া চাই। মেয়েকে নিয়ে লড়াই করে যেন সফল হতে পারি।’
এলএ