শাকিবের সঙ্গে সব ঝামেলার মিটমাট হয়ে গেছে : ফারুক
নানা ইস্যুু নিয়ে গেল কয়েক মাস ধরে উত্তপ্ত আর বিভক্ত ছিলো চলচ্চিত্রাঙ্গন। তবে আশার কথা হলো সকল দ্বন্দ্বের অবসান ঘটিয়ে গত ২৯ আগস্ট মধ্যরাতে আবারও একই ছাতার নিচে এসেছেন চলচ্চিত্রের মানুষেরা। দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা শাকিব খান ও চলচ্চিত্র পরিবারের মধ্যে দ্বন্ধের অবসান ঘটেছে।
শাকিব খানের ওপর থেকে সব ধরনের নিষেধাজ্ঞা ও বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে নিয়েছে চলচ্চিত্র পরিবার। কিন্তু এরপর হঠাৎ করেই চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে শাকিব এফডিসিতে এসে সকলের কাছে ক্ষমা চাইবেন। এ নিয়ে দুই দফা অপেক্ষাও চলে এফডিসিতে। চলচ্চিত্র পরিবারের পাশাপাশি সেখানে উপস্থিত ছিলেন গণমাধ্যমকর্মীরাও। কিন্ত শেষ পর্যন্ত তিনি আর আসেননি। কোনো রকম অসম্মানজনক আপোষে তিনি যেতে রাজি নন বলে শোনা যায়।
আর এতে করেই সমাধান হওয়া ঘটনাটি নতুন দিকে মোড় নেয়। অনেকটাই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোটগল্পের মত ‘শেষ হইয়াও হইল না শেষ’র মতো। তবে চলচ্চিত্রের পরিবারের আহ্ববায়ক চিত্রনায়ক ফারুক গতকাল রাতে এফডিসিতে আলাপকালে সব দ্বিধাই উড়িয়ে দিলেন। তিনি বলেন, ‘যখন আমার বাসায় শাকিব এসেছে এবং নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে বলে দু:খ প্রকাশ করেছে তখনই বিষয়টির সমাধান হয়ে গেছে। শাকিব আমাদের ঘরের ছেলে। তার এমন কোনো অন্যায় নেই যার ফলে এফডিসিতে এসে তার ক্ষমা চাইতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি শাকিবকে বলেছিলাম, যদি সম্ভব হয় এফডিসিতে গিয়ে সবার সাথে একটা গেট-টুগেদার কইরো। কিন্তু আমার কথা হল, কে বলেছে-শাকিবকে এফডিসিতে গিয়ে সবার কাছে ক্ষমা চাইতে হবে? কেন চাইতে হবে? সবার কাছে ক্ষমা চাওয়ার কী আছে? এটা কোন কথা হলো নাকি? আবারও গোল পাকানোর চেষ্টা চলতেছে। একটা দুষ্ট চক্র শাকিবকে সবসময় ব্যবহার করেছে। তারাই এগুলো করার চেষ্টা করছে।’
প্রসঙ্গটি নিয়ে ফারুক আরও যোগ করে বলেন, ‘শাকিব যখন আমার বাসায় এলো সে অনুতপ্ত ছিলো। আমি একটা বিষয় বুঝতে পেরেছি-ও (শাকিব) হুট করেই একটা বিষয় করতে পারবে না। এফডিসিতে ঢুকতে ওর লজ্জা লাগতে পারে। আসল ঘটনা তাই, একটু লজ্জা লজ্জা ভাব হতে পারে। সেজন্যই বলেছি যদি সম্ভব হয় তুমি আইসো, সবার সঙ্গে কথা বইলো।’
শাকিবকে নিয়ে মিয়াভাই খ্যাত এই অভিনেতা বলেন, ‘সে কিছু ব্যাড পিপল দ্বারা আক্রান্ত। সেখান থেকে বেরুতে হবে। আর এরপরও শাকিব যদি কোন সমস্যায় পড়ে, আমাকে বললে আমি তাকে সাহায্য করব। আসা নিয়ে যাওয়া নিয়ে কোন কথা নাই। ওর তো আসার দরকার নাই। কোন প্রয়োজন নাই। শাকিবের সঙ্গে সবকিছুরই মিটমাট হয়ে গেছে। ও ক্ষমা চেয়েছে। ক্ষমা চায় মহৎ মানুষ। ক্ষমা করেও মহৎ মানুষ। এখানে জল ঘোলা করার আর কিছু নেই।
শাকিবের এফডিসিতে আসার আনুষ্ঠানিকতা নিয়ে কোন কথা নেই, বিভাজন নেই, কিছু নেই। শাকিবের সঙ্গে যারা ঘুরে তার মধ্যে কিছু আছে, যারা ফিল্মেরই কিছু না। আর কেউ যদি ভাবে ঝগড়া সে লাগিয়েই রাখবে। সে পরিবারেরও শত্রু। আর তাকে কেউ প্রশ্রয় দিবেও না। শাকিবের এসব বুঝা উচিত।’
ঢাকাই ছবির নাম্বার ওয়ান খ্যাত চিত্রনায়ক শাকিব খান মিয়া ভাই খ্যাত ফারুক’কে ‘সাহেব’ হেয় করার অভিযোগের বিষয়টি প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘শাকিব হয়তো ইমোশনালি কিছু কথা বলে ফেলেছে আমাকে নিয়ে বা উদ্দেশ্য করে। এটা হতেই পারে। আমি ধরে নিয়েছি এটা ঠিক আছে। হয়তো ও (শাকিব) একদিন অনুভব করবে, এ ধরনের কথা বলা ঠিক হয়নি। ও যদি বুঝত একটা বিষয়-ফিল্ম স্টার কোনো দিন গত হয় না। চিরকাল সে একটি জায়গায় থেকে যায়। তবে এমনটি করতো না। ওর উপর আমার কোন রকম দু:খ নেই। যাই হোক এই পরিবার থেকে সিদ্বান্ত নেওয়া হল তার সঙ্গে কাজ করবে না। তার কারণ হলো আরেকটা। এটা মানুষ কিন্তু ভুল বুঝে। এতো ভুলো ভরা এখানে যে কী বলবো!’
সিনেমায় পলেটিক্স চিরকাল ছিল, থাকবে। কার সাথে কী, ওগুলোর মধ্যে ফারুক নেই বলে জানালেন তিনি। তার ভাষ্য, ‘আমি দেখিছি শাকিব-দুই তিনটা ইন্টারভিউতে বলেছে, আমার শ্রদ্বার মানুষ হলেন ফারুক স্যার। আমি মনে করি আমার পিতার তুল্য। এরপর তো আর কোন কথা থাকে না। কিন্তু দেখা গেছে এটাকে নিয়ে অনেকে আবার গেইম খেলার চেষ্টা করেছে। তবে ও কিন্তু আমার বাসায় এসেছে। আসার পর আমি মোটামুটি সবার সাথে কথা বলেছি। যে এসে স্যরি বলতে পারে! সেখানে আর কিই বা বলার থাকে। যে স্যরি বলতে পারে সে মহান। যিনি ক্ষমা করতে পারেন তিনিও মহান।’
ফারুক আরও বলেন, ‘আর এত আয়োজন করে আমি ক্ষমা করার কে? এমন কী করেছে যে ক্ষমা করতে হবে। আমরা ফিল্মের মানুষ, ভালোবাসা, প্রেম ছাড়া কিছু বুঝি না। আমরা ইমোশনাল, আমরা সেন্টিমেন্টাল এটা ঠিক। শাকিব কি কাউকে হত্যা করেছে নাকি? আর বিষয়টি নিয়ে অনেকে ক্রেডিট নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আমি দেইনি। এখানে ক্রেডিট নেওয়ার কি আছে।
আর ওকে ছোট করারও কিছু নেই। কেউ যদি শাকিবের পক্ষে কথা বলতে চায়, আমি ওর পক্ষে কথা বলব। আমি এখানে বিভাজন করতে দিব না। যতক্ষণ আমি এখানে আছি।’
যৌথ প্রযোজনার প্রসঙ্গ টেনে ফারুক বলেন, ‘জাজ মাল্টিমিডিয়ার আজিজ সাহেব ও তার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ, যা আমরা পরিবার থেকে বলে থাকি, এটা সঠিক এবং সত্য। আসল ঘটনা হল ওটা নিয়ে। যৌথ প্রযোজনা হবে না কেন? কথার কথার বলতে গেলে নিয়মিত যৌথ প্রযোজনার ছবি মুক্তি পাবে। যৌথ প্রযোজনা মানে তো সমান। সেখানে যদি একপক্ষ নিয়ে ভিনদেশের ছবি এনে আমাদের এখানে চালানো হয় এর চেয়ে দু:খের আর কী আছে। এটা নিয়েই সংগ্রাম। সেই সংগ্রামে জাজ শাকিবকে ব্যবহার করছে। আরও কয়েকজনকে। তারাও না বুঝে জাজ দ্বারা আক্রান্ত হয়েছেন। এই বিভাজন তৈরি হয়েছে।’
ফারুক আশার বানী দিয়ে বলেন, ‘সব বিভাজন শেষের পথে। এখন কী করে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকে সামনে এগিয়ে নেওয়া যায় সে সব নিয়ে ভাবতে হবে। ভাল গল্প, মেকিং, ছবিটাকে দেখানোর বন্দোবস্ত করা দরকার। ইন্ডাস্ট্রির প্রতিটা লোক যেন হাসতে পারে। আর কিছুই করার দরকার নাই।’
‘পরিচালক কিংবা টেকনিশিয়ান যারা বসে রয়েছেন তাদের বসিয়ে রাখার জন্য তো চলচ্চিত্র পরিবার তৈরি হয়নি’। কথার এক পর্যায়ে এমনটাই মন্তব্য করলেন ফারুক। তিনি বলেন, ‘পরিবার তৈরি হয়েছে, যাতে বেশি বেশি, ভাল ভাল সুন্দর ছবি হয়। সরকারের সঙ্গে কথা বলা, মেশিন আনা। এবং আমাদের প্রধানমন্ত্রী আমাদের এ বিষয়ে কথা দিয়েছেন। আমরা তার কথার গুরুত্ব দিই। আমার মূল কথা হলো। আমরা সিনেমা বানাবো। এখানে বিভাজনের কী আছে। কারও সঙ্গে কিছু নেই। শাকিব ফ্রি। নট অনলি শাকিব, সবাই। কিন্তু একসেপ্ট জাজ মাল্টিমিডিয়া।’
তবে ছবির গল্প ও মানের দিকে নজর দিয়ে আবারও হলে দর্শক ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করতে হবে বলে দাবি করেন ‘সুজন সখী’ খ্যাত চিত্রনায়ক ফারুক। তিনি বলেন, ‘হলের সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। হল মালিকদের সঙ্গে যে দুরত্ব ছিলো সেটি আমরা মিটিয়ে নিয়েছি। হল মালিকদের প্রেসিডেন্ট নওশাদ সাহেব খুবই বড় মনের মানুষ। আমরা সবাই দেখা করতে যাওয়ার পর, আমার একটি কথা শুনে তিনি সবাইকে বুকে জড়িয়ে নিলেন। এমন মানসিকতা সবার থাকে না।
এখন কথা হলো, হল মালিকরা এক হয়েছেন আমাদের সঙ্গে, হয়তো সামনে হলও বাড়বে, ডিজিটাল হলও আসবে কিন্তু সেইসব হলে চালানোর ছবি তো দরকার, নাকি? ভালো ছবি না হলে কেউ হলে যাবে না। তাই ভালো ছবি নির্মাণে মন দিতে হবে।’
এলএ