মালয়েশিয়ায় নাতনিকে নিয়ে জন্মদিনের কেক কাটলেন আবুল হায়াত
২০০৯ সালের কথা। দেশের প্রখ্যাত অভিনেতা আবুল হায়াতের ৬৫তম জন্মদিন। পরিবার-পরিজন, বন্ধু-স্বজনদের শুভেচ্ছায় সিক্ত হচ্ছেন তিনি। এমনি দিনে খবর এলো তার ছোট কন্যা নাতাশা হায়াত মা হয়েছেন। তার কোল আলো করে এসেছে নাতনি সৃশা। তারপর থেকে প্রতিবছর নাতনিকে সঙ্গে নিয়েই নিজের জন্মদিন পালন করেন এই অভিনেতা।
সময়ের চাকা ঘুরে আজ সেই ৭ সেপ্টেম্বর। নানা ও নাতনির জন্মদিন। এবারেও ব্যতিক্রম হয়নি। দুজন একসঙ্গে দুটো কেক নিয়ে বসে জন্মদিন উপদযাপনের মোমবাতি নিভিয়েছেন। তবে এবারে তারা রয়েছেন দেশের বাইরে, মালয়েশিয়াতে।
অবকাশ যাপন করতে কোরবানি ঈদের আগেই স্বপরিবারে দেশ ছেড়েছিলেন আবুল হায়াত। তার সঙ্গে আছেন স্ত্রী শিরি হায়াত, দুই কন্যা বিপাশা ও নাতাশা, দুই জামাত তৌকীর আহমেদ, শাহেদ শরীফ খান ও দুই কন্যার চার নাতি-নাতনি। সেখানে নানা মনোরম স্থান ও স্থাপনা ঘুরে বেড়িয়েছেন তারা।
উৎসবমুখর সেই আমেজ নিয়েই গতকাল রাতে আয়োজন করা হয় সৃশা ও আবুল হায়াতের জন্মদিন উদযাপন। তৌকীর আহমেদ তার নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে বেশ কিছু ছবি পোস্ট করেন। সেখানে দেখা যায় নাতনি সৃশাকে নিয়ে জন্মদিন পালন করছেন আবুল হায়াত। চারদিকে ঘিরে আছে পরিবারের সদস্যরা। আয়োজনে ছিলো মুখরোচক নানা পদের খাবারও।
দেখতে দেখতে জীবনের একাত্তরটি বছর পার করে বাহাত্তরে পা দিলেন অভিনয়ের বরেণ্য মানুষ আবুল হায়াত। দেশে না থাকলেও প্রিয় অভিনেতাকে শুভেচ্ছা জানাতে ভুলছেন না তার শুভকাঙ্খীরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তারা শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন আবুল হায়াতকে। কামনা করছেন দীর্ঘায়ু।
১৯৪৪ সালের ৭ সেপ্টেম্বর পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে জন্মগ্রহন করেন তিনি।[৩] আবুল হায়াতের বাবা আব্দুস সালাম ছিলেন চট্টগ্রাম রেলওয়ে ওয়াজিউল্লাহ ইন্সটিটিউটের সাধারন সম্পাদক। স্কুল জীবন কাটে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট ও রেলওয়ে উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখান থেকে মেটৃকুলেশন (বর্তমান এসএসসি) পাস করে চট্টগ্রাম কলেজে ভর্তি হন। চট্টগ্রাম কলেজ থেকে আইএসসি পাস করে ১৯৬২ সালে বুয়েটে ভর্তি হন। বুয়েটে পড়ার সময়ই শেরেবাংলা হলে থাকতেন। এরপর বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট থেকে ১৯৬৭ সালে পাস করে ১৯৬৮ সালেই ঢাকা ওয়াসার প্রকৌশলী পদে যোগ দেন।
১৯৬৯ সালে ইডিপাস নাটকে অভিনয়ের মধ্যদিয়ে প্রথমবারের মতো টিভি স্ক্রিনে তার অভিনয়ের অভিষেক ঘটে। তারপর থেকে টিভি নাটকে, সিনেমায় আর বিজ্ঞাপনে সফলতার সাথে অভিনয় করে আসছেন। জনপ্রিয় লেখক হুমায়ুন আহমেদ রচিত প্রচুর নাটকে তিনি অংশ নিয়েছেন। ‘মিসির আলি’ তার একটি স্মরণীয় চরিত্র। তার প্রথম নাটক ‘ইডিপাস’ ১৯৬৯ সালে বের হয়েছিল। এর পর একে একে পাঁচ শতাধিক নাটকে অভিনয় করেছেন। চলচ্চিত্রেও রেখেছেন মুগ্ধ পথচলার স্বাক্ষর।
আবুল হায়াত সাহিত্যিক হিসেবেও নাম কামিয়েছেন। তার লেখা প্রথম উপন্যাসটি বের হয় ১৯৯১ সালের বই মেলায়। উপন্যাসটির নাম ছিল ‘আপ্লুত মরু’। এরই ধারাবাহিকতায় একে একে বের হয় ‘নির্ঝর সন্নিকট’, ‘এসো নীপ বনে’ (তিন খণ্ড), ‘অচেনা তারা’, ‘জীবন খাতার ফুট নোট’, (দুই খণ্ড) ও ‘জিম্মি’।
তিনি ১৯৭০ সালে মেজ বোনের ননদ মাহফুজা খাতুন শিরিনকে বিয়ে করেন। ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর জন্ম নেয় তাদের প্রথম সন্তান বিপাশা হায়াতের। ছয় বছর পর জন্ম নেয় নাতাশা।
এলএ