‘আমার আলীরাজ নামটা দিয়েছিলেন রাজ্জাক ভাই’
নায়করাজ রাজ্জাকের মরদেহ এফডিসিতে রাখা। তাকে ঘিরে সবাই ব্যস্ত। কেউ কাঁদছেন, কেউ ফুল দিচ্ছেন। কেউ আবার সবকিছু নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছেন। চলচ্চিত্রের মানুষ, পুলিশের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও দেখা গেল জহির রায়হান প্রজেকশন হলের সামনের আঙিনায়।
তবে বেশ খানিকটা দূরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল একজনকে। একটি গাড়ির আড়ালে নিজেকে গোপন করে রেখেছেন। একদৃষ্টিতে উদাস হয়ে তাকিয়ে আছেন অগ্রজ নায়করাজের লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সের দিকে। চোখে-মুখে বিষাদের কালো ছায়া। পরনেও কালো রঙের পোশাক। তিনি আলীরাজ। ঢাকাই সিনেমার পরিচিত মুখ।
এগিয়ে যেতেই পাশ ফিরে তাকিয়ে মুচকি হাসলেন। পরিচিত মুখ দেখে নিজেই বলতে লাগলেন, ‘কী মানুষ কোথায় চলে গেল। তার অভাব কে পূরণ করবে? কেউ পারবে না!’ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে থেমে গেলেন। বাধ্য হয়েই জিজ্ঞেস করতে হলো, রাজ্জাক সাহেবের হাত ধরেই তো আপনি চলচ্চিত্রে এসেছিলেন তাই না? জবাবে স্মৃতির ঢালা সাজিয়ে দিলেন। বললেন, ‘শুধু চলচ্চিত্রেই আসিনি, তার হাত ধরে বাবা-মায়ের দেয়া নামও বদলে ফেলেছিলাম। আমার আলীরাজ নামটি তিনিই দিয়েছিলেন।’
আলীরাজ বলেন, ‘আশির দশকের শুরুতে রাজ্জাক ভাইয়ের সঙ্গে পরিচয়। আমি তখন ঢাকা থিয়েটারের কর্মী। টিভিতেও কাজ করতে শুরু করেছি। একদিন কথায় কথায় বললেন চলচ্চিত্রে কাজ করতে। বললাম সেই সুযোগ আমাকে কে দেবে? বললেন, আমি দেব। আমার হাত ধরে অনেক মেয়েই নায়িকা হয়েছে। তবে একজন নায়ক আমি বানাতে চাই। তারপর একদিন ডেকে বললেন, তিনি সিনেমা পরিচালনা করছেন। আমিও সেখানে তার ছোট ভাইয়ের চরিত্রে কাজ করব।
ছবির নাম ‘সৎভাই’। ১৯৮৩ সালে ছবিটির শুটিং শুরু হয়েছিল। এটি মুক্তি পায় ১৯৮৪ সালে। কী দারুণ ব্যবসাসফল ছিল সেই ছবি। লোকে আমার নামের শেষে ‘রাজ’ দেখে ভেবেছিল আমি বুঝি সত্যি নায়করাজের ভাই। অনেকে আমাকে সেই প্রশ্ন করেছে। আমিও নীরব থেকে হেসে মজা নিয়েছি।’
এই অভিনেতা আরও বলেন, ‘রাজ্জাক ভাই আমার কাছে মায়ের পেটের বড় ভাইয়ের মতোই ছিলেন। তার সঙ্গে পারিবারিক সম্পর্ক ছিল আজীবন। তিনি আমার জন্য অনেক কিছুই করেছেন। আমি অভাগা কোনো সুযোগ পাইনি তার জন্য কিছু করার। অবশ্য তিনি তো রাজা, তার জন্য আমি কীইবা করতে পারি। তাই চিরকাল তার ছায়াটাকে মাথায় নিয়েছি, তাকে সম্মান করেছি।‘
আলীরাজ নতুন প্রজন্মের রাজ্জাক সেরা অনুপ্রেরণা দাবি করে বলেন, ‘একজন মানুষ শূন্য থেকে কীভাবে হীরোতে পরিণত হয়ে দেশ কাঁপিয়ে দিতে পারেন তার প্রমাণ আমার বড় ভাই। তিনি এই এফডিসিকে সম্মান করতেন, বিশ্বাস করতেন একদিন অনেক বড় হবেন। আল্লাহ তাকে অনেক বড় করেছেন। হয়তো তার ভাবনার চেয়েও বড়। তার অভাব চিরকাল বোধ করবে এই দেশের চলচ্চিত্র। তিনি আমাদের জনকের মতো। অক্লান্ত পরিশ্রমে তিনি এই ইন্ডাস্ট্রিটাকে আজকের অবস্থানে নিয়ে এসেছেন।
এত বড় জানাজা এফডিসিতে দেখেছি বলে মনে পড়ে না। সাধারণত রানিং কোনো নায়ক মারা গেলে প্রচুর জনসমাগম হয়। যেটি হয়েছিল সালমান শাহ ও মান্নার বেলায়। কিন্তু রাজ্জাক ভাইকে মানুষ এতটাই সম্মান করে যে এভাবে ঢল নেমেছে মানুষের। সবাই দোয়া করবেন আল্লাহ যেন রাজ্জাক ভাইকে বেহেশত দান করেন।’
এলএ