সবাই এক হয়েই ঢাকার চলচ্চিত্রে সুদিন ফেরাব : রিয়াজ
নানা মত পার্থক্যে বিভাজনের মুখে পড়েছে ঢাকাই চলচ্চিত্র শিল্প। বিশেষ করে যৌথ প্রযোজনা নিয়ম না মেনে হওয়া ছবির মুক্তিকে কেন্দ্র করে গেল রোজায় ঘটে গেল অনেক কিছু।
সেই ঘটে যাওয়ার একটি পক্ষে ছিল চলচ্চিত্র পরিচালক, শিল্পী সমিতিসহ ১৮টি সংগঠনের সমন্বয়ে হওয়া চলচ্চিত্র পরিবার। অন্য একটি পক্ষে ছিল হল মালিক ও বুকিং এজেন্টরা। তাদের সমর্থনে ছিলো জাজ মাল্টিমিডিয়াসহ ওই প্রতিষ্ঠান ঘরানার বেশ ক'জন নির্মাতা, শিল্পী ও কলাকুশলী।
দ্বিতীয় পক্ষের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমে যৌথ প্রতারণার ছবি মুক্তি বন্ধ করা, হল পলিটিক্সের হাত থেকে ইন্ডাস্ট্রিকে রক্ষা করাসহ নানা ইস্যুতে আন্দোলনের ডাক দেয় চলচ্চিত্র পরিবার।
সেই আন্দোলনের কর্মসূচি অনুযায়ী সেন্সর বোর্ড ঘেরাও করে চলচ্চিত্র জোটের নেতাকর্মীরা। সেদিন হল মালিক সমিতির সভাপতি ও সেন্সর বোর্ডের সদস্য নওশাদকে কেন্দ্র করে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। যার জের ধরে হল মালিকরা ঘোষণা দেয় রিয়াজ, মিশা সওদাগর ও প্রযোজক খোরশেদ আলম খসরুর কোনো ছবি দেশের হলে প্রদর্শিত হবে না। পরে সেই বয়কটের তালিকায় পরিচালক নেতা মুশফিকুর রহমান গুলজার, বদিউল আলম খোকন ও শিল্পীদের নেতা জায়েদ খানের নাম শোনা যায়। এতে চলচ্চিত্রের মানুষদের মধ্যে ভেদাভেদের মাত্রা তীব্র হয়।
তবে স্বস্তির খবর হলো, সব ঝামেলা চুকিয়ে অতীতকে পেছনে রেখে আবারও এক ছায়াতলে এসে দাঁড়িয়েছে চলচ্চিত্র পরিবার ও হল মালিক, বুকিং এজেন্ট সমিতি। জাগো নিউজকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন শিল্পী সমিতির সহসভাপতি চিত্রনায়ক রিয়াজ।
আজ রাত ৯টার পর থেকেই ফেসবুকে চলচ্চিত্র শিল্পী নেতা জায়েদ খান কিছু ছবি পোস্ট করেন। তারপর সেই ছবিগুলো শেয়ার করতে দেখা গেছে চলচ্চিত্র তারকা ও সংশ্লিষ্টদের। সেইসব ছবিতে চলচ্চিত্র পরিবারের নেতাদের সঙ্গে হাসিমুখে দেখা গেছে হল মালিক ও বুকিং এজেন্ট সমিতির নেতাদের। সবাই ছবিগুলো পোস্ট করে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন সব বিভাজন ভুলে সবাই এক হওয়াতে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রিয়াজ জাগো নিউজকে বলেন, 'দিনশেষে আমরা একই চলচ্চিত্র পরিবারের মানুষ। ভুল বোঝাবুঝির অবসান হয়েছে। আবারও আমরা সবাই মিলেমিশে ইন্ডাস্ট্রিকে সামনে এগিয়ে নিতে চেষ্টা করব। আজ হল মালিক ও বুকিং এজেন্ট সমিতির নেতাদের সঙ্গে চলচ্চিত্র পরিবারের মিটিং হয়েছে। সেখানে আমরা সবাই মিলেমিশে কাজ করার প্রতিজ্ঞা করেছি।'
হল মালিকরা যে ছয়জনকে বয়কটের ডাক দিয়েছিলো সেটি কী তবে ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে? এমন প্রশ্নের জবাবে রিয়াজ বলেন, 'এগুলো নিয়ে আর কথা বলতে চাই না সবকিছুর জন্য আমরা সবাই বিব্রত। এইসব ঘোষণা ধীরে ধীরে এমনিতেই সরে যাবে। আনুষ্ঠানিকতার দরকার নেই। আমরা সবাই যে উপলব্দি করেছি, আমাদের একটাই পরিবার সেটাই আনন্দের কথা।'
তিনি আরও বলেন, 'খুব শিগগিরই আরও অনেক সুখবর আসবে চলচ্চিত্র পরিবারের হাত ধরে। সুদিন ফিরছে চলচ্চত্রের। যারা ইন্ডাস্ট্রিটাকে ধ্বংস করতে দালালি করছে, পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ছে, তাদের দিন ফুরিয়ে এসেছে। তারা সাবধান হোক। দেশ ও দেশের চলচ্চিত্রকে যারা অন্তরে লালন করবেন না তারা যতোই ক্ষমতাশালী হোক না কেন, তাদের বাড়তে দেয়া হবে না। চলচ্চিত্রের দুঃসময় কাটিয়ে উঠতে আমরা সবাই এক হয়েছি। একতার শক্তি অনেক।'
চিত্রনায়ক রিয়াজ চলচ্চিত্রের দুর্দিনে সাহসী ভূমিকা নিয়ে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য বরেণ্য অভিনেতা ফারুককে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, 'ফারুক সাহেব আমাদের যোগ্য অভিভাবক। অনেকেই কিংবদন্তী হোন। কিন্তু এভাবে শক্ত হাতে সবকিছুর মোকাবেলা করতে পারেন না। তিনি আমাদের সামনে দৃষ্টান্ত তৈরি করেছেন একতার, ধৈর্যের, সততার। আমরা সবাই তাকে সম্মান করি। এর আগেও তিনি চলচ্চিত্রের নানা সংকটে সরাসরি নেতৃত্ব দিয়েছেন। তার হাত ধরেই একসময় চলচ্চিত্র পরিবেশক সমিতি গড়ে উঠেছিল। তিনি আমাদের চলচ্চিত্রের সত্যিকারের নায়ক।'
এছাড়াও রিয়াজ শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর, সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান, পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার, মহাসচিব বদিউল আলম খোকন, প্রযোজক নেতা খোরশেদ আলম খসরু, নৃত্য পরিচালক সমিতির সভাপতি মাসুম বাবুলসহ চলচ্চিত্র পরিবারের সব নেতা কর্মীকে ধন্যবাদ জানান একতা নিয়ে চলচ্চিত্র পরিবারকে শক্তিশালী করায়।
রিয়াজ আশা ব্যক্ত করেন, খুব শিগগিরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতায় আরও অনেক সুখবর আসবে ঢাকাই ছবিতে। প্রযোজকদের লগ্নি করা টাকা ফেরত পাওয়ার নিশ্চয়তার পরিবেশ তৈরি হবে। দর্শকরা বিনোদিত হবার মতো সিনেমা ও সিনেমা হলের পরিবেশ পাবেন। যারা হতাশ হয়ে বলেছিল কিছুই হবে না আন্দোলনে তারাও ফিরে আসবে দ্রুতই। সবাইকে নিয়ে জমে উঠবে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র।
এলএ/জেএইচ