সালমানের মৃত্যু নিয়ে হঠাৎ মুখ খোলার কারণ জানালেন রুবি
রাবেয়া সুলতানা রুবি নামের এক আমেরিকা প্রবাসী বাংলাদেশি সোমবার (৭ আগস্ট) একটি ভিডিও বার্তায় বলেছেন, সালমান শাহ আত্মহত্যা করেনি, তাকে খুন করা হয়েছে। এর পেছনে সালমান শাহ’র স্ত্রী সামিরাও জড়িত।
এই নিয়ে তোলপাড় চলছে সারা দেশে। ভিডিও বার্তায় সালমানের মৃত্যুর নতুন রহস্যের দুয়ার খুলে দিলেন রুবি। পাশাপাশি হচ্ছে সমালোচনাও। অনেকেই রুবির হঠাৎ মুখ খোলায় এর পেছনে তার কোনো ব্যক্তি উদ্দেশ্য আছে কী না সে নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। কেননা, সালমানের মৃত্যুর পর থেকেই তার খুনের সঙ্গে জড়িত উল্লেখ করে যে মামলাটি করেছিলো সালমানের পরিবার, সেখানে ৭ নম্বর আসামি ছিলেন রুবিও।
আর রুবি নানা সময় এই মামলা নিয়ে সমালোচনা করে ভিডিও প্রকাশ করেছেন। তার দাবি ছিলো, সালমান আত্মহত্যাই করেছেন। তাকে মামলায় জড়ানোর জন্য একসময়ের বান্ধবী সালমানের মা নীলা চৌধুরীর সমালোচনা করে নানা কটাক্ষমূলক বক্তব্য দিয়েছেন ফেসবুকে। গেল তিন মাস আগেও তিনি একটি ভিডিও প্রকাশ করে নীলা চৌধুরী ও সালমান শাহকে নিয়ে অনেক বাজে কথা বলেছেন। তবে হঠাৎ কী এমন হলো যে সেই রুবিই ভিডিও বার্তায় জানালেন, সালমানকে খুন করা হয়েছিলো এবং সেই খুনের সঙ্গে জড়িত তারই চাইনিজ স্বামী, সালমানের স্ত্রীর সামিরা ও তার পরিবার?
উত্তর পাওয়া গেলে আজ মঙ্গলবার দুপুরে। জাগো নিউজ থেকে যোগাযোগ করা হয় রুবির সঙ্গে। এসময় আমেরিকার নিইউয়র্কের একটি হোটেলে ছিলেন তিনি। সেখান থেকে ভিডিও কলে অংশ নেন জাগো নিউজের প্রতিবেদকের সঙ্গে। হঠাৎ মুখ খোলার কারণ প্রসঙ্গে তিনি জানান, ‘হঠাৎ মুখ খুলেছি কারণ আমিও হঠাৎ করেই জানতে পেরেছি যে সালমানকে খুন করা হয়েছিলো। এতদিন জেনে আসছি ও আত্মহত্যা করেছে। অকারণে আমার নামে খুনের মামলা দেয়ায় আমি নীলা ভাবির (সালমানের মা) উপর বিরক্ত ছিলাম। কিন্তু গেল মাসে আমি আমার বড় পুত্র ভিকির কাছ থেকে কিছু তথ্য পেয়ে সেই সূত্রে অনেক কিছু জেনে নিজেই অবাক হয়ে গেছি। কেননা, আমি কোনোদিন ভাবিওনি সালমান খুন হয়েছে আর তার খুনের সঙ্গে আমার স্বামী ও ভাই জড়িত। এবং সামিরা ও তার পরিবার সেখানে জড়িত।’
তিনি বলেন, ‘সব তথ্য শুনে আমার মনে হয়েছে এই বিষয়টি গোপন রাখা ঠিক হবে না। সালমান ও তার পরিবারের সঙ্গে অনেক বড় অন্যায় হয়েছে। এর শোধ নেয়া দরকার। তাই ভিডিও বার্তায় বিষয়টি জানিয়েছি। আমি ভালো লিখতে পারি না। কিন্তু ভিডিও প্রকাশ করতে খুব ভালো লাগে আমার। তাই ফেসবুকে স্ট্যাটাস না দিয়ে ভিডিও প্রকাশ করেছি। আমি জানতাম না সালমান এতোটা জনপ্রিয় ছিলো বাংলাদেশের মানুষের কাছে। এবং বিশ বছর পরও মানুষ তাকে এভাবে মনে রেখেছে। খুবই অবাক হয়েছি। আফসোস হচ্ছে, এমন একটা জনপ্রিয় নায়ককে এভাবে অকালে সরিয়ে দেয়া হলো।’
কী তথ্য পেয়েছেন ছেলের কাছ থেকে? সেই প্রশ্নের জবাবে রুবি জাগো নিউজকে বলেন, ‘বেশ কয়েকমাস আগে ভিকি আমাকে হঠাৎ বললো, মা তোমার সঙ্গে আমার জরুরি একটা গোপন কথা আছে। একদিন তোমাকে বলবো। তারপর সেই প্রসঙ্গটি ভুলে যাই আমি ও আমার ছেলে। ভিকি টরেন্টোতে থাকে। গেল মাসে আমি ওর ওখানে বেড়াতে যাই। তখন প্রসঙ্গটি আবার উঠে।
সে আমাকে জানায় যেদিন সালমান শাহ মারা গেল সেদিন একটা কাপড়ের পুটলি ভিকিকে দিয়েছিলো সামিরা। বলেছিলো গোপনে কোথাও ফেলে দিয়ে আসার জন্য। কী ছিলো সেই পুটলিতে তা আর ভিকি খুলে দেখেনি। পরে যখন জানতে পারে সালমানের মৃত্যু নিয়ে রহস্য তখন তার মনে সন্দেহ তৈরি হয়। কিন্তু এই বিষয়টা সে কারো সঙ্গে শেয়ার করেনি। তার মুখে এই কথাটা শুনে আমারও অনেক সন্দেহ হয়। ধীরে ধীরে এই বিষয়টা নিয়ে আমি আমার স্বামীর সঙ্গে কথা বলি। সে আবার সামিরার মামা।
এই তথ্য জানতে চেয়ে আমার স্বামীর সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। আমি অনেক কিছুই জানতে পারি। আমার ছোট ভাইও খুনের সঙ্গে জড়িত ছিলো। সবকিছুই এবার প্রকাশ্যে আনতে চাইছি। আমার উপর নীলা ভাবি ও মানুষজনের অকারণ রোষানল আমি কেন সইবো।’
রুবি জাগো নিউজের সঙ্গে ভিডিও কলে আরও জানান, ‘সালমান খুনের সঙ্গে আরও অনেকেই জড়িত আছেন। এখনো এই খুনের রহস্য উদ্ধার করা সম্ভব। সালমান খুনের এসব তথ্য জানার পর আমার একটি কথা বারবার মনে পড়ছে। সালমান একবার আমার বিউটি পার্লারে এসেছিলো। তখন সে কথায় কথায় বিরক্তি নিয়ে বলেছিলো- ‘রুবি আন্টি, আমি কখনো কুকুর পাললে তার নাম দেবো ডন।’
এই ডন অভিনেতা ডন কী না জানতে চাইলে রুবি বলেন, ‘এই ডন কোন ডন তা আমি জানি না। তবে অভিনেতা ডন নন বলেই মনে হয়। কারণ অভিনেতা ডনের সঙ্গে তার ভালো বন্ধুত্ব ছিলো বলে শুনেছিলাম। হয়তো অন্য কোনো ডনকে সে ইঙ্গিত করেছে। তার কথার প্রেক্ষিতে আমি বুঝতে পেরেছিলাম কোনো এক ডনের উপর সে ক্ষুব্দ।’
অবান্তর তথ্য দিয়ে ভিডিও প্রকাশ করায় সালমান শাহের শ্বশুর শফিকুল হক হীরা তাকে পাগল দাবি করেছেন গণমাধ্যমে। এই বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘হীরা ভাই নিজে হয়তো পাগল হতে পারেন আমি নই। আমি তো প্রমাণ দিয়েছি যে আমি পাগল নই। আমেরিকাবাসীরা পাগলকে হোটেল ভাড়া দেয় না। আর উনি কেমন করে এই কথা বলেন যে আমার ডিভোর্স হয়েছে? উনার পরিবারের সঙ্গে তো আমার কোনো যোগাযোগই নেই।
উনার মেয়ে সামিরার সঙ্গে কয়েক মাস আগে ফেসবুকে আলাপ হয়েছিলো। সামিরা ওর স্বামীর নামে আইডি দিয়ে যোগাযোগ করেছিলো। তবে উনি কেমন করে জানলেন আমার ডিভোর্সের খবর। তার মতো সম্মানী লোক মিথ্যাচার করে বেড়াচ্ছেন, মানা যায় না।’
রুবি ক্ষোভ প্রকাশ হয়ে আরও বলেন, ‘সামিরার বাবা হীরা ভাই বা অন্যরা কেন এই প্রশ্ন করছেন যে আমি সবসময় সালমানের আত্মহত্যা দাবি করে হঠাৎ সেটাকে খুন দাবি করে পাগলামি করছি। আমার এতদিন মনে হয়েছে আমার ডানপাশে চলাটাই সঠিক। কিন্তু আমি হঠাৎ জানতে পারলাম, ডানপাশটা ভুল। আমার বামপাশে যা, তাই চিরসত্যি। সেটা স্বীকার করে নেয়া কী অন্যায়?’
তিনি বলেন, ‘আপাতত এটুকুই আমি বলবো। বাকি যা বলার আইনের কাছে স্বীকারোক্তি দেব।’ রুবি জানান, তার সঙ্গে বাংলাদেশ পুলিশের যোগাযোগ হয়েছে। শিগগিরই আমেরিকায় গিয়ে পুলিশ তার সঙ্গে দেখা করবে। তার জবানবন্দি নেবে। তারপর যদি বাংলাদেশের আইন মনে করে সালমানের খুনিদের শাস্তি দেয়া উচিত তবে তারা দেবে।
রুবি থাকেন পেনসিলভেনিয়াতে। তিনি নিইউয়র্কে এসেছিলেন একটি কাজে। আজই ফিরে যাচ্ছেন নিজের বাসায়। তবে নিজের নিরাপত্তার জন্য তিনি স্থানীয় পুলিশের সঙ্গে আলাপ করে রেখেছেন।
সালমান শাহের মা নীলা চৌধুরীর সঙ্গেও তার কথা হয়েছে বলে জানান তিনি। ফেসবুক থেকে ফোন নাম্বার নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলেন নীলা। তাদের খুব শিগগিরই দেখা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
এলএ