পরিচালক সমিতি থেকে সরে দাঁড়ালেন কাজী হায়াৎ
ঢাকাই ছবির জনপ্রিয় নির্মাতা কাজী হায়াৎ। তিনি চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সদস্যও। তবে নিজে তার সদস্যপদ প্রত্যাহার করে নিলেন।
আজ বৃহস্পতিবার (৩ আগস্ট) নিজে এফডিসিতে লিখিতভাবে সদস্যপদ প্রত্যাহার করে নেয়ার আবেদন করেন। তার আবেদনটি গ্রহণ করেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির মো. সালাহউদ্দিন।
তার আবেদনের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে জানতে চাইলে সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার বলেন, ‘আমরা তার আবেদন পেয়েছি। আমাদের পরবর্তী সভায় এ বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত জানানো হবে। কাজী হায়াৎ একজন সিনিয়র পরিচালক। দীর্ঘদিন তিনি আমাদের সমিতির সদস্য। তার সদস্যপদ প্রত্যাহারের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে ভেবে দেখা হবে। তিনি যে অভিযোগ এনে নিজেকে সরিয়ে নিচ্ছেন সেটিও খতিয়ে দেখা হবে।’
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জয়ী নির্মাতা কাজী হায়াৎ পরিচালক সমিতির সভাপতি ও মহাসচিব বরাবর লিখিত আবেদনে উল্লেখ করেন, ‘তিনি দীর্ঘদিন ছবি করছেন না। নতুন করে ছবি নির্মাণের ইচ্ছাও ছিল না। প্রিয় একজন প্রযোজকের চাপে তিনি একটি নতুন ছবি বানাতে চাইছিলেন। পরিচালক সমিতির নিয়ম অনুযায়ী নতুন ছবির নাম নিবন্ধনের জন্য আবেদনও করেছিলেন। কিন্তু সমিতি তার ছবির নাম নিবন্ধনের ব্যাপারে টালবাহানা করেছে। এ বিষয়টি তাকে লজ্জিত ও ব্যথিত করেছে। বাধ্য হয়ে তিনি এ সমিতি থেকে সরে দাঁড়ালেন।’
তবে চলচ্চিত্রপাড়া ঘুরে জানা গেল, যৌথ প্রযোজনার নিয়ম না মেনে ও হল দখলের রাজনীতির বিরুদ্ধে চলচ্চিত্র পরিবারের যে আন্দোলন তার সঙ্গে একাত্ম নন কাজী হায়াৎ। তিনি বরং আন্দোলনের বিপক্ষ শক্তির হয়ে বিভিন্ন সময় নানা রকম মন্তব্য করেছেন, যা চলচ্চিত্র পরিবারকে ক্ষুব্ধ করেছে।
পাশাপাশি কাজী হায়াৎ আন্দোলনকে ঘিরে বিতর্কের মুখে থাকা জাজ মাল্টিমিডিয়ার প্রযোজনায় একটি ছবি পরিচালনা করতে যাচ্ছেন শিগগিরই। বিষয়টি সহজভাবে নেয়নি চলচ্চিত্র পরিবার ও এই জোটের সঙ্গে থাকা চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি।
সবকিছুকে কেন্দ্র করে চলচ্চিত্র পরিবারের কাছে সমালোচনার পাত্রে পরিণত হয়েছেন কাজী হায়াৎ। নিজেকে পরিচালক সমিতি থেকে সরিয়ে নিয়ে সেই সমালোচনাতেই নতুন করে ঘি ঢাললেন ৪৯টি ছবির এই নির্মাতা।
প্রসঙ্গত, কাজী হায়াৎ বাংলাদেশের একজন খ্যাতিমান চলচ্চিত্র পরিচালক, চিত্রনাট্যকার এবং অভিনেতা। তিনি ১৯৭৪ সালে পরিচালক মমতাজ আলীর সাথে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেন। এবং ১৯৭৬-১৯৭৭ মৌসুমে বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার আলমগীর কবিরের সাথে ‘সীমানা পেরিয়ে’ ছবিতেও সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন।
১৯৭৯ সালে ‘দি ফাদার’ ছবিটি পরিচালনার মধ্যে দিয়ে পূর্ণ-পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। তিনি তার বেশিরভাগ ছবিতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সমসাময়িক জনদুর্ভোগের চিত্র ফুটিয়ে তোলেন।
কাজী হায়াৎ অর্ধশতাধিক চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছেন। তার পরিচালিত অন্যতম চলচ্চিত্রসমূহ হল দাঙ্গা (১৯৯২), ত্রাস (১৯৯২), চাঁদাবাজ (১৯৯৩), সিপাহী (১৯৯৪), দেশপ্রেমিক (১৯৯৪), লাভ স্টোরি: প্রেমের গল্প (১৯৯৫), আম্মাজান (১৯৯৯), ইতিহাস (২০০২), কাবুলিওয়ালা (২০০৬) এবং ওরা আমাকে ভাল হতে দিল না (২০১০)।
চলচ্চিত্রের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে এখন পর্যন্ত চিত্রনাট্যকার, কাহিনিকার ও পরিচালক হিসেবে তিনি মোট আটটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জয় করেছেন।
এলএ