কলকাতার সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতেও নানামুখী সংকট
ঢাকাই চলচ্চিত্রাঙ্গনে গেল কয়েকমাস ধরে বইছে মন্দা হাওয়া। নানামুখী ভোগান্তিতে বেড়েছে বিবাদ-বিতর্ক। সেইসঙ্গে বেড়েছে সম্ভাবনাও। কেউ কেউ বলছেন- সবকিছুকে পেছনে রেখে খুব শিগগিরই অতিমুনাফাভোগীদের সিন্ডিকেট ভেঙ্গে, হল দখলে ও সিনেমা দখলে একক সাম্রাজ্যের পতন ঘটিয়ে একটি সুন্দর শিল্পের দিকে ধাবিত হবে ঢাকার ইন্ডাস্ট্রি।
অভিমানে দূরে সরে যাওয়া সিনিয়র অভিনয় শিল্পীরাও ফিরে আসছেন চলচ্চিত্রের ক্রান্তিলগ্নে। অনেক পুরনো প্রযোজকরা সাহস পাচ্ছেন লগ্নি করার। মন্দ সময়টাকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ইতিবাচক পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখছেন সবাই। কিন্তু ঠিক এসময়টাতেই নতুন করে অস্থিরতার খবর শোনা যাচ্ছে পাশের দেশ ভারতের অঙ্গরাজ্য কলকাতার সিনেমাপাড়াতে। প্রযোজকদের বিপক্ষে টেকনিশিয়ান-কলাকুশলীদের ঝামেলা নিয়ে সম্প্রতি বেশ উত্তাল হয়ে উঠেছে টালিগঞ্জ। এই যুদ্ধের পক্ষে বিপক্ষে অবস্থান নিচ্ছেন অনেক তারকা শিল্পীরা।
ঘটনার সূত্রপাত অনেকদিনের। টেকনিশিয়ানদের অনেক অভিযোগ ছিলো কলকাতার বিতর্কিত প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান এসকে মুভিজের বিরুদ্ধে। অনেকবারই মতবিরোধ হয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি লন্ডনে এসকে মুভিজের ‘চালবাজ’ সিনেমার শুটিং বন্ধের পর নতুন মোড় নিয়েছে। এসকে মুভিজের পক্ষ নিয়েছেন তারকা অভিনেতা দেবসহ আরও বেশ ক’জন প্রভাবশালী প্রযোজক।
শুধু তাই নয়, এসকে মুভিজের পাশে দাঁড়ালো প্রযোজক-পরিবেশকদের সংগঠন ইমপা (ইস্টার্ন ইন্ডিয়া মোশন পিকচার অ্যাসোসিয়েশন)। শাসক দলের ঘনিষ্ঠদের নিয়ন্ত্রণাধীন, টালিগঞ্জের কলাকুশলীদের সংগঠন ‘ফেডারেশন অব সিনে টেকনিশিয়ান্স অ্যান্ড ওয়র্কার্স অব ইস্টার্ন ইন্ডিয়া’র বিরুদ্ধে কার্যত যুদ্ধের ডাক দিয়েছে এই সংগঠন।
ইমপা’র প্রযোজক শাখার চেয়ারম্যান কৃষ্ণনারায়ণ দাগা চাইছেন প্রশাসনের শীর্ষ স্তর বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করুক। শনিবার (১৫ জুলাই) সাংবাদিক সম্মেলনে আগামী ২৫ জুলাই এক দিনের প্রতীকী ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন তিনি। দাবি না-মিটলে তারা ফেডারেশনকে অস্বীকার করবে বলে জানিয়ে দিয়েছে।
সম্প্রতি ফেডারেশনের চাহিদামতো ১৯ জন কলাকুশলীকে ব্রিটেনে নিয়ে যাওয়া হয়নি অভিযোগ তুলে সেখানে ‘এসকে মুভিজ’ সংস্থার শুটিং বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। পরে ওই ফিল্ম নির্মাতা সংস্থাটিকে কলকাতায় প্রবেশ করতে দেয়া হবে না বলে ঘোষণা করে দেয় ফেডারেশন।
বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে ফেডারেশনের তুঘলকি ফতোয়ায় প্রযোজক-পরিচালকদের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে বলে অভিযোগ। ‘শঙ্খচিল’ ছবিটির শুটিংয়ে দরকার না-থাকলেও বাধ্য হয়ে বাংলাদেশে ট্রলি ঠেলার লোক নিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন বলে এদিন অভিযোগ তুলেছেন ছবিটির কার্যনির্বাহী প্রযোজক শ্যামল দত্ত। ফেডারেশনের পছন্দমতো কলাকুশলী না নিয়ে যাওয়ায় মুম্বাইয়ের ‘ইরোজ ফিল্মস’ প্রয়োজিত একটি বাংলা ছবির রাজস্থানে গানের শুটিং বাতিল করা হয় বলেও অভিযোগ।
ইমপা’র দাবি, এখনই এসকে মুভিজের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে হবে ও কলাকুশলীদের সংখ্যা নিয়ে নাক গলানো বন্ধ করতে হবে। কলাকুশলী নিয়োগ নিয়ে ফেডারেশন-ইমপা চুক্তির মেয়াদ দু’বছর আগে শেষ হয়েছে। তা রিনিউ করতে চান না বলেও কৃষ্ণ দাগা জানান।
টালিগঞ্জে পরিচালকদের গিল্ডের নেতা অশোক বিশ্বনাথন বা ইমপা ও ফেডারেশনের যৌথ কমিটির সদস্য ঋতব্রত ভট্টাচার্যরাও এদিন ফেডারেশনের ভূমিকার নিন্দা করেছেন।
অন্যদিকে ফেডারেশন তার কথায় অনড়। তাদের দাবি, যাদের জন্য একটি চলচ্চিত্র পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে তাদেরকে অবহেলা করা চলবে না। তাদের সর্বোচ্চ সুবিধা দিতে হবে। আর ফেডারেশন তার পরিবারের লোকদের অধিকার ও পাওনা আদায়ের ব্যাপারে সবসময় সচেতন।
এই সংকট নিয়ে অবশ্য সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, রঞ্জিত মল্লিক, অপর্ণা, ঋতুপর্ণা, প্রসেনজিতদের মতো সিনিয়রা এখনো মুখ খুলেননি। তবে টালিগঞ্জের মানুষজনদের প্রত্যাশা দ্রুতই সংকট কাটিয়ে উঠবে ইন্ডাস্ট্রি।
একদিকে দিনের পর দিন ফ্লপ হচ্ছে বাণিজ্যিক ঘরানার ছবিগুলো। নকলের দায়ে বাণিজ্যিক ঘরানার ছবিগুলো থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন দর্শক। কিছু শিল্পভিত্তিক ছবি বছরে হিট করছে। কিন্ত ইন্ডাস্ট্রির বিশাল অংশ বাণিজ্যিক ধারা। এই ধারার পতনে ইন্ডাস্ট্রি ক্ষতির মুখে তলিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকেই।
এলএ