ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিনোদন

টিভি দর্শকের ঈদ জমেছে ইউটিউবে

প্রকাশিত: ১১:২৪ এএম, ০৩ জুলাই ২০১৭

ঈদ বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে টেলিভিশন। তাই ঈদকে কেন্দ্র করে দেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলো সাজায় ভিন্ন স্বাদের নানা ঈদ অনুষ্ঠানের পসরা। কিন্তু ঈদ আয়োজনে নানা বর্ণিল অনুষ্ঠান সাজিয়েও বিভিন্ন  কারণে দর্শক ও জনপ্রিয়তা ঠিক তেমনভাবে পাচ্ছে না টেলিভিশন চ্যানেলগুলো। বিজ্ঞাপন বিড়ম্বনা, অনুষ্ঠান ও নাটক-টেলিছবির মানহীনতায় বিরক্ত দর্শক এখন ঝুঁকছেন ইউটিউবে। সেখানেই খুঁজে নিচ্ছেন আলোচিত বা বিনোদনের প্রিয় অনুষঙ্গ।

সে চাহিদা অনুযায়ী টেলিভিশন চ্যানেলগুলোও এখন ইউটিউবকে প্রাধান্য দিচ্ছে। প্রায় প্রতিটি চ্যানেলেরই নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেল রয়েছে। টিভিতে প্রচারের পর সেগুলোতে আপলোড হচ্ছে নাটক-টেলিছবি বা অনুষ্ঠান। গত এক বছর ধরেই এটা নিয়মিতভাবেই হচ্ছে।

সেই ধারাবাহিকতায় গেল ঈদে প্রচার হওয়া নাটক বা ঈদ অনুষ্ঠান প্রচারের পরপরই তা এখন আপলোড করা হচ্ছে টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলে। শুধু তাই নয়, অনেক নির্মাতা প্রতিষ্ঠান-প্রযোজকদেরও রয়েছে নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেল। সেখানেও আপলোড করা হচ্ছে নিজস্ব অনুষ্ঠান বা নির্মাণ। আর পরিচালক ও অভিনেতা-অভিনেত্রীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করছেন নিজেদের কাজের ইউটিউব লিংক। ইউটিউবে এসব ঈদ অনুষ্ঠানের জনপ্রিয়তা নজর কাড়ার মতো। অনেকেই বলছেন, টিভির দর্শক এখন ইউটিউবনির্ভর!

চলতি ঈদে প্রচার হওয়া অনুষ্ঠানগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ টেলিভিশনে ঈদের পরদিন রাতে প্রচারিত হয় দর্শক নন্দিত ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’। অনুষ্ঠান প্রচারের পর ২৭ জুন ফাল্গুন অডিও ভিশনের ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড করা হয় অনুষ্ঠানটি। ইউটিউবে আপলোডের ছয় দিনে ‘ইত্যাদি’ দেখা হয়েছে ২৩ লাখেরও বেশিবার, যা বাংলাদেশের কোনো ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে এর আগে দেখা হয়নি। আর এবারের ঈদে এখন পর্যন্ত এটাই সর্বাধিক ভিউ হওয়া অনুষ্ঠান।

এই প্রতিবেদন লেখা সময় ইউটিউব অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, ঈদে প্রচারিত বহু  নাটক ও টেলিফিল্মও লক্ষাধিকবার দেখা হয়েছে ইতোমধ্যে। তার মধ্যে পিআর প্রডাকশনের ব্যানারে নির্মিত ইমরাউল রাফাত পরিচালিত নাটক ‌‘র‌্যাগিং’ দেখা হয়েছে ৪ লাখ ৬৫ হাজারেরও বেশিবার। একই প্রডাকশনের ‌‘বাহার বাবুর্চি’, ‘চিকন পিনের চার্জার’, ‘ফুল ফুটানোর খেলা’, ‘আবারও তোরা সাহেব হ’ ইত্যাদি নাটকগুলো ইউটিউবে দর্শকপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে।

তবে এবারের ঈদে আলাদা করে আলোচনায় এসেছে পিআর প্রডাকশনের নাটক ‘বিকেল বেলার পাখি’। আদনান আল রাজীবের পরিচালনায় ‘ছবিয়াল রিইউনিয়ন’র নাটক ছিল এটি। এই নাটকে ফজলুর রহমান বাবু, অ্যালেন শুভ্র’র অভিনয়ে মধ্যবিত্তের চমৎকার এক গল্প উপস্থাপিত হয়েছে। নাটকটি টিভিতে প্রচারের সময়ই বেশ আলোচিত ছিল। ইউটিউবে প্রায় দশটি চ্যানেলে আপলোড হয়েছে নাটকটি। তবে নাটকটির নিজস্ব কর্তৃপক্ষের চ্যানেলে এটি দেখেছেন প্রায় দুই লাখ দর্শক।

এছাড়া ‘ঘাওড়া মজিদ এখন শ্বশুরবাড়ি’, ‘সোনার বরণি কন্যা’, ‘মাখন মিয়ার অদ্ভুত বউটা’, ‘ভাইয়ের চরিত্র ফুলের মতো পবিত্র’, ‘নবাবের নয়া বউ’, ‘অ্যাওয়ার্ড নাইট’ ইত্যাদি নাটকগুলো ইউটিউবে দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে। টেলিছবির মধ্যে ‘ব্যাচ ২৭’, ‘ম্যানিকুইন মুমু’, ‘মীরজাফরের মৃত্যু চাই’, ‘ইশারায় ভুল ছিলো’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

ইউটিউবে ঈদ অনুষ্ঠানের জনপ্রিয়তা প্রসঙ্গে জিটিভির অনুষ্ঠান কর্মকর্তা আদিত্য নজরুল জাগো নিউজকে বলেন, ‘দর্শক এখন দুই শ্রেণিতে বিভক্ত। একশ্রেণির দর্শক নাটক বা বিভিন্ন অনুষ্ঠান দেখে টিভিতে এবং অন্য শ্রেণির দর্শক দেখে ইউটিউবে। আমরা চেষ্টা করছি দুই শ্রেণির দর্শককে ধরার জন্য। টিভিতে নাটক যারা মিস করছেন তাদের জন্য প্রচারের পরই আমাদের নিজস্ব চ্যানেলে আপলোড করছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘অনেক সময় নাটক যখন টিভিতে প্রচার হয় অনেকেই অন্য কাজে ব্যস্ততার কারণে টিভির সামনে বসে উপভোগ করতে পারেন না। কাজটি ভালো হলে পরে কিন্তু তারা আবার সেটা ইউটিউব ঘেঁটে দেখছেন। দর্শকদের ইউটিউবে নাটক কিংবা অন্যান্য অনুষ্ঠান দেখার প্রবণতাকে আমি পজেটিভভাবে নিচ্ছি।’

জনপ্রিয় নাট্যনির্মাতা সাগর জাহান এই ঈদে তিনটি কয়েক পর্বের সিরিয়াল এবং চারটি খণ্ড নাটক নির্মাণ করেছেন। যেগুলো বিভিন্ন চ্যানেলে প্রচার হয়েছে। তিনি বলেন, ‘দর্শকরা ইউটিউবে নাটক দেখছেন এটাকে আমি সমর্থন করছি। কারণ দেশের বাইরে অনেক মানুষ আছেন যারা সরাসরি টিভিতে প্রচারের সময় নাটকগুলো দেখতে পারেন না। তাছাড়া বিজ্ঞাপনের অত্যাচার তো আছেই!’ উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘আমার ফুফু থাকেন আমেরিকায়। সেখানে আরটিভি ছাড়া অন্য চ্যানেল দেখা যায় না। পরে তিনি কিন্তু নাটক প্রচারের পর ইউটিউব থেকে দেখছেন।’

আরমান ভাই, সিকান্দারবক্স এর জনপ্রিয় নাটকের এই নির্মাতা বলেন, ‘তবে একটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে যেন নাটক টিভিতে প্রচারের পর ইউটিউব চ্যানেলে আপ করা হয়। যে নাটক যে চ্যানেলে প্রচার হবে, সেই চ্যানেলের ইউটিউব চ্যানেলে যাতে আপ হয়, সেদিকে চ্যানেল কর্তাদের নজর দিতে হবে।’

নির্মাতা মিজানুর রহমান আরিয়ান বলেন, ‘কয়েক বছর ধরেই কিন্তু মানুষ ইউটিউবের দিকে বেশি ঝুঁকছেন। আমার যেটা মনে হয়, কনটেন্ট ভালো হলে অতিরিক্ত বিজ্ঞাপন সহ্য করেও মানুষ নাটক দেখেন। যেটা প্রমাণ আমি পেয়েছি এবারের ঈদে আমার প্রচার হওয়া ‘ব্যাচ ২৭’ নাটকের মাধ্যমে।’ তিনি বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয় নাটক এখন জনপ্রিয়তা পায় কাজিন থেকে কাজিন, বন্ধু থেকে বন্ধু, কলিগ থেকে কলিগের আলাপের মাধ্যমে। যারা নিজে দেখে অন্যকে উৎসাহিত করেন তারাই এখন টিভি অনুষ্ঠানের সেরা দর্শক ও মার্কেটার। তবে আমি মনে করি, টিভিতে নাটক দেখার মজাই আলাদা। যেটা আমি করে থাকি। হলে ছাড়া ছবি দেখে যেমন মজা পাইনা, তেমনি টিভিতে নাটক না দেখে মজা পাইনা।’

নির্মাতা কাজল আরেফিন অমি বলেন, ‘প্রডাকশন বানাই দর্শকদের দেখার জন্য। সেটা টিভি হোক কিংবা ইউটিউব। মানুষ কাজ দেখে প্রশংসা করলেই তৃপ্তি পাই। তবে আমার নির্মিত নাটক অনেক বেনামি ইউটিউব চ্যানেলে আপ করা হয়েছে দেখেছি। যেটা দুঃখজনক।’

লেখাপড়ার চাপে টেলিভিশনের সামনে বসে ঈদ অনুষ্ঠান উপভোগ কারার খুব বেশি সময় পান না বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল ইলেকট্রনিকস বিভাগের শিক্ষার্থী মৃণ্ময়। তাছাড়া হলে থাকেন বলে টিভি অনুষ্ঠান দেখার সৌভাগ্য হয় তার। তবে ঈদ অনুষ্ঠানগুলো অবসরে ইউটিউবে দেখছেন তিনি। বললেন, ‘টিভির সামনে বসা হয়ে উঠে না। তাই নিজের স্বাধীন মতো ইউটিউবে ঈদের নাটক ও অন্য অনুষ্ঠান উপভোগ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। আমার মতো অনেকেই আছেন যারা ইউটিউবে নাটক দেখেন।’

ঈদ উপলক্ষে পরিচালক মাবরুর রশীদ বান্নাহ তার ‘আন্ডারকভার ক্রিয়েটিভ ফ্যাক্টরি’ ইউটিউব চ্যানেলে মুক্তি দিয়েছেন ঈদ নাটক। এছাড়া ইউটিউবে ঈদ উপলক্ষে সাত পর্বের ‘আমি ক্রিকেটার হতে চাই’ ও ‘অ্যাডমিশন টেস্ট’ শিরোনামে দুটি ওয়েব সিরিজ মুক্তি দিয়েছে ইউটিউব চ্যানেল ‘সিএমভি’; যা দর্শক জনপ্রিয়তা পেয়েছে ইতিমধ্যে।

এছাড়া বাংলা ঢোলের, সিডি চয়েজেসহ বিভিন্ন ইউটিউব চ্যালেন আয়োজন করেছে ঈদ বিনোদন। সেসব চ্যানেলে আপ করা নাটকগুলো প্রচার পরিমাণে দেখছেন দর্শকরা।

এনই/এলএ

আরও পড়ুন