ঈদের রেশ বইছে সিনেমাহলে
ঈদের ছুটিও শেষ হয়েছে মঙ্গলবার। ঈদের ছুটিতে রাস্তা-ঘাট অনেকটা ফাঁকা হলেও উপচে পড়া ভিড় রয়েছে রাজধানীর বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে। বিনোদনপ্রেমীদের বাদ যাচ্ছে না সিনেমাহলে ঢুঁ মারাও!
ঈদের চতুর্থদিন বৃহস্পতিবার বাড়তি আনন্দ পাওয়ার আশায় রাজধানীর অনেকেই বন্ধু ও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ছুটে গেছেন সিনেমাহলে। সিনেমাহলে কিংবা বাংলা চলচ্চিত্রের রমরমা দিন না থাকলেও জরা-জীর্ণ হলগুলোতেই ঈদ উপলক্ষে মুক্তি পাওয়া ছবিগুলো দেখছেন তারা।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বৃহস্পতিবার রাজধানীর সিনেমাহলে বিভিন্ন বয়সী ও শ্রেণি পেশার দর্শকদের উপচেপড়া ভিড়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়েও টিকিট কিনে হলে ঢুকছেন তারা। রাজধানীর যমুনা ফিউচার পার্কের ব্লকব্লাস্টার, বসুন্ধরা সিটি কমপ্লেক্সের স্টার সিনেপ্লেক্স, বলাকা সিনেওয়ার্ল্ড, মতিঝিলের মধুমিতা, রাজমনি ও অভিসার সিনেমা হলে ছিল দর্শকদের ভিড়।
এসব সিনেমাহলের টিকিট কাউন্টারে দাঁড়িয়ে টিকিট সংগ্রহ করছেন দর্শকরা। টিকিট না পেয়ে কেউ কেউ ব্ল্যাকেও টিকিট কেটেছেন। এদিকে দর্শকদের অভিযোগ, সাধারণ দর্শকদের টিকিট না দিয়ে কালোবাজারিদের হাতে টিকিট তুলে দিচ্ছে হল কর্তৃপক্ষ। দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা করেও টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না। তবে হলের সামনে দাঁড়ালেই কালোবাজারিদের কাছে অনায়াসেই বেশি দামে কেনা যাচ্ছে টিকিট।
যমুনা ফিউচার পার্কের ব্লক ব্লাস্টার সিনেমায় গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকেই দর্শকে মুখরিত ছিল সেখানকার প্রত্যেকটি হল। এখানে এক সঙ্গে সাতটি চলচ্চিত্র প্রদর্শন হয়। এই ঈদে এখানে প্রদর্শিত হচ্ছে- ‘লাভ মেরেজ, অগ্নি-২, ‘পদ্ম পাতার জল’ ছাড়াও ইংরেজি চলচ্চিত্র টারমিনেটরসহ মোট ৭টি চলচ্চিত্র।
ব্লক ব্লাস্টারের ম্যানেজার মো. আব্দুস সাত্তার জাগো নিউজকে বলেন, ঈদের দিন থেকে প্রতিটি শো ছিল হাউজ ফুল। দর্শকদের অনুরোধে আমরা আরো একটি শো বাড়িয়েছি। এটি ৯টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত প্রদর্শিত হচ্ছে।
ব্লক ব্লাস্টারে সিনেমা দেখতে আসা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র অনিক বলেন, আমি প্রায়ই সিনেমা দেখি। ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে প্রিয় মানুষটিকে নিয়ে সিনেমা দেখতে হলে এসেছি।
তিনি বলেন, চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিতে নতুন মুখ আসায় চলচ্চিত্রের ধারায় ভিন্নতা এসেছে। সুস্থ ধারার চলচ্চিত্র নির্মাণ হলে অবশ্যই আমরা সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা দেখব।
এবারের ঈদে শাকিব খান-অপু বিশ্বাস অভিনীত ‘লাভ মেরেজ’, ভারতীয় অভিনেতা ওম ও মাহিয়া মাহির অভিনীত ‘অগ্নি-২’, ইমন ও বিদ্যা সিনহা মিম অভিনীত ‘পদ্ম পাতার জল’ এই তিনটি চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হচ্ছে। পুরাতন হলেও দেশের বাইরে শুটিং, উন্নতমানের স্টুডিওতে এডিটিং ও ডাবিং করায় দর্শকদের মনে জায়গা করে নিয়েছে অগ্নি-২।
দর্শকদের পছন্দের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে লাভ মেরেজ। অনন্য গল্পে নির্মিত এই চলচ্চিত্রটি দর্শকদের মনে জায়গা করে নিয়েছে। তবে বাদ যায়নি `পদ্ম পাতার জলও`। এবার তিনটি চলচ্চিত্রই বেশ ভালো ব্যবসা করছে বলে জানান হল মালিকরা।
রাজধানীর মধুমিতা সিনেমা হলে আসা ব্যবসায়ী মোহাম্মদ শরীফ বলেন, বন্ধুদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে বিনোদনের বিকল্প নেই। তাই পরিবার-পরিজন নিয়ে হলে নতুন সিনেমা দেখতে এসেছি। ব্যবসায়িক কারণে ব্যস্ত থাকায় খুব একটি সিনেমা দেখা হয় না। এবার ঈদে লাভ মেরেজ ও অগ্নি-২ দুটো চলচ্চিত্র দেখেছি। দুটোই খুব ভালো লেগেছে।
দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে ঢাকাই সিনেমায় হারানো ঐতিহ্য ফিরে এসেছে উল্লেখ করে এই দর্শক বলেন, দর্শকদের সিনেমামুখী করতে হলে পুঁজি বিনিয়োগ করতে হবে। হলের পরিবেশ ভালো হলে অবশ্যই দর্শক হলে আসবে।
বলাকায় সিনেমা দেখতে আসা সোহেল রানা বলেন, পরিবার নিয়ে এবার ঈদে বাড়ি যেতে পারিনি। তাই সিনেমা দেখতে চলে এলাম। সকালে প্রায় দেড় ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট পেয়েছি। প্রায় একই কথা বললেন বসুন্ধরা সিটির স্টার সিনেপ্লেক্সে আসা রবিন ও জেসমিন দম্পতি।
তারা বলেন, কয়েক বছর আগে অশ্লীল ছবি প্রদর্শনের কারণে হলগুলোতে সপরিবারে আসাটা ছিল অস্বস্তির। এখন সেই পরিবেশ আর নেই বললেই চলে। তাই পরিবারের লোকজনসহ হলে এসেছি সিনেমা দেখতে।
মধুমিতা সিনেমা হলের টিকিট ক্লার্ক আব্দুল হামিদ বলেন, ঈদে বেশ সাড়া পেয়েছি। নাইট শো ব্যতীত প্রতিটি শো ছিল হাউজফুল। এবারের ঈদে মুক্তি পাওয়া চলচ্চিত্রগুলো ছিল দর্শকবান্ধব। বৃষ্টি উপেক্ষা করে দর্শক ছুটে এসেছে হলে।
ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে সিনেমা হলে আসা দর্শকদের মধ্যে অনেকেই পরিবার পরিজন নিয়ে এসেছেন বলে জানান তিনি।
এমএইচএম/এমএমএ/জেআইএম