তিন তারকার জন্মদিন আজ
সংগীতাঙ্গনের গুণী ব্যাক্তিত্ব কুমার বিশ্বজিৎ। ‘তুমি রোজ বিকেলে’, ‘তোরে পুতুলের মত করে সাজিয়ে’, কিংবা ‘যেখানে সীমান্ত তোমার’, ‘তোমরা একতারা বাজাইও না’- গানগুলোর মাধ্যমে বাংলা গানের দর্শক-শ্রোতাদের কাছে তিনি বরেণ্য শিল্পী।
অন্যদিকে অভিনয়ের মুগ্ধ এক জাদুকরের নাম চঞ্চল চৌধুরী। বৈচিত্রময় অভিনয়ে ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছেন তিনি। হাস্যরস, সিরিয়াস, রোমান্টিকতা সবখানেই তিনি সাবলীল অভিনয় দিয়ে জয় করেছেন দর্শকের মন। তার অভিনীত ‘মনপুরা’ চলচ্চিত্রটি গেল দশ বছরের সেরা ছবিগুলোর একটি হয়ে আছে। এবং তারই ছবি ‘আয়নাবাজি’ ভেঙেছে গেল দশ বছরে ব্যবসা সফল ছবির রেকর্ড।
আরেকজন তমা মির্জা। ঢাকাই চলচ্চিত্রের এ প্রজন্মের চিত্রনায়িকা। অল্পদিনের ক্যারিয়ারে তিনি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পুরস্কার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছেন চলতি বছরে। শাহনেওয়াজ কাকলীর ‘নদীজন’ সিনেমায় অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব চরিত্রের এই পুরস্কার পাচ্ছেন তিনি।
মজার ব্যাপার হলো তিন প্রজন্মের এই তিন তারকার জন্মদিন আজ ১ জুন। জাগো নিউজের পক্ষ থেকে তার প্রতি রইল প্রত্যেকের জন্য জন্মদিনের অনেক শুভেচ্ছা।
চঞ্চল জানান, জন্মদিনকে ঘিরে গতরাতের প্রথম প্রহর থেকে কাছে দূরে ভক্ত, শুভাকাঙ্ক্ষী, সহকর্মী সকলের প্রশংসার সিক্ত হচ্ছেন। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, আজকের দিনে কোনো শুটিং রাখিনি। প্রায় ৪০ দিন পর একটাদিন অবসর পেলাম। সকাল থেকে দুটো টিভি চ্যানেল (আরটিভি, চ্যানেল আই) অনুষ্ঠানে হাজির ছিলাম। বিকেলে আরও একটি টিভি চ্যানেলের (৭১) অনুষ্ঠানে উপস্থিত হবো।’
চঞ্চল বলেন, ‘আমি আসলে ঘটা করে জন্মদিন পালন করি। কয়েকবছর ধরে জন্মদিনের রাতেই বৃন্দাবন দাদার বাসায় কেক কাটা হয়। তার দুই ছেলে, বউ এটা করে থাকেন। এবারও তাই করেছি। এছাড়া আমার ছেলে শুদ্ধ বড় হয়েছে। সে রাতেই কেকে কেটেছে। সবাই ফোন করে ইউশ তো করছেই। আমি এককথায় আশির্বাদপুষ্ট, ভালোবাসায় সিক্ত। সকলের কাছে কৃতজ্ঞা। আমার জন্য আদোয়া করবেন।’
কুমার বিশ্বজিৎ বলেন, ‘তেমন কোনো চাকচিক্যের আয়োজন নেই জন্মদিন পালনের। কাজে ঢাকার বাইরে যাচ্ছি। সীতাকুণ্ড। শ্রোতাদের কাছেই আমার সেরা উপহার, জন্ম ও জীবনের। তার নাম ভালোবাসা। সবাই ভালো থাকবেন, আমার জন্য প্রার্থনা রাখবেন।’
আর তমা জানালেন, ‘প্রতিবারই জন্মদিন পালন করি। তবে তা ঘরোয়াভাবে। কিন্তু এবার বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে দিনটা পালন করতে চাচ্ছি। তাই কাছের লোকজনদের আমন্ত্রণ জানিয়েছি। সবার সঙ্গে আনন্দ করব।’
কুমার বিশ্বজিৎ
১৯৬৩ সালের ১ জুন জন্ম কুমার বিশ্বজিতের। চট্টগ্রাম জেলায় কেটেছে শৈশব। তিনি সেখানে জন্মগ্রহণ করেন এবং সেখানে থেকেই তার প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। কলেজে পড়ার সময় ‘তোরে পুতুলের মত করে সাজিয়ে’ গান গেয়ে বন্ধুমহলে তারকা বনে যান। এর পর সংগীতের পথ ধরে হয়ে উঠেন দেশের গুণী সংগীতকার।
আধুনিক বাংলা গানের গুরুত্বপূর্ণ শিল্পী তিনি। সিনেমার গানে কণ্ঠ দিচ্ছেন দীর্ঘ চার দশক ধরে। কুমার বিশ্বজিৎ ১৯৮৩, ১৯৯৯, ২০০৯ এবং ২০১২- এই মোট চার বার জাতীয় চলচ্চিত্র সেরা প্লে-ব্যাক পুরুষ শিল্পী হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছেন।
এছাড়াও তিনি বঙ্গবন্ধু স্মৃতি পুরস্কার, জিয়া স্মৃতি পুরস্কার, যায় যায় দিন, চ্যানেল আই চলচ্চিত্র পুরস্কার, চ্যানেল আই পারফরম্যান্স পুরস্কার, বিনোদন বিচিত্রাসহ বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।
ব্যাক্তিজীবনে কুমার বিশ্বজিৎ নাঈমা সুলতানার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। তাদের একটি পুত্র সন্তান রয়েছে।
চঞ্চল চৌধুরী
পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার নজিরগঞ্জ ইউনিয়নের কামারহাট গ্রামে ১৯৭৪ সালের ১ জুন জন্মগ্রহণ করেন চঞ্চল চৌধুরী। গ্রামের স্কুল থেকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক এবং রাজবাড়ি সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে পড়াশোনা করেন। উচ্চমাধ্যমিক শেষ করার পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলায় ভর্তি হন।
মামুনুর রশীদের আরন্যক নাট্যদলের সাথে কাজ করার মধ্যদিয়েই অভিনয় জীবনের শুরু হয়। মামুনুর রশীদের লেখা ‘সুন্দরী’` নাটকে ছোট একটি চরিত্রে তিনি প্রথম অভিনয় করেন। তিনি বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র বাজানো, অভিনয়, গান, ছবি আঁকা এসব কিছুতেই সমান পারর্দশী।
মোস্তফা সরওয়ার ফারুকীর ‘তাল পাতার সেপাই’ নাটক দিয়ে দর্শকের কাছে পরিচিত হয়ে ওঠেন এই মঞ্চ অভিনেতা। তারপর থেকেই তিনি মঞ্চের পাশাপাশি বিরামহীন কাজ করে যাচ্ছেন টিভি নাটকে। ২০০৯ সালে গিয়াস উদ্দিন সেলিম পরিচালিত ‘মনপুরা’ ছবিতে এবং সর্বশেষ অমিতাভ রেজার আয়নাবাজি ছবিতে অভিনয় করে ক্যারিয়ারে নতুন এক জোয়ার নিয়ে আসেন চঞ্চল চৌধুরী।
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্ত এই অভিনেতার ‘দেবী’ নামে আরেকটি ছবি মুক্তির অপেক্ষায় আছে। যেখানে চঞ্চল চৌধুরী অভিনয় করছেন মিসির আলীর চরিত্রে। অন্যদিকে, ঈদ উপলক্ষে নাটকগুলোতে সময় দিচ্ছেন। সদ্য শেষ করেছেন ‘নসু ভিলেন’ নামের একটি ছয় পর্বের ধারাবাহিক।
তমা মির্জা
তমা মির্জার শৈশব-কৈশোর কেটেছে বাগেরহাটের কচুয়াতে। সেখানে মাধ্যমিক পাশ করে রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজ থেকে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন তিনি। ছোটবেলায় স্বপ্ন ছিল আইনজীবী হওয়ার। সে লক্ষ্যে বর্তমানে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে আইন বিষয়ে পড়াশোনা করছেন এ অভিনেত্রী।
২০০৯ সালে শাহীন-সুমন পরিচালিত ‘মনে বড় কষ্ট’ সিনেমার মাধ্যমে চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় এ অভিনেত্রীর। এরপর অনন্ত হীরার ‘ও আমার দেশের মাটি’, শাহাদাত হোসেন লিটনের ‘তোমার কাছে ঋণী’ শিরোনামের চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন তিনি।
তমা বর্তমানে বেশ কয়েকটি সিনেমার কাজ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। জনপ্রিয় উপস্থাপক ও নির্মাতা দেবাশীষ বিশ্বাস পরিচালিত ‘চল পালাই’ সিনেমার কাজ প্রায় শেষ। এতে তমার বিপরীতে অভিনয় করছেন চিত্রনায়ক শাহরিয়াজ ও শিপন মিত্র। এ ছাড়া রয়েল অনিক পরিচালিত ‘গেম রিটার্নস’ সিনেমার কাজ প্রায় শেষ করেছেন তমা। এতে তমার বিপরীতে অভিনয় করছেন মডেল ও অভিনেতা নিরব।
এনই/এলএ