বাপ্পীর ডেঞ্জার জোন বোটানিক্যাল গার্ডেনে!
প্রেম উদ্যান হিসেবে খ্যাতি রাজধানীর অন্যতম জনপ্রিয় স্থান বোটানিক্যাল গার্ডেন। অযত্ন-অবহেলা আর সঠিক তদারকির অভাবে অতীতে অনেকটা খারাপ সময় গেছে উদ্যানটির। এটি হয়ে উঠেছিল বহিরাগতদের নানা কুকর্মের অভয়ারণ্য। তবে গণমাধ্যমে একের পর এক প্রতিবেদনে সংশ্লিষ্টদের টনক নড়েছে।
আজকাল এ উদ্যানে প্রচুর দর্শনার্থীর আগমন ঘটে। তারা আসেন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দল বেঁধে। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও হাজির হচ্ছেন বন্ধু-বান্ধবকে নিয়ে। বেশ পরিষ্কার-পরিপাটি পথঘাট। আগের মতো ঝোপঝাড় নেই। চোখে পড়ে না ওড়না বা শাড়ি পেঁচানো ছোট ছোট ঘরগুলো। বসে গল্প করার চেয়ে হেঁটে উদ্যানের সৌন্দর্য দেখে বেড়ানো লোকের সংখ্যাই বেশি।
সেই বোটানিক্যাল গার্ডেনে চলছে চলচ্চিত্রের শুটিং। ছবির নাম ‘ডেঞ্জার জোন’। নিজের চিত্রনাট্য ও কাহিনিতে নিজেই পরিচালনা করছেন বেলাল সানি। ছবির নায়ক বাপ্পী চৌধুরীর আমন্ত্রণে আজ শনিবার চিরচেনা বোটানিক্যাল গার্ডেনে যাওয়া এবং উদ্যানটিকে নতুন করে আবিষ্কার করা। উদ্যানের গল্প অন্য কোনোদিন বলা যাবে। আজ ‘ডেঞ্জার জোন’র গল্প হোক।
মাথার ওপর প্রচণ্ড রোদের তাপ নিয়ে উদ্যানে যখন প্রবেশ, টের পাওয়া গেল রাজধানীবাসীর আজকে তাবদাহে ভুগতে হবে। ক্ষ্যাপা সূর্যের মস্তক গলানো তাপ! তাতেই যেন গাছের পাতাগুলো অভিমান করে আছে। নড়তেই চাইছে না। স্বাভাবিকভাবেই চারদিকে আম-কাঁঠালের মতো পাকছে মানুষ, ঝড়ছে ঘাম।
এমন অসহ্য গরমেও উৎসুক জনতার ভিড়। বোঝাই গেল ওদিকেই শুটিং চলছে। এগিয়ে যেতেই চোখে পড়ে শুটিং ইউনিউটের গাড়ি। আর একটু সামনে বাড়তেই দেখা গেল বনের গভীরে ঘন সাদা ধোঁয়ায় ছেয়ে গেছে। উদ্যান কর্তৃপক্ষ গাছের পুরনো পাতা পুড়িয়ে বন পরিষ্কার কি না ভাবতেই ভুল ভেঙে গেল। দেখা গেল, ধোঁয়ার মাঝখানে সহশিল্পীদের (জলি, তারেক আজিজ, নেহা) নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন ‘ডেঞ্জার জোন’ ছবির নায়ক ঢাকাই সিনেমার ‘সুলতান’ খ্যাত বাপ্পী। শটের বিরতি চলছিল। তাই চোখে চোখ পড়তেই মিষ্টি হেসে অভ্যর্থনা জানিয়ে বসতে বললেন। হাসলেন বাপ্পীর নায়িকা জলিও।
একটু এগিয়ে যেতেই দেখা হলো পরিচালক বেলাল সানির সঙ্গে। কুশলাদি বিনিময় শেষে হলো ছবির কাজের অগ্রগতির আলাপ। পরিচালক জানান, গেল ৬ মে থেকে এই লোকেশনেই ‘ডেঞ্জার জোন’ ছবির ক্যামেরা ওপেন করেছি। আমার প্রথম ছবির প্রথম দৃশ্যটাও এখানে। দারুণ এক ব্যাপার।
তিনি আরও বলেন, ‘এখানে একটানা শুটিং চলবে আগামী ২ মে পর্যন্ত। গেল ৮ তারিখ থেকে শুটিংয়ে যোগ দিয়েছেন নায়িকা জলি আর ৯ তারিখ থেকে আছেন বাপ্পী চৌধুরী। আমি চেষ্টা করছি একটা ভিন্ন আঙ্গিকে নতুন স্বাদের একটি ছবি দর্শকদের উপহার দিতে।’
কেমন সেই ভিন্নতা, কেমন সেই স্বাদ? প্রশ্নের জবাবে বেলাল সানি বলেন, ‘আমার এই ছবিটিকে অনেকে বলছেন ভৌতিক। বিষয়টি আসলে তা নয়। এটিকে কল্পকাহিনীর চলচ্চিত্র বলা যেতে পারে। যেমনটি ছিলো ক্যামেরনের ‘এভাটার’ ছবিটি। রোমাঞ্চ আছে, অ্যাডভেঞ্চার আছে, ভয়েরও একটা ব্যাপার কাজ করে। আমার ছবিটিও তাই। এখানে কোনো মরে গিয়ে কবর থেকে বেরিয়ে আসবে না। কিন্তু ক্লাইমেক্স থাকবে। উচ্চবিত্ত পরিবারে জন্ম নেয়া ৬ বন্ধুর কাহিনী নিয়ে এগিয়ে যাবে ছবির গল্প। এতে প্রচুর ভিএফএক্সের কাজ থাকবে। আমার অত বাজেট নেই। তাই মনের মতো হয়তো অনেক কিছুই পারবো না। তবে চেষ্টা থাকবে দর্শক যেন ছবিটি দেখে তৃপ্তির ঢেকুর তুলেন।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘তবে এটুকু দাবি করছি আমার ছবির গল্প চরিত্ররা কাল্পনিক হলেও কারো থেকে ধার বা নকল নয়। আমি নিজেই গল্প ও চিত্রনাট্য করেছি। একেবারেই মৌলিক একটি চলচ্চিত্র হবে ‘ডেঞ্জার জোন’।
হাতে নাস্তা নিয়ে শুটিংয়ের দিকে এগিয়ে যাওয়া। সহকারী পরিচালক দৃশ্য বুঝিয়ে দিচ্ছেন, কোনো এক বন্ধুকে হারিয়ে ফেলেছেন বাপ্পীরা। তারই সন্ধানে নামছেন তারা। শুটিং ‘ওকে’ করে বিশ্রাম নিতে আসলেন বাপ্পী-জলি। প্রচন্ড গরমে ধকলটা একটু বেশিই যাচ্ছে তাদের উপর, বুঝা গেল। স্বভাবজাত হাসিতে হাত বাড়ালেন বাপ্পী। দুজনের সঙ্গেই কুশল বিনিময় হয়ে গেল। জমে উঠলো নানা প্রসঙ্গের আলাপ। এক পর্যায়ে ‘ডেঞ্জার জোন’ ছবি প্রসঙ্গে বাপ্পী বললেন, ‘নতুন পরিচালক, তবে বেলাল সানির নির্মাণের ধরনটা আমার পছন্দ হয়েছে। বেশ গোছানো কাজ করছেন তিনি। আর ছবির গল্প এবং আমার চরিত্র দুটোই বেশ চমৎকার। গতানুগতিকতার একটু বাইরে গিয়ে বানানো হচ্ছে ‘ডেঞ্জার জোন’। যেখানে এক বন্ধু ডেঞ্জার জোনে হারিয়ে যাবার পর তাকে সন্ধানে নামে আরও কয়েকজন। ছবিতে একটি মাত্র গান থাকবে। ভিলেন হত্যা করার মতো মারামারিও এখানে নেই। কিন্তু গল্প ও নির্মাণের মজাটা থাকবে। দর্শক ছবিটি গ্রহণ করবেন বলে আমি আশাবাদী।’
‘বোটানিক্যাল গার্ডেনের এই লোকেশনটি দর্শক দেখতে পাবেন না। এখানে প্রযুক্তির অনেক কাজ করা হবে। দর্শক যা দেখবেন তাতে অনেক চমক থাকবে।’ রহস্য করার ভঙ্গিতে যোগ করলেন চিত্রনায়ক বাপ্পী চৌধুরী।
তিনি আরও বললেন, ‘যতো আন্দোলনই হোক আর যতো পরিবর্তনের কথাই বলা হোক না কেন, ভালো ছবি বেশি বেশি নির্মাণ না হলে এবং ব্যবসা সফল ছবি না আসলে আমরা ইন্ডাস্ট্রিকে ভালো অবস্থানে নিয়ে যেতে পারবো না। তাই আমি চাই বেশি পরিমাণে মানসম্পন্ন ছবি নির্মাণ হোক। তারজন্য আমি সবসময়ই হেল্পফুল। এই ছবিটি নিয়েও আমি আশাবাদী। সকাল ৯টা থেকে শুটিংয়ে আসছি। একটানা কাজ করছি এই গরম উপেক্ষা করেও। জলির সঙ্গে প্রথমবার কাজ করা এই ছবি দিয়ে। বেশ ভালো অভিজ্ঞতা। আরও যারা আছেন সবাই চেষ্টা করছেন নিজের সেরাটা দিয়ে কাজ করতে।’
ছবিটিতে কাজের অভিজ্ঞতা জানিয়ে জলি বললেন, ‘আমি ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই চেষ্টা করেছি ব্যতিক্রমী গল্পের ছবি ও চরিত্রে কাজ করতে। আমার একটি ছবির সঙ্গে অন্য ছবির মেজাজ বা আমেজে কোনো মিল নেই। এই ছবিটিও আমার জন্য ব্যতিক্রমী এক অভিজ্ঞতা। আমার দর্শকরা এখানে বিনোদনের ভিন্নতা পাবেন। চেষ্টা করছি সবাই মিলে ভালো একটি ছবি উপহার দিতে।’
পরিচালক জানালেন, বোটানিক্যাল গার্ডেন কর্তৃপক্ষ বেশ সহায়তাপ্রবণ। উদ্যানটিও এখন অনেক সুন্দর আর সাজানো গোছানো। পরিবেশটাও আর আগের মতো আপত্তিকর অবস্থায় নেই। বেশ শান্তি আর নিশ্চিন্তে তিনি কাজ করছেন। তার মতে, এই উদ্যানে ভিড় কম বলে আরামে কাজ করা যায়। জায়গাও অনেক। লোকেশনে ভিন্নতা আনতেও সহায়ক। বাগান, বাঁশঝাড়, পুকুর, মাটি, ইটের পথ-সবই আছে।
আমরাও আছি; ‘ডেঞ্জার জোন’র অপেক্ষায়। থামতে হয়, থেমে যাওয়া মানুষের ধর্ম। আমাদেরও থামতে হলো। আবারও দেখা হবার আশা ব্যক্ত করে সবার সঙ্গে বিদায় পর্ব সারা। গলগলা রোদের চোখ রাঙানিকে ভেংচি কেটে রওনা হলাম অফিসের পথে। মনে মনে রইলো চলতি বছরে ছবি মুক্তির মিছিলকে সমৃদ্ধ করবে বাপ্পী-জলি জুটির এই ছবিটি- সেই প্রত্যাশা। ভালো ও মৌলিক গল্পের ছবিতে সুদিন আসুক ঢাকার চলচ্চিত্রের।
এলএ