শাকিব নিজেই তার পায়ে কুড়াল মারছে : ফারুক
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন হয়ে গেল গত শুক্রবার (৫ মে)। সেদিন রাত থেকে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে গোটা চিত্রপাড়ায়। নির্বাচনী ফলাফল ঘোষণার আগে শাকিবের ভোট গণনা কক্ষে প্রবেশ, তার ওপর হামলা এবং আজ জায়েদ খান ও সাইমনের বিরুদ্ধে জিডি; এই সবকিছু নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে খোলামেলা কথা বললেন শিল্পী সমিতির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রবীণ চলচ্চিত্র অভিনেতা ফারুক।
প্রথমেই ফারুক বলেন নির্বাচন ও এর ফলাফল নিয়ে। তিনি বলেন, ‘আমার দৃষ্টিতে ফার্স্টক্লাস নির্বাচন হয়েছে। দিনভর উৎকণ্ঠা থাকলেও স্বচ্ছভাবে নির্বাচন হয়েছে বলে আমি মনে করি। সব সিনিয়র-জুনিয়র শিল্পীই তা বলছেন। তবু কেন কিছু গণমাধ্যমে উল্টো কথা এসেছে আমার বুঝে আসে না। শিল্পীদের নির্বাচন। শিল্পীরা আনন্দে ভোট দিয়েছে, ফল এসেছে। কিন্তু বাইরের লোক বলছে অন্য সুরের কথা। কারণটা কী? তাছাড়া ৬২৪ জন ভোটারের মধ্যে ভোট দিয়েছেন ৫৫৮ জন, যা রেকর্ডসংখ্যক ভোট পড়েছে বলে আমি মনে করি। এর মানে হচ্ছে আমরা একটা আলো দেখতে পেয়েছি। চলচ্চিত্রের জন্য শিল্পীদের ভালোবাসা ফুটে উঠেছে এ নির্বাচনের মাধ্যমে।’
দিনভর সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হলেও মধ্যরাতে ভোট গণনা কক্ষে শিল্পী সমিতির বিদায়ী সভাপতি শাকিব খান প্রবেশ করেন। এরপর বাধে চরম বিশৃঙ্খলা। এক সময় শাকিবকে ভোট গণনা কক্ষ থেকে বের করে দেয়া হলে এফডিসিতে তিনি হেনস্তার শিকার হন বলে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় অভিযোগ করেছেন।
মধ্যরাতে শাকিবের এফডিসিতে যাওয়া প্রসঙ্গে শাকিবের বক্তব্য, ‘কয়েকজন প্রার্থী তার কাছে ভোট কারচুপির অভিযোগ করেন। এরপর নির্বাচনী ফলাফল দিতে দেরি হওয়ার কারণ জানতে তিনি ভোট গণনা কক্ষে প্রবেশ করেন। পরে সেখান থেকে বের হলে তাকে সেখানে উপস্থিত অনেকেই মারতে যান। একপর্যায়ে প্রাণ বাঁচতে কোন রকমে কেটে পড়েন তিনি।’
শাকিবের এমন বক্তব্য নিয়ে ফারুক বলেন, ‘মধ্যরাতে সে (শাকিব) কেন প্রবেশ করবে ভোট গণনা কক্ষে? প্রতি প্রার্থীর দুজন করে এজেন্ট (প্রতিনিধি) তো ভোট গণনার সময় উপস্থিত ছিলেন। তাহলে শাকিব কেন যাবে? সভাপতির ক্ষমতাবলে সে কোনোভাবেই ভোট গণনা কক্ষে প্রবেশ করার এখতিয়ার রাখে না। আর নির্বাচন হওয়ার সময় আগের সভাপতির ক্ষমতাও আর থাকে না। যদি সেখানে মন্দ কিছু হয়ে থাকে তবে যারা প্রার্থী তারা এ নিয়ে কথা বলতে পারতেন। অভিযোগ তুলতে পারতেন। কিন্তু শাকিবের যাওয়াটা তো উদ্দেশ্যমূলক মনে হয়। সে কেন নিজেকে ছোট করতে গেল?’
তিনি আরও বলেন, ‘শাকিবের যদি ভোট গণনা কক্ষে যাওয়ার প্রয়োজন হতো তাহলে সিনিয়র শিল্পী যারা আছেন তাদের সে বলতে পারত। আমাদের সঙ্গে নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে পারত! তবে তো এত গণ্ডগোল হতো না। তাকেও কেউ হেনস্থা করত না। তা কেন করেনি সে? আমি তো ওইদিন রাত সাড়ে ১১টার পর এফডিসি থেকে বেরিয়েছি। কোনো ধরনের অনিয়ম আমার চোখে পড়েনি। আমার ধারণা হতেই পারে একটি পক্ষের হয়ে শাকিব ওই রাতে ভোট গণনা কক্ষে প্রবেশ করেছিল। কিন্তু পারেনি।’
ওই রাতে শাকিব এফডিসিতে হামলার শিকার হন এমন অভিযোগ এনে নির্বাচনে জয়ী হওয়া শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান ও কার্যনির্বাহী পদে জয়ী সাইমন সাদিককে দায়ী করে তেজগাঁও থানায় জিডি করেন। বিষয়টি এরই মধ্যে কানে পৌঁছেছে ফারুকের। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘শাকিব থানায় অভিযোগ করেছে সেটা আমি শুনেছি। এগুলো টার্গেটেড জিনিস, অল আর ভোগাস। এসব জিডি করা- এ ধরনের ঢঙ করে কোনো লাভ নেই। শাকিব নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মারছে। ওকে (শাকিব) তো আমরা আদর-স্নেহ করি, ভালোবাসি। সে তো আমাদের কাছে ভালোবাসার পাত্র। কেন সে নিজেকে একা করে ফেলছে? তার কি কাউকে প্রয়োজন নেই নাকি!’
ফারুক বলেন, ‘সে (শাকিব) থানায় কেন যাবে? এসব করে কি বোঝাতে চায়, আমরা কি মরে গেছি? পুলিশ আসুক, দেখি কি করতে পারে। বাংলাদেশে কত পুলিশ আছে, আসুক। ওদের নিয়ে যাক দেখি। আগে আমরা গিয়ে দাঁড়াব। আগে আমাদের নিতে হবে, তারপর জায়েদ-সাইমনদের।’
শাকিবের উদ্দেশ্যে ফারুক বলেন, ‘শাকিবকে এখন বুঝতে হবে। সে নিজেকে রাজা ভাবলে তো হবে না। সে অনেক কিছু করতে পারত। সে ভুল পথে রয়েছে। সে ধ্বংসের পথে রয়েছে। সেখান থেকে তাকে বেরিয়ে আসতে হবে। অন্য মানুষ এসে কাউকে ধ্বংস করতে পারে না, ধ্বংস নিজে নিজেই হয়। আর পলিটিক্সে পড়ে হয়। যাদের সে আপন ভাবছে, তারাই তার শত্রু। তার কাছে গিয়ে ক্ষতি করছে। সে বুঝতে পারছে না।’
সবশেষে চলচ্চিত্রের ‘মিয়া ভাই’ খ্যাত এই অভিনেতা বলেন, ‘শাকিব তো আমাদের কাছে এসে বলতে পারত- ‘ভাইয়া আমাকে অপমান করেছে।’ সে দেখত আমরা তার কী ব্যবস্থা নিতাম। পরিচালক সমিতির সঙ্গে ও ঝামেলায় জড়িয়েছিল। আমরা কী সেটা মিটমাট করিনি। তবে এবার কেন সে আসতে পারল না। সে আমাদের কাছে আসেনি। কিছু জানায়নি। কারও সঙ্গে কোনো বোঝাপড়া না করে এসব করা উচিত হচ্ছে না শাকিবের।’
এনই/এলএ