ডুব ছবির চরিত্রটি আমাকে অনেক ভুগিয়েছে : রোকেয়া প্রাচী
চরম প্রতিকূলতার মধ্যেও মোস্তফা সরোয়ার ফারুকীর ডুব চলচ্চিত্রের কাজ এগিয়ে চলছে এর মাধ্যমে কি ‘ডুব’ চলচ্চিত্রের প্রচারণা হচ্ছে না? এমন প্রশ্নের উত্তরে রোকেয়া প্রাচী বলেন, ‘চলচ্চিত্রের জন্য কথা উঠলেই ভালো, সেটা যে ধরনের কথাই হোক না কেন। ‘ডুব’ চলচ্চিত্র করে আমার অনেক কষ্ট হয়েছে। এর চরিত্রটি আমাকে অনেক ভুগিয়েছে। কিছু চরিত্রের মধ্যে কান্না থাকে, কষ্ট, অপমান থাকে। আমি এই ছবির কাজ করতে গিয়ে পর্দার সামনে যেমন কেঁদেছি তেমন বাইরেও কেঁদেছি। কারণ অভিনয় করার সময় আমি চেষ্টা করি চরিত্রের ভেতরে নিজেকে মিশিয়ে নিতে। তখন চরিত্রের হাসিগুলোও আমার, কান্না-যাতনাগুলোও আমার।’
গতকাল বুধবার (২৯ মার্চ) বিকেল ৫টায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) রবীন্দ্র ভবনের ১২৩ নম্বর কক্ষে ম্যাজিক লণ্ঠন আয়োজিত চলচ্চিত্রবিষয়ক বক্তৃতা অনুষ্ঠানে প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। এই প্রশ্নের আগে তিনি ‘অভিনয় ও পেশাদারিত্ব’ শিরোনামে তার বক্তব্য উপস্থাপন করে।
‘ম্যাজিক লণ্ঠন কথামালা ৬’ নামের এই বক্তৃতানুষ্ঠানে রোকেয়া প্রাচী বলেন, ‘নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা হলে অভিনয় করব, অন্যথায় অভিনয় করব না; তাহলে সেটা পেশাদারিত্বের মধ্যে পড়ে না। আবার নতুন পরিচালক হলে দায়িত্ববোধে অবহেলা বা গুরুত্ব সহকারে কাজ না করার প্রবণতা অথচ অভিজ্ঞ বা খ্যাতনামা পরিচালক হলে আবার নিজেকে গুরুত্ব সহকারে উপস্থাপন করা, সেটাও পেশাদারিত্বের মধ্যে পড়ে না। পেশাদারিত্বে সর্বদা সততার পরিচয় দিতে হবে।’
অভিনয় ও পেশাদারিত্ব নিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘অভিনয়শিল্পীদের কাজ করার ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল, সৎ ও পরিশ্রমী হতে হবে। পেশাদারিত্ব শুধুমাত্র অভিনয় ক্ষেত্রেই নয় সব পেশার ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যে কাজই করেন না কেন আপনাকে সৎ হতে হবে।’
অভিনয়শিল্পী রোকেয়া প্রাচী বলেছেন, ‘ধূমপান করানো এবং এমন কোনো পোশাক পরানো, যেটা মনে করা হয় যে নতুনত্ব তৈরি করবে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সেই চরিত্র বা গল্প সমাজ ডিমান্ড করে না। এই জায়গায় অবশ্যই দায়িত্বশীল হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে শিল্পীদের। সুতরাং আমি এমন কোনো চরিত্র করতে পারি না যা আমার সমাজকে, প্রজন্মকে ভিন্ন কোনো বার্তা প্রদান করে। কারণ, একজন শিল্পী সমাজের প্রতিচ্ছবি হিসেবে কাজ করেন।’
রোকেয়া প্রাচী নিজের অভিনয়ের কথা স্মরণ করে বলেন, ‘মাটির ময়না চলচ্চিত্রে যখন অভিনয় করেছিলাম তখন অনেক কষ্ট হয়েছিল। আয়েশার চরিত্রের সাথে মিশে যাওয়ার কারণে আমার বন্ধুদের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হয়ে গিয়েছিল। আমি অনেক দিন ঘর থেকে বের হতে পারিনি। আমি যদি কোথাও অভিনয় করি তাহলে সেটা ভালো হবে না। আমাকে ওই চরিত্রে নিজেকে অনুভব করতে হবে।’
বাংলাদেশে অভিনয়শিল্পীদের পেশাদারিত্বে অভাব সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের অভিনয়শিল্পীরা এক সাথে অনেকগুলো চলচ্চিত্রে কাজ করেন। ফলে তাদের পক্ষে কোনো চরিত্রেই ঢোকা সম্ভব হয় না। আমি যদি চরিত্রের মধ্যে প্রবেশ করতে না পারি তাহলে দর্শকও ওই চরিত্রের মধ্যে ঢুকতে পারবে না।’
কথা উপস্থাপনার আগে রোকেয়া প্রাচীকে শুভেচ্ছা স্মারক প্রদান এবং শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন ম্যাজিক লণ্ঠনের সহকারী সম্পাদক যথাক্রমে মাহমুদ সেতু ও ইব্রাহীম খলিল।
চলচ্চিত্রবিষয়ক ষাণ্মাসিক গবেষণা জার্নাল ম্যাজিক লণ্ঠন-এর ১৩তম সংখ্যা, জুলাই ২০১৭ উপলক্ষে এ কথামালার আয়োজন করা হয়েছে। গণযোগাযোগ ও সংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী এবং ম্যাজিক লণ্ঠনের সদস্য অধরা মাধুরী পরমা ও হারুন উর রশীদ অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।
এসময় ম্যাজিক লণ্ঠন-এর সহকারী সম্পাদক কাজী মামুন হায়দার, নাট্যকলা বিভাগের অধ্যাপক আরিফ হায়দার, শহীদ সুখরঞ্জন ছাত্র-শিক্ষক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের পরিচালক টিএএম নুরুল মোদ্দাসের চৌধুরী, রাবি গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক আব্দুল্লাহীল বাকিসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরাি উপস্থিত ছিল।
প্রসঙ্গত, ম্যাজিক লণ্ঠন নামের এ সংগঠনটির যাত্রা শুরু করে ২০১১ সালে। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই জানুয়ারি ও জুলাই মাসে এ জার্নালটি নিয়মিত প্রকাশ হচ্ছে। এই জার্নালে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের লেখা চলচ্চিত্র, সংবাদপত্র, টেলিভিশন, নিউ মিডিয়া বিষয়ক প্রবন্ধ-নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকার প্রকাশ করা হয়ে থাকে। প্রতি রবিবারে চলচ্চিত্রবিষয়ক ও বুধবারে সাধারণ পাঠচক্র করা হয়। এছাড়া ম্যাজিক লণ্ঠন-এর প্রযোজনায় সংগঠনটির সদস্যরা নিয়মিত স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রও নির্মাণ করে থাকে।
রাশেদ রিন্টু/এলএ