তারকাখ্যাতি নয়, ভালো গান গাইতে চাই : অরিন
অরিনের পরিবারের সবাই গান করেন। সবাই বলতে সবাই-ই! বাবা মা, অরিনেরা তিন বোন- সবাই। চোখ মেলেই যে চারপাশে আবিষ্কার করেছে গানের পরিবেশ, সে আর কী করে গান না গেয়ে থাকে! তাই মাত্র সাড়ে তিন বছর বয়সে, যে বয়সে বাচ্চারা ঠিকঠাকমতো কথাও বলতে শেখে না, সেই বয়সেই গানে হাতেখড়ি অরিণের! গানের প্রথম পাঠ নিয়েছিলেন বড় বোন শারমিনা চৌধুরী তিনার কাছ থেকে। অরিনকে যখন গানে হাতেখড়ি দিলেন তখন বড়বোন তিনার বয়সও মাত্র দশ বছর!
জীবনের প্রথম শেখা গান, কী ছিল সেই গানটি? অতোটা ছোট বয়সে আর কোন গান শিখবেন, ছড়াগান ছাড়া! একটি প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার জন্য শিখেছিলেন ছড়াগানটি। জীবনে প্রথমবার মঞ্চে, মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড়ালেন এবং প্রথমবারই প্রথম!
তখনও স্কুলে যাওয়া শুরু করেননি অথচ মঞ্চে দাঁড়িয়ে গান গাইলেন কতোশত দর্শকের সামনে, একটুও ভয় লাগেনি? না, মোটেও ভয় লাগেনি অরিনের। ভয় পেলে কি আর কোনো কিছু জয় করা যায়! অরিনের লক্ষ্য যে বহুদূর।
লক্ষ্য ধরেই এগিয়ে গেছেন অরিন। চট্টগ্রাম সংগীত পরিষদ থেকে ক্লাসিক্যাল কোর্স সমাপ্ত করেছেন মাত্র ১৫ বছর বয়সে। তারপর মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য কিছুটা সময় বিরতি দিয়ে আবার ফিরে এসেছেন গানের ভুবনে। এরপর দশ বছর গান শিখেছেন সুরবন্ধু অশোক চৌধুরীর কাছে। বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে ঘর ভরেছেন পুরস্কারে।
গান নিয়ে বাংলাদেশে প্রথম রিয়েলিটি শো ক্লোজআপ ওয়ান -এর কথা মনে আছে নিশ্চয়ই? অরিন অংশ নিয়েছিলেন সেই প্রতিযোগিতায়। শুধু অরিন না, অংশ নিয়েছিলেন অরিনের বড় দুই বোনও। সবাইকে চমকে দিয়ে তিন বোনই একসঙ্গে ইয়েস কার্ড নিয়ে ঘরে ফিরলেন! পরিচিতজনদের কাছে এটি ছিল একটি বড় চমক। আর তাই তো সেই ২০০৫ সালে এলাকাবাসীর কাছ থেকেও পেয়েছিলেন সংবর্ধনা।
প্রথম রাউন্ডে ইয়েস কার্ড পেয়েছিলেন তিন বোনই। কিন্তু ঢাকায় আসার জন্য নির্বাচিত হলেন অরিন একা। মন তো খারাপ হয়েছিলই, সেইসঙ্গে কাজ করেছিল একরকম জেদও। একাকিত্বের সমর্থন বুঝি সবচেয়ে বড় সমর্থন! নয়তো দুই বোন পাশে ছিল না তবুও চল্লিশ হাজার প্রতিযোগীর মধ্য থেকে সেরা বিশে জায়গা করে নিলেন কী করে!
সেরা বিশ থেকে বাদ পড়েও মনোবল হারাননি অরিন। তিনি বিশ্বাস করেন, কেউ কারো কাজটা করে দিতে পারে না, যার কাজ তাকেই করতে হয়। ক্লোজআপ ওয়ান প্রতিযোগিতা তাকে একটি প্লাটফর্ম তৈরি করে দিয়েছে। সেই কৃতজ্ঞতা আর দায়িত্বশীলতা নিয়ে টিকে থাকার লড়াইটুকু করেছেন তিনি নিজেই।
নিজমনে কাজ করে গিয়েছেন। আচমকা তারকাখ্যাতির চেয়ে ভালো কাজ করে শ্রোতাদের মনে থেকে যাওয়াটাকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় তার কাছে। সেই একনিষ্ঠতার প্রতিদানও পেয়েছেন ইতিমধ্যেই। গেয়েছেন `এর বেশি ভালোবাসা যায় না`, `না বলা কথা`, `না বলা কথা-২`, `তোকে চাওয়া`, `আমার পরাণে`, `ঘুমের ঘোর`- এর মতো জনপ্রিয় গান।
গান গাইতে এসে কোনোরকম প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়নি অরিনকে। চারপাশে সহযোগিতার হাত পেয়েছেন বরাবরই। ব্যক্তিগত জীবনেও তিনি একজন সফল ও সুখী মানুষ। স্বামী এবং স্বামীর পরিবারের সবাই তার গানের ব্যাপারে সবসময়ই উৎসাহ দিয়ে থাকেন। তাই তো না পাওয়া বা অপ্রাপ্তির কোনো আক্ষেপ নেই অরিনের মনে। তবে সুযোগ পেলে গানের সীমানা ছাড়িয়ে নিজের দ্যুতি ছড়াতে চান আন্তর্জাতিক অঙনেও। সবচেয়ে বেশি যে জিনিসটি চান, তা হলো মানুষের ভালোবাসা। অসংখ্য মানুষের ভালোবাসা তো পেয়েই যাচ্ছেন, তবে? তবুও, ভালোবাসার আকাঙ্ক্ষা যে অসীম! অরিন বেঁচে থাক মানুষের ভালোবাসায়, অরিনের গান বেঁচে থাক মানুষের মুখে মুখে, প্রতিভাময়ী এই শিল্পীর জন্য এইটুকু আকাঙ্ক্ষা তো করাই যেতে পারে!
একনজরে অরিন
পুরোনাম: তাসমিনা চৌধুরি অরিন
ডাকনাম: অরিন
জন্ম: ২ ডিসেম্বর
বাবা: ডক্টর মুহাম্মদ আবুল কাশেম
মা: সৈয়দা নাসরিন আক্তার
প্রিয় মানুষ: মা ও বাবা
প্রিয় পোশাক: শাড়ি
প্রিয় রঙ: সাদা
প্রিয় খাবার: ফুচকা, মায়ের হাতের শুটকি ভর্তা
প্রিয় মুহূর্ত: ছেলেবেলায় একবার ওপার বাংলার বিখ্যাত কণ্ঠশিল্পী হৈমন্তি শুক্লার সঙ্গে ফোনে কথা বলার সুযোগ পেয়ে তাকে গান শুনিয়েছিলেন। অরিণের গান শুনে তিনি প্রশংসা করেছিলেন এবং গান নিয়ে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছিলেন। সেই মুহূর্তটিই জীবনের সবচেয়ে প্রিয় মুহূর্ত।
প্রিয় স্থান: সবুজে ঘেরা যে কোনো স্থান। গ্রাম-বাংলার প্রকৃতি
প্রিয় কাজ: গান শোনা
প্রিয় শখ: ছবি আঁকা, ঘুরে বেড়ানো। দেশের বাইরে থাইল্যান্ড, ভারত ও দুবাই ভ্রমণ করেছেন।
প্রিয় শিল্পী: শাহনাজ রহমাতুল্লাহ্, রুনা লায়লা, এন্ড্রু কিশোর, কুমার বিশ্বজিৎ, শ্রেয়া ঘোষাল, সনু নিগম।
এইচএন/পিআর