বাপ্পীর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণ হলো
চিত্রনায়ক বাপ্পি চৌধুরীর বিরুদ্ধে শিডিউল ফাঁসানোসহ নানা অভিযোগ এনেছিলেন পরিচালক তাজুল ইসলাম। এর উপযুক্ত বিচার চেয়ে চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতিতে চিঠিও পাঠিয়েছিলেন তিনি।
সেই চিঠির প্রেক্ষিতে পরিচালক সমিতির নেতারা গেল মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) পরিচালক সমিতিতে বাপ্পি ও তাজুলসহ সমিতির অন্যান্য সদস্যরা আলোচনায় বসেন। এতে বাপ্পির বিরুদ্ধে আনিত কোনো অভিযোগই প্রমাণিত হয়নি। উল্টো পরিচালক তাজুল ও প্রযোজক মিলন নিজেরাই কথা রাখেননি বলে প্রমাণ হয়।
তাজুল ইসলাম পরিচালক সমিতিতে অভিযোগ করেছিলেন, নবাগত রাফিয়া তিশার সঙ্গে কাজ করার সম্মতি দিয়ে ‘গোপন সংকেত’ ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হন বাপ্পী। এজন্য তিনি সাইনিং মানিও নেন। কিন্তু পরে তিনি নতুন নায়িকা তিশার সঙ্গে কাজ করতে চাননি।
কিন্তু পরিচালক সমিতিতে আলোচনা সভায় জমা দেওয়া বাপ্পীর কল রেকর্ডিং শুনে এ বিষয়টি মিথ্যে বলে প্রমাণিত হয়। বাপ্পী পরিচালককে শুরু থেকেই বলে আসছিলেন, তারকা কোনো নায়িকা ছাড়া এই ছবিতে কাজ করবেন না তিনি। তিনি মাহি অথবা পরীমনিকে নিতে বলেছিলেন। তিশাকে নিয়ে কাজ করার জন্য পরিচালক অনেক অনুরোধ করেন। কিন্তু বাপ্পী রাজি হননি।
পরবর্তীতে বাপ্পির সম্মতিতে তার বিপরীতে পিয়া বিপাশাকে নেয়া হয়। কিছু দিন পর বাপ্পি পিয়া বিপাশার ফিটনেস নিয়ে প্রশ্ন তুলে এবং সিনেমা থেকে তাকে বাদ দিতে বলেন। পরবর্তীতে বাদ দেয়া হয় পিয়া বিপাশাকেও। এমন অভিযোগ করেন তাজুল ইসলাম। কিন্তু এ বিষয়টিও মিথ্যে বলে প্রমাণিত হয়। এ বিষয়ে বাপ্পী কিছুই জানেন না বলে প্রমাণ হয়।
আলোচনা থেকে জানা যায়, রাজধানীর হোটেল লা মেরিডিয়ানে দেখা হয় পিয়া বিপাশা ও প্রযোজক মিলনের। তারপর হুট করেই পিয়া বিপাশাকে বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন প্রযোজক। সেখানে প্রযোজকের সঙ্গে পিয়ার কি কথা হয়েছিল তার কিছুই জানেন না বাপ্পী। আলোচনায় উপস্থাপিত বাপ্পির কল রেকর্ডিং থেকে এ তথ্য পাওয়া যায়।
এরপর নবাগত নায়িকা আলভিরা ইমুকে নিয়ে ছবিটির কাজ শুরু হয়। এতে বাপ্পী একদিন শুটিংও করেন। তারপর শুটিংয়ে শিডিউল নিয়ে জটিলতা শুরু হয়। শিডিউল দিয়ে নানা অজুহাত দেখিয়ে শুটিং সেটে আসেননি বাপ্পী এমন অভিযোগ করেন তাজুল। তাই পরিচালক বাপ্পীর বিরুদ্ধে পরিচালক সমিতিতে লিখিত অভিযোগ দেন।
কিন্তু বাপ্পী আলোচনায় বলেন, ‘আমি আগেই বলেছিলাম নতুন নায়িকার সঙ্গে কাজ করবো না। পিয়াকে বাদ দেয়ার পর পরিচালক বলেছিলেন তারকা কোনো নায়িকাই নেয়া হবে। আমিও সাইনিং মানি নেয়ার দায়বদ্ধতা থেকে শুটিংয়ে যাই। তখন সেখানে গিয়ে জানতে পারি ছবির নায়িকা আলভিরা ইমু। তাই আর কাজ করিনি। পরিচালক ও প্র প্রযোজক আমার সঙ্গে দেয়া কথা রাখেননি।’
আলোচনায় উপলব্দি হয়, নায়ক বাপ্পী নবাগত ইমুর সঙ্গে কাজ করবেন না। অন্যদিকে পরিচালকও ইমুকে বাদ দিয়ে কাজ করবেন না। এ নিয়েই মূলত শিডিউল ফাঁসানোর ঝামেলার শুরু।
পরিচালক সমিতির মহাসচিব বদিউল আলম খোকন জানান, সব বিষয়ে আলোচনা শেষে পরিচালক সমিতির সভাপতি ও মহাসচিবসহ অন্যান্য সদস্যরা সিদ্ধান্ত নেন বাপ্পী এই ছবির জন্য নেয়া তার সাইনিং মানি ফেরত দেবেন। আগামী ৩০ মার্চ তিনি টাকাটা ফেরত দেবেন। বাপ্পীও আলোচনা কমিটির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে টাকা ফেরত দিতে রাজি হন।
অন্যদিকে একদিনের শুটিংয়ে প্রযোজক কিছু টাকা খরচ করেছেন তাই মানবিক কারণে তাকে কোনো জরিমানা করা হয়নি। তবে ভবিষ্যতে নায়ক-নায়িকার প্রতি সুষ্পষ্ট প্রমাণ ছাড়া ব্যক্তিগত আক্রোশে অভিযোগ আনা ও গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ ছাড়ার ব্যাপারে পরিচালক তাজুল ইসলাম ও প্রযোজক মিলনকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন।
এ বিষয় নিয়ে চিত্রনায়ক বাপ্পী জাগো নিউজকে বলেন, ‘পরিচালক সমিতির নেতৃবৃন্দ আমার অভিভাবকের মতো। তারা সবকিছু শুনে উপলব্দি করেছেন আমার কোনো দোষ নেই। আপনারাও সবাই জেনেছেন যে আমার উপর আনীত অভিযোগ সত্যি নয়- এতেই আমি খুশি। সাইনিং মানি ফেরত দিতে আমার আপত্তি নেই। উনাদের টাকা উনারা ফেরত নিয়ে যাবে সমস্যা কী। তবে অকারণে এই ছবিটির জন্য আমি মূল্যবান যে সময়টা নষ্ট করেছি সেটাই বৃথা গেল।’
তিনি আরও বলেন, ‘যা হয়েছে সবটুকুই অহেতুক এবং অকারণে। এতকিছুর কোনো প্রয়োজন ছিলো না। কেননা, আমি প্রথম থেকেই বলে আসছিলাম যে নতুন কোনো নায়িকার সঙ্গে এই ছবিতে কাজ করব না। এরপরও তারা আমাকে নানাভাবে বুঝানোর চেষ্টা করেন। রাজি হচ্ছি না বলে তারা আমাকে নবাগত নায়িকার সঙ্গে হোটেলে সময় কাটাতেও বলেন। তার সঙ্গে আলাপ-পরিচয়ে ফ্রি হতে বলেন। আমি এমন প্রস্তাবে রাজি হইনি। এছাড়াও আরো অনেক কথা রয়েছে যা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ করতে চাই না।’
এদিকে এই অভিযোগ অস্বীকার করে পরিচালক তাজুল ইসলাম বলেন, ‘বাপ্পী যা বলেছে মিথ্যে। নায়িকার সঙ্গে ওকে সময় কাটাতে বলা হয়নি। পরিকল্পনা ছিলো নায়িকার সঙ্গে আমরা সবাই মিলে আলোচনায় বসবো।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি আর এই ব্যাপারে কোনো কথা বলতে চাই না। পরিচালক সমিতি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা আমি মেনে নিয়েছি। বাপ্পীও মেনে নিয়েছে। আগামী এক মাসের মধ্যে পাঁচ লাখ টাকা ফেরত দিচ্ছেন বাপ্পী। আমিও ছবিটি ঝুলিয়ে রাখব না। অন্য কোনো নায়ককে নিয়ে নতুন নায়িকা দিয়েই ছবিটি শেষ করবো।’
এলএ