‘আলমগীর কুমকুমের জন্যই আমি নায়ক আলমগীর’
চলচ্চিত্র নির্মাতা আলমগীর কুমকুমের পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী আজ (২৭ ফেব্রুয়ারি)। এ উপলক্ষে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি সোমবার দুপুরে এফডিসির ফজলুল হক মিলনায়তনে এক স্মরণ সভার আয়োজন করে। সেখানে ঢাকাই ছবির অনেক গুণী নির্মাতার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন একসময়ের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক আলমগীর।
চলচ্চিত্র নির্মাতা আলমগীর কুমকুমকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে নায়ক আলমগীর আবেগে যেন ভেসে গেলেন। তিনি বলেন, ‘কুমকুম ভাই আমাকে চলচ্চিত্রে এনেছিলেন। কেন এনেছিলেন, আমার মধ্যে কি এমন পেয়েছিলেন, সেটা আমি আজও জানিনা। তবে এতটুকুই জানি তার জন্যই আমি আজ নায়ক আলমগীর।’
চলচ্চিত্রে প্রতিষ্ঠার পেছনে সবটুকু অবদান চলচ্চিত্র নির্মাতার কুমকুমের; একথা স্বীকার করে আলমগীর বলেন, ‘একবার ফার্মগেটের একটি স্টুডিওতে তিনি আমার ছবি দেখে অফার করলেন ফিল্মে কাজ করার। আমি তখন উনার দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থেকে চলে যাই। কিছুদিন পর আমাদের তেজগাও’র বাড়িটি উনি ভাড়া নিতে এসেছিলেন। জানতে পারি বাড়িটি ফিল্মের অফিস হবে। আমরা উনাকে বাড়ি ভাড়া দেইনি। তারপর উনি যাওয়ার সময় আমি ছবি করবো কিনা আবার জিজ্ঞেস করেছিলেন! যদি ছবিতে কাজ করি তবে এক সপ্তাহের মধ্যে উনার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেছিলেন।’
নয়বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত এই অভিনেতা বলেন, ‘এরপর বাড়িতে বড় বোন আর দুলাভাইয়ের সঙ্গে আলাপ করি। তারা বলেছিলেন, ওকে, ছবিটিতে কাজ করো। যেহেতু মুক্তিযুদ্ধের ছবি; ইতিহাস হয়ে থাকবে! তবে এই একটা ছবিতেই কাজ করো। তারপর তার সঙ্গে যোগাযোগ করি। তার সঙ্গে দেখা হলো, আরও দু’চারজন ছিলেন। তারা জানিয়েছিলেন, আমার কথা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আঞ্চলিক টান আছে। শুদ্ধ করে কথা বলা শিখতে হবে। আমাকে বলেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বিদায় অভিশাপ’ পড়তে। আমি পুরোটা না পড়লেও অল্প কিছুদিনে তিন-চারপাতা মুখস্ত করে আবার দেখা করি তার সাথে। তারপর উনি হেসে বলেছিলেন- আমাকে দিয়েই হবে! আমি কাজ করলাম ‘আমার জন্মভূমি’ ছবিতে।’
স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আলমগীর বলেন, ‘প্রথমবার আউটডোরে গিয়েছিলাম কুমিল্লায়, ‘আমার জন্মভূমি’ ছবিতে কাজের জন্য। তখন আমাদের সাথে ছিলেন রাজ্জাক সাহেব, কবরী। তখন রাতে শুটিং ইউনিটে শোয়ার জায়গা পাইনি। কুমকুম ভাই আমাকে বারান্দায় খড়ের উপর বিছানা পেতে ঘুমাতে বলেছিলেন। পরে কবরী জিজ্ঞেস করেছিলেন, কেন আমাকে বারান্দায় রাখা হয়েছিল। কুমকুম ভাই বলেছিলেন, যদি এই কষ্ট সহ্য সে করতে পারে, তবে ফিল্মে টিকবে। নয়তো সে ফিরে যাক।’
যোগ করে আলগীর বলেন, ‘কুমকুম ভাইয়ের সঙ্গে দেখা না হলে আমি হয়তো আলু-পটলের ব্যবসায়ী হতাম, ফিল্মে আসা হতো না। আমি প্রকৃত মানুষ হওয়ার রাস্তা পেয়েছি তার নির্দেশনা পেয়ে। আজ এই মানুষটি আর আমাদের মাঝে বেঁচে নেই। আমি সবসময় তাকে মন থেকে স্মরণ করি, তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করি।’
আলমগীর কুমকুমের মৃত্যুবার্ষিকীতে স্মরণ সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন চলচ্চিত্র নির্মাতা দেলোয়ার জাহান ঝন্টু, মুশফিকুর রহমান গুলজার, বদিউল আলম খোকন, সোহানুর রহমান সোহান, শাহীন সুমন, আলগীর কুমকুমের পুত্র মোহাম্মদ রনি ছাড়াও অনেকে। এসময় প্রত্যেকেই চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির এই প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন ও তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন।
আলমগীর কুমকুম ১৯৬৮ সালে তার মামা পরিচালক ইআর খানের সহকারী হিসেবে চলচ্চিত্রে প্রবেশ করেন। সহকারী পরিচালক হিসেবে তার প্রথম চলচ্চিত্র ‘চেনা অচেনা’। এরপর তিনি ‘রূপবানের রূপকথা’ এবং ‘মধুবালা’ চলচ্চিত্রে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেন।
১৯৬৯ সালে আলমগীর কুমকুম চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। তার নির্মিত চলচ্চিত্রসমূহের মধ্যে ‘স্মৃতিটুক থাক’, ‘আমার জন্মভূমি’, ‘গুন্ডা’, ‘মায়ের দোয়া’ অন্যতম। আলমগীর কুমকুম নির্মিত সর্বশেষ ছায়াছবি ‘জীবন চাবি’।
তিনি দীর্ঘ দিন ডায়াবেটিস ও কিডনির সমস্যায় ভুগে ২০১২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন। তাকে বনানী কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়।
এনই/এলএ