ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিনোদন

ডুব নিয়ে হুমায়ূনের দুই পরিবারেরই আপত্তি আছে : শাওন

প্রকাশিত: ১১:১৬ এএম, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের পর বাংলা সাহিত্যে তার মতো জনপ্রিয় লেখক আর আসেননি। চলে যাওয়ার চার বছর পেরিয়ে এখনো তার বই ঘিরেই জমে উঠছে বইমেলা ও সাহিত্যের বাজার। গল্প-উপন্যাস কিংবা নাটক-চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য; যেখানেই হাত দিয়েছেন সোনা ফলেছে। পাঠক, দর্শক আগ্রহভরে উপভোগ করেছেন সব। স্বভাবতই সাহিত্য বোদ্ধারা তাকে বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠত্বের আসনে বসিয়েছিলেন। আর ভক্তদের অন্তরে তিনি বাংলা সাহিত্যের বাদশাহ! ক্যামেরার পেছনে নির্মাতা হিসেবেও তিনি বাজিমাত করে গেছেন। বলছি প্রয়াত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের কথা।

সম্প্রতি যৌথ প্রযোজনায় মোস্তফা সরয়ার ফারুকী নির্মিত ‘ডুব’ নামের একটি চলচ্চিত্রকে ঘিরে জড়িয়েছে এ নন্দিত লেখকের নাম। বাংলাদেশ ও ভারতের গণমাধ্যমে উঠে এসেছে এই ছবিটি নির্মিত হয়েছে হুমায়ূন আহমেদের জীবনের কিছু অংশকে উপজীব্য করে। হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে লেখা বই, গান ও তাকে নিয়ে নির্মিত অনুষ্ঠানগুলোর মতো এই ছবিটিও হতে পারতো হুমায়ূন ভক্তদের জন্য দারুণ আগ্রহের বিষয়। কিন্তু হুমায়ূন আহমেদের পরিবারের ঘোর আপত্তির কারণে উল্টো ছবিটি পড়েছে সমালোচনার মুখে। সেই সঙ্গে তথ্য মন্ত্রণালয় থেকেও মুক্তির অনুমতি পাওয়া নিয়ে বিপাকে রয়েছে ‘ডুব’।

শুরু থেকেই ছবিটির গল্প ও ভাবনা নিয়ে লুকোচুরি খেলেছেন নির্মাতা ফারুকী ও প্রযোজনা কর্তৃপক্ষ। পরে ভারতের কিছু গণমাধ্যমের বরাতে প্রকাশ হয় ছবিটি হুমায়ূনকে কেন্দ্র করেই। ছবির অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচীও এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ছবিটি হুমায়ূনের জীবনেরই অংশ। আরেক অভিনেত্রী পার্নো মিত্রও এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে স্বীকার করেছেন ছবিটিতে তিনি শাওন চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এসব তথ্য থেকে জানা যায়, বলিউড অভিনেতা ইরফান খান হুমায়ূন আহমেদের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। তার স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন চরিত্রে দেখা যাবে কলকাতার অভিনেত্রী পার্নো মিত্রকে। রোকেয়া প্রাচী আছেন লেখকের প্রথম স্ত্রী রোকেয়া প্রাচীর ভূমিকায়। তবে ফারুকী বারবার বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন এবং অস্বীকার করেছেন।

ছবিটির শুটিং শেষ করে যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত ছবির অনুমতির জন্য ‘ডুব’ জমা পড়ে প্রিভিউ কমিটিতে। সেখানে ছবিটি প্রদর্শিত হলে অনাপত্তি পত্রও পায়। কিন্তু হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন ছবিটিতে হুমায়ূন আহমেদের জীবনী আছে কি না সেটি খতিয়ে দেখতে চিঠি দেন তথ্য মন্ত্রণালয় ও সেন্সর বোর্ডে। সেই চিঠির জের ধরে বাতিল করা হয় ‘ডুব’র অনাপত্তি পত্র। এ নিয়ে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা।

এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে আজ রোববার (১৯ ফেব্রুয়ারি) ধানমন্ডিতে অবস্থিত হুমায়ূন আহমেদের বাসভবন ‘দখিন হাওয়ায়’ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন শাওন। সেখানে তিনি বিভিন্ন রিপোর্ট ও তথ্য তুলে ধরেন গণমাধ্যমের সামনে। সেই সঙ্গে দাবি করেন, “কোনো আক্রোশ বা বিরোধ থেকে নয়, হুমায়ূন আহমেদের একজন ভক্ত এবং তার স্ত্রী হিসেবে হুমায়ূনকে হেয় করার আশংকা থেকেই আমি চিঠি পাঠিয়েছি সেন্সর বোর্ডের কাছে। তারা সেটি বিবেচনা করেছেন কি না আমাকে জানানো হয়নি চিঠির জবাবে। তবে পত্রিকার রিপোর্ট থেকেই জেনেছি ‘ডুব’কে মুক্তির অনাপত্তি পত্র দেয়া হয়নি।”

তিনি আরো বলেন, ‘ছবিটি আমি দেখিনি। তাই এ নিয়ে কোনো অভিযোগও করতে পারি না। একজন নির্মাতা হিসেবেও আমিও বুছি ছবি নির্মাণের পর সেটি আটকে যাওয়া কতো বড় বেদনার। তাই আমি কখনোই ‘ডুব’ আটকে যাবার কথা বলিনি কোথাও। আমি কেবল অনুরোধ জানিয়েছি যদি ছবিটিতে হুমায়ূন আহমেদের জীবন বা জীবনের ছায়া থাকে তবে সেটুকু যেন সরিয়ে দেয়া হয়। নানা তথ্যসূত্রে আমি আশংকা করেছি ছবিটিতে হুমায়ূন আহমেদকে আপত্তিকরভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। স্ত্রী হিসেবে আমার স্বামীকে নোংরাভাবে উপস্থাপন না করতে অনুরোধ জানানোর অধিকার আমার রয়েছে। যে কেউ হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে ছবি বানাতেক পারেন। কিন্তু তার জন্য প্রয়োজন গবেষণা, পরিবারের সদস্যদের অনুমতি। এর কিছুই করেননি নির্মাতা। তবে কেমন করে তিনি মনগড়া হুমায়ূন আহমেদকে চলচ্চিত্রে হাজির করবেন? তা কোন দেশের দর্শকের জন্য? এই দেশের দর্শক হুমায়ূন আহমেদকে হেয় করে নির্মিত ছবি মেনে নেবে না।’

সম্মেলনের এক পর্যায়ে সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাব দেন শাওন। হুমায়ূন আহমেদের আরো একটি পরিবার ও ভাই-বোন রয়েছেন। তাদের পক্ষ থেকে ‘ডুব’ ছবির বিষয়ে কোনো আপত্তি বা মন্তব্য আছে কি না জানতে চাইলে শাওন বলেন, ‘হুমায়ূন আহমেদের দুটি পরিবারের পক্ষ থেকেই ঘোর আপত্তি এই ছবির ব্যাপারে। হুমায়ূন আহমেদের দুই ভাইয়ের সঙ্গেও আমার আলাপ হয়েছে এই বিষয়ে। আজকের যে সংবাদ সম্মেলন তার সঙ্গে একাত্ম আছেন তারাও। আপনারা চাইলে আহসান হাবীব সাহেবের মন্তব্য নিতে পারেন। এই জগতে কেউই চায় না তার প্রিয় মানুষটিকে, প্রিয় ভাইকে আপত্তিকরভাবে মানুষের সামনে তুলে ধরতে।’

এসময় তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘আন্তর্জাতিকভাবে ছবিটি মুক্তি দেয়া হলে হুমায়ূন আহমেদের পরিবার থেকে চেষ্টা করা হবে আইনি লড়াইয়ে যেতে।’

এলএ

আরও পড়ুন