হায় ফরীদি, হায় একুশে পদক!
প্রয়াত অভিনেতা হুমায়ূন ফরীদির ষাটতম জন্মদিন ছিলো ২০১২ সালের ২৯ মে। সেবার সংস্কৃতি জোটের পক্ষ থেকে মহা আয়োজনে পালন করা হয়েছিলো অভিনেতার ‘বালাই ষাট’ জন্মদিন। ছায়ানটে অনুষ্ঠিত সেই অনু্ষ্ঠানে হাজির হয়েছিলেন অভিনয়ে নানা প্রজন্মের তারকারা।
তাকে নিয়ে সেদিন ‘মিতা’ শিরোনামে জাতীয় দৈনিকে একটি কলাম লিখেছিলেন জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ। সেখানে তিনি রাজনীতিবিদ হুমায়ূন রশীদ চৌধুরী, দৈনিক বাংলার সম্পাদক আহমেদ হুমায়ূন, অধ্যাপক ও কবি হুমায়ূন আজাদ, অভিনেতা হুমায়ূন ফরীদি এবং নিজেকেসহ পঞ্চ হুমায়ূনের গল্প শুনিয়েছিলেন।
শেষের দিকে আক্ষেপ করে বলেছিলেন, ‘আচ্ছা, এই মানুষটি কি অভিনয়কলায় একটি একুশে পদক পেতে পারেন না? এই সম্মান কি তার প্রাপ্য না? (যে পাঁচ হুমায়ূনের নাম করা হলো তাদের মধ্যে ফরীদি ছাড়া বাকি সবাই একুশে পদক পাওয়া।)’
একে একে চলে গেলেন পঞ্চ হুমায়ূনের সব হুমায়ূন। ফরীদি চলে গেলেন পর পাঁচ বছর কেটে গেল। তবু এতদিনেও ফরিদীকে একুশে পদক দেয়ার কোনো রকম প্রবণতা বা পরিকল্পনা দেখা গেলনা রাষ্ট্রের কাছ থেকে।
একজন নিঃসঙ্গ সারথি, একজন নীলকন্ঠী, আমাদের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা আমাদের হুমায়ুন ফরীদি। এখন শুধু কাগজ-কলমে, সেলুলয়েডে আর স্থির চিত্রে বন্দী তিনি। ছোট দেশের কত বড় মাপের শিল্পি ফরীদি সেটা অনুধাবন করতে পারেনি রাষ্ট্র। নিঃসন্দেহে এটা ব্যর্থতার- এমনই আবেগ মাখা অভিমান রাষ্ট্রের প্রতি হুমায়ূন ফরীদির কাছের মানুষ ও ভক্তদের। শুধু তাই নয়, এবারে যেন ফরীদিকে একুশে পদক দিয়ে যথাযোগ্য সম্মান দেয়া হয় তাই দেশের নানা প্রান্তে থাকা ভক্তরা চালিয়েছেন গণস্বাক্ষর অভিযান। রাজধানীর টিএসসিসহ নানা স্থানে স্বাক্ষর কর্মসূচি হয়েছে।
কিন্তু ফরীদিকে বাদ দিয়েই ঘোষিত হয়েছে এবারের একুশে পদক জয়ীদের তালিকা। তাই ‘হায় ফরীদি হায় একুশে পদক’ নামের আফসোস থেকেই গেল ভক্তদের। অসুন্দর থেকে গেল পঞ্চ হুমায়ূনের মুকুট।
আজ আর কোনো হুমায়ূনই বেঁচে নেই। পাঁচজনের কবরও ভিন্ন ভিন্ন জায়গায়। তবু পাঁচজনই এখন একই ভুবনের বাসিন্দা। সেখানে তারা কেমন আছেন তা আমাদের অজানা। তবে এক হুমায়ূনের একুশে পদক না পাওয়াটা হয়তো অন্য চার হুমায়ূনকে বিব্রত করে। ব্যাথিত করে।
অবশ্য ফরিদী ভক্তরা দাবি করেন- ‘পদক তার সৃষ্টিকে কোনোভাবেই মূল্যায়নের মাপকাঠি হয়ে উঠবে না। হুমায়ুন ফরীদির মতো শক্তিমান অভিনেতা একুশে পদক পেলে, একুশে পদক নিজেই ধন্য হত।’
তাছাড়া হুমায়ূন ফরীদির মতো সফল মানুষদের জীবন ও কর্মকে সবার কাছে স্মরণীয় করে রাখতে এবং অভিনয়ের আঙিনায় তার অবদানের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে তাকে এই সম্মান ও স্বীকৃতিতে ভূষিত করা যেতেই পারে। শুধু ফরীদিই নন, আরও অনেকেই আছেন যারা আমৃত্যু কাজ করে গেছেন রাষ্ট্রকে বিকশিত করতে, করে চলেছেন অবিরাম; কিন্তু একুশে পদকের মতো স্বীকৃতি জুটেনি। রাষ্ট্র বা একুশে পদক সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কী সময় হবে সেইসব মানুষদের নিয়ে বিবেচনা করবার? আমরা তো শিখে এসেছি- মানুষ যাকে ভালোবেসেছে সেই সর্বজয়ী। সেই সমাজ ও দেশের অহংকার।
এলএ