শেষ হচ্ছে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির বর্তমান কমিটির মেয়াদ
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির দ্বিবার্ষিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৫ সালের ৩০ জানুয়ারি। সেখানে সভাপতি নির্বাচিত হন শাকিব খান ও সাধারণ সম্পাদক হন অমিত হাসান। একই নির্বাচনে চিত্রনায়ক ওমর সানীসহ সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন।
তারা শিল্পী সমিতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি। সে অনুযায়ী আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার) শেষ হচ্ছে বর্তমান কমিটির মেয়াদ। তার মানে দিন বাকী কেবল আগামীকাল সোমবার। নিয়ম অনুযায়ী নির্বাচিত কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার নব্বই দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এই নির্বাচনে নির্বাচিত কমিটি নতুন করে দায়িত্ব নেবে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির।
তবে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নতুন করে নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন কমিটি না আসা পর্যন্ত শিল্পী সমিতির দায়িত্ব পুরনো কমিটির কাছেই বহাল থাকবে। অর্থাৎ স্বপদে বহাল থাকবেন শাকিব-অমিত ও ওমর সানীরা। তারাই শিল্পী সমিতির সকল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কিছুটা মৃদু হাসি দিয়েই বর্তমান কমিটির সাধারন সম্পাদক অমিত হাসান জাগো নিউজকে বলেন, ‘হঠাৎ করে লক্ষ করছি শিল্পী সমিতির নির্বাচন নিয়ে গণমাধ্যম একটু বেশিই কৌতুহলী হয়ে উঠেছে। আজকাল প্রচুর কল পাই সাংবাদিকদের কাছ থেকে এই নির্বাচন নিয়ে। এর আগে কখনো এমনটি দেখিনি। কেউ কেউ তো মনে হয় কিছু বিশেষ শিল্পীদের প্রচারণাও করছেন।’
গেল দুই বছরে অনেক সাফল্যের পাশাপাশি নানারকম সমালোচনার জন্মও দিয়েছে শিল্পী সমিতি। তারমধ্যে অন্যতম প্রতারণায় ভরপুর যৌথ প্রযোজনার ছবিতে সমিতির নেতাদের অভিনয় করা, সহযোগিতা দেয়া। আছে সভাপতি হিসেবে সুপার ফ্লপ হওয়া শাকিবের বিরুদ্ধে সমিতি ও শিল্পীদের বিষয়ে উদাসীনতার অনেক অভিযোগ। তবে সমিতির হয়ে সাধারন সম্পাদক অমিত হাসানের বক্তব্য, ‘দুই বছরের জন্য আমরা সমিতির দায়িত্বে ছিলাম। চেষ্টা করেছি নিজেদের সর্বোচ্চ দিয়ে চলচ্চিত্রের শিল্পী তথা চলচ্চিত্রের সার্বিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে। কতোটা করতে পেরেছি তার সাক্ষী দেবেন শিল্পীরা, আপনারা (গণমাধ্যম)।’
তিনি আরো বলেন, ‘কাগজে কলমে পরশুদিন (মঙ্গলবার) আমাদের কমিটির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। তবে আগামী নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত আমরা দায়িত্ব পালন করবো। আর গঠনতন্ত্রের নিয়ম অনুযায়ী এই কমিটি নির্বাচন তত্ত্বাবধানের জন্য নির্বাচন কমিশন গঠন করে তাদের হাতে নির্বাচনের সকল দায়িত্ব অর্পণ করবে। দেশের পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে এবং কোনো রকম নেতিবাচক প্রতিবন্ধকতা না থাকলে আগামী নব্বই দিনের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’
একসময়ের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক অমিত হাসান আরো বলেন, ‘আজ আমরা বিশেষ প্রয়োজনে একটি মিটিং করবো। সেখানে সভাপতি শাকিব খানও উপস্থিত থাকবেন। এই মিটিং থেকেও বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হবে নির্বাচনের ব্যাপারে। তবে আজকের মিটিংয়ের মূল বিষয় ভিন্ন।’
এদিকে বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হচ্ছে জেনে শিল্পী সমিতির নির্বাচনের লেগেছে নতুন হাওয়া। সবাই আঙুলে দিন গুনতে শুরু করেছেন নব্বই দিনের। সেইসঙ্গে অপেক্ষায় আছেন কবে আসবে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা।
এই প্রসঙ্গে আগামী নির্বাচনে মিশা-জায়েদ প্যানেলে সাধারন সম্পাদক প্রার্থী চিত্রনায়ক জায়েদ খান জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিদায়ী কমিটিকে শুভেচ্ছা। মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হচ্ছে বর্তমান কমিটির দায়িত্ব পালনের মেয়াদ। আশা করছি আগামী নব্বই দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং যোগ্য প্রার্থীরাই কমিটির দায়িত্ব পালনের জন্য নির্বাচিত হবেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমার মনে হয় আজ-কালের মধ্যেই ঘোষণা আসবে কবে হবে নির্বাচন, কেমন হবে নির্বাচন কমিশন।’
পাশাপাশি নিজের প্যানেলের জয় নিয়েও প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন জায়েদ খান। তার প্যানেলে এরইমধ্যে যোগ দিয়েছেন সোহেল রানা, আলমগীর, এটিএম শামসুজ্জামান, রিয়াজ, পূর্ণিমা, পপি, বাপ্পারাজ, রুবেল, অঞ্জনা, নূতন, প্রবীর মিত্র, রোজিনা, ওয়াসিম, ডিপজলসহ অসংখ্য তারকারা।
অন্যদিকে সভাপতি হয়ে আরেক প্যানেল থেকে নির্বাচনে লড়াই করতে যাচ্ছেন বর্তমান কমিটির সহ সভাপতি চিত্রনায়ক ওমর সানী। আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না আসলেও এখন পর্যন্ত শোনা যাচ্ছে তার প্যানেলে সাধারন সম্পাদক থাকছেন ইলিয়াস কোবরা, সহ সভাপতি হিসেবে নির্বাচনে আসবেন ফেরদৌস। আর চিত্রনায়িকা শাবনূরকে দেখা যেতে পারে বিশেষ কোনো পদের প্রার্থি হিসেবে।
সবমিলিয়ে এবারের শিল্পী সমিতির নির্বাচন বেশ জমজমাট হবে বলেই প্রত্যাশা চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের। সেইসঙ্গে নির্বাচনের রায়ে যোগ্য লোকদের হাতেই শিল্পীদের দায়িত্ব বর্তাবে বলেও আশাবাদী তারা।
এলএ