চলচ্চিত্রে শাহরুখ খানের ২২ বছর
কালো, অগোছালো, রোগা, সড়কছাপ- হিরোরা আবার এমন হয় না কি? শুনতে খুব খারাপ লাগলেও এটাই তো সত্যি- সেই ১৯৯২ সালে যেমন, এখনও তেমন!
কাজেই দিওয়ানা ছবির পর্দায় ওই ১৯৯২-তেই যখন শাহরুখ খান নামের সাতাশ বছরের ছোকরাটি হাজির হয়েছিল, অনেকেই নাক-মুখ কুঁচকে একসা হয়েছিলেন। ছবিতেও যেমনটা হয়েছিলেন নায়িকা দিব্যা ভারতী।
তার পর অবশ্য দিব্যার মতোই ধীরে ধীরে দর্শকও মেনে নিতে বাধ্য হলেন ছেলেটির জুনুন। সব্বাই এক বাক্যে সায়ও দিলেন, ‘অ্যায়সি দিবানগি/দেখি নেহি কাহিঁ\\\\\\\\`!
সেই দিবানগির জের এখনও ভরপুর ছেয়ে রয়েছে বলিউডের রুপোলি পর্দা। সেই ১৯৯২ থেকে আজ পর্যন্ত ২২ বছর পার হয়ে একটুও নড়চড় হয়নি তার!
কিন্তু কী এমন ছিল সেই নতুন খানের মধ্যে? যার সম্মোহনে এতগুলো বছর কাটিয়ে দিলেন দর্শক?
১৯৯২ সময়টার মধ্যে দিয়ে যাঁরা বড় হয়েছেন, যাঁরা তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করেছেন সেই সময়ের হিন্দি সেলুলয়েড, তাঁরা সব্বাই মেনে নেবেন যে, দিওয়ানা একটা বিপ্লবের চেয়ে কম কিছু ছিল না। যে কোনও সময়েই চলতি হাওয়াকে ওলোট-পালট করে দেয় যা, তা-ই তো বিপ্লব। তা, শাহরুখের মতো সুপুরুষ এবং সু-অভিনেতার পক্ষে ভক্তসংখ্যা বাড়ানো এমন কিছু কঠিন ছিল কি? তাছাড়া, ছবিতে ঋষি কপূরের অকালমৃত্যু যে তাঁকে চিত্রনাট্যের দিক থেকে যথেষ্ট সুবিধে দিয়েছিল, সেও তো নির্জলা সত্যি!
তাহলে? কেন একটি নায়কের জন্ম নিয়ে এমন মাতামাতি?
আসলে নব্বইয়ের দশকে পৌরুষ, সৌন্দর্য আর নায়ক- এই তিনটে জিনিসের সংজ্ঞাই ছিল খুব আলাদা। বলিউডে নামের পরে ‘খান\\\\\\\\` শব্দটা থাকলে কিছু বাড়তি সুবিধে জুটে যেত ঠিকই, তবে সেটুকু শাহরুখকে কতটা সাহায্য করেছিল- তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যেতেই পারে। ‘খান\\\\\\\\` মানে তো তখন সুদর্শন আমির অথবা সুপুরুষ সলমন! স্যাফ আলিও তখন ‘খান\\\\\\\\` হয়েও বাতিলের দলে। আর পায়ে পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন অন্যান্য যে নায়কেরা, সেই কমল সদানা-বিবেক মুশরান-রাহুল রায়রাও প্রথা মেনে হ্যান্ডসাম।
সে-ই জায়গা থেকে শাহরুখের সম্বল বলতে ছিল কেবল তীব্র জেহাদ। সব প্রচলিত ঘরানাকে ভেঙেচুরে তছনছ করার দিবানগি। উদ্দাম স্রোতের যে টান থাকে, ঠিক সেটাই ছিল এই খানের চুম্বকশক্তি। বাকিটুকু অভিনয়, প্রতিভা আর এন্টারটেনমেন্ট, এন্টারটেনমেন্ট এবং শুধুই এন্টারটেনমেন্ট।
ছবির চিত্রনাট্যও যেন ছিল ঠিক শাহরুখের সেই সময়ের অবস্থার মতোই। নব্বইয়ের অন্যান্য ছবিতে যেখানে নায়িকারা চুটিয়ে প্রেম করছেন নায়কদের সঙ্গে, তাঁদের যথেষ্ট পাত্তা দিচ্ছেন এবং নিচ্ছেন, সেখানে শাহরুখকে জয় করে নিতে হচ্ছে এক দুর্লভ সুন্দরী রমণীর মন। এই ব্যাপারটা সম্ভবত ভালই আকৃষ্ট করে থাকবে নায়কের ভক্তদের। বসুন্ধরা যে আদতে বীরভোগ্যাই! তাছাড়া, এই নায়ক সংজ্ঞা মেনে সব দিক থেকেই মহান নন, তিনি ভিড়ের মধ্যে মিশে থাকা আর পাঁচজনের মতোই। সব মিলিয়ে তাঁকে নিয়ে দর্শকে মেতে উঠলে আর দোষ কি! সেই উন্মাদনাও যদি ছেয়ে থাকে বছর কুড়ির পার, তাতেই বা আশ্চর্য কি!
আশ্চর্য শুধু কিং খান। সেই সময়ে, ১৯৯২-তে সব্বাই যখন হিট ছবি দেওয়ার পরে তাঁকে নিয়ে ব্যবসা করতে উন্মুখ, চারদিকে যখন তাঁকে নিয়ে মাতামাতি, বিনোদনী পত্রিকাগুলোয় যখন তাঁর সাক্ষাৎকার ছাপার ধুম- তখন অকপটে সত্যিটা বলার সাহস দেখিয়েছিলেন শুধু তিনি-ই।
‘আপনারা আমার সাক্ষাৎকার কেন নিতে চাইছেন বলুন তো? কী এমন অর্জন করে দেখিয়েছি আমি? আপনারা আসলে আমায় নিয়ে আগ্রহী শুধুমাত্র জিপি সিপ্পি, রাকেশ রোশন, হেমা মালিনীরা আমায় নিয়ে কাজ করার আগ্রহ দেখাচ্ছেন বলে! আমি কেমন অভিনয় করি, সেটা নিয়ে কারও কি মাথাব্যথা আছে\\\\\\\\`? একটি বিখ্যাত পত্রিকা, যেখানে সাক্ষাৎকার বেরোলে জাতে ওঠেন নায়করা, তার সাংবাদিককে মুখের উপরে কথাগুলো বলেছিলেন শাহরুখ।
তার পরে বাইশটা বছর পেরিয়ে গেল বেশ সশব্দেই। কিন্তু নিজেকে নিয়ে বাদশার মনোভাব পালটাল কই? ‘হুম, বাইশটা বছর দর্শকদের সেবা করে ভালই কাটল! তাও তেমন কোনও প্রতিভা, সৌন্দর্য আর পরিকল্পনা ছাড়াই! সবাইকে এর জন্য ধন্যবাদ জানাই। আসলে আমি বোধহয় সব সময়েই ভাগ্যবান। আর কী বলি\\\\\\\\`!
এখন, তিনি যা-ই বলুন না কেন, বলিউড কিন্তু তাঁকে নিয়ে অন্য ফন্দি আঁটছে। দিওয়ানা ছবির প্রযোজক গুড্ডু ধানোয়া ঠিক করে ফেলেছেন, ছবিটির একটি সিক্যুয়েল বানাবেন। এই ছবিটি একই সঙ্গে বাদশার বলিউডে বেতাজ ২২ বছর রাজ আর দিওয়ানা ছবির ২২ বছরেরও সাক্ষী হয়ে থাকবে।
দিব্যা, আপনি কি এই সবের কিছু জানতে পারছেন? যেখানেই থাকুন, ভাল থাকুন!
আপনার জন্যই তো বাদশা দিবানা, এ কথা অস্বীকার করবে কে?