কল্যাণকে নির্দোষ দাবি পরিবারের
প্রথম আলোর প্রধান আলোকচিত্রী জিয়া ইসলামকে গাড়িচাপা দেয়ার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে অভিনেতা কল্যাণ কোরাইয়াকে আটক করেছে কলাবাগান থানা পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার তাকে আটক করা হয়।
জানা গেছে, ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত জানতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আজ বুধবার কল্যাণের তিনদিনের রিমান্ড চেয়েছে পুলিশ।
এদিকে আদালত প্রাঙ্গণে আসা কল্যাণের পরিবারের সদস্যরা পুরো বিষয়টিকে ভুল বোঝাবুঝি বলে দাবি করেছেন। তাদের মতে, আলোকচিত্রী জিয়ার দুর্ঘটনার সঙ্গে কোনোভাবেই জড়িত নন কল্যাণ।
আজ বুধবার (১১ জানুয়ারি) দুপুরে ‘মুখোশ মানুষ’ ছবির অভিনেতা কল্যাণের বাবা পিটার কোরাইয়া জাগো নিউজকে বলেন, ‘যা হচ্ছে সেটি একেবারেই অপ্রত্যাশিত। ফটোগ্রাফার জিয়ার আহত হওয়ার পেছনে কল্যাণের কোনো রকম সংযুক্তি নেই। গত সোমবার রাতে রাজধানীর পান্থপথে প্রথম আলোর আলোকচিত্রী জিয়া ইসলামের দুর্ঘটনাটি ঘটে। আর ওই সময় কাকতালীয়ভাবে কল্যাণও গুলশান থেকে আসার পথে তেজগাঁয়ের ওভার ব্রিজের কাছে দুর্ঘটনার শিকার হয়। একটি রডবোঝাই ট্রাকের সঙ্গে ধাক্কা লাগে কল্যাণের কালো রঙের গাড়িটির। এতে আহত হয় সঙ্গে থাকা তার বন্ধু রোসি। রক্ত দেখে ভড়কে গেলে সে নিজে তড়িঘড়ি করে সিএনজি দিয়ে ঢাকা মেডিকেলে চলে যায়। পরে বিধ্বস্ত গাড়ি ও দুর্ঘটনার ঘোর সামলে কল্যাণ ঢাকা মেডিকেলে রোসিকে দেখতে আসে। সেখানে সে গাড়ি দুর্ঘটনায় আহত রোসির খোঁজ করে। ওই মুহূর্তে জিয়াও গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিল। ওখানকার লোকজন জিয়াকে রোসি ভেবে গুলিয়ে ফেলে। এবং তার দুর্ঘটনার জন্য কল্যাণকে দায়ী করে পুলিশকে তথ্য দেয়। সমস্ত ব্যাপারটাই হয়েছে এলোমেলো। কল্যাণ গিয়েছিল তার বন্ধুর খোঁজে। সে জানেই না যে প্রথম আলোর আলোকচিত্রী হাসপাতালে এসেছে প্রাইভেটকারের ধাক্কায় চাপা পড়ে আহত হয়ে।’
তিনি আরো বলেন, ‘এতোটা বোকা কেউ নয় যে নিজেই কাউকে ধাক্কা মেরে মৃত্যুর মুখে ফেলে দিয়ে হাসপাতালে দেখতে আসবে এবং নিজে থানায় গিয়ে দুর্ঘটনার কথা বলবে। কলাবাগান থানা থেকে যখন কল্যাণকে ডাকা হলো সে নিজে আগ্রহ দেখিয়েই ভুল ভাঙতে থানায় যায়। কিন্তু তার কোনো কথাই শোনা হয়নি। সত্য মিথ্যা কিছুই যাচাই করা হয়নি। একতরফাভাবে কল্যাণকে কোনো প্রমাণাদি ছাড়াই আটক করা হয়েছে। কল্যাণের গাড়িটি দেখলেও অনেক কিছু বোঝা যায়। একটি হোন্ডার সাথে ধাক্কা লেগে গাড়ির সামনের অংশের কাচ ভাঙার সম্ভাবনা থাকে না। কিন্তু কল্যাণের গাড়িটির সামনের ছাদের নিচে কাচের একাংশ ভেঙে গেছে। এটি হয়েছে ট্রাকের ধাক্কা লেগে। একজন ফটোসাংবাদিক কেন, দুর্ঘটনায় যেকোনো মানুষের ক্ষতি হওয়াটাই বেদনার। এমন দুর্ঘটনার সঙ্গে আমার ছেলে জড়িত থাকলে তার শাস্তি হওয়া উচিত। কিন্তু একটি ঘটনাকে অন্য একটি ঘটনার সঙ্গে মিশিয়ে ফেলা ঠিক নয়।’
কল্যাণের মা শান্তি কোরাইয়া বলেন, ‘আমরা সঠিক তদন্তের মাধ্যমে এ ঘটনার শেষ দেখতে চাই। আমার নির্দোষ ছেলেকে ফাঁসানোর চেষ্টা চলছে। আমরা জেনেছি, পান্থপথে জিয়া ইসলামের হোন্ডাকে চাপা দিয়েছিল সাদা রঙের একটি প্রাইভেটকার। কিন্তু আমার ছেলের গাড়ি তো কালো রঙের। সবকিছু যাচাই-বাছাই করলেই মূল সত্যটা বেরিয়ে আসবে। আর আবেগে গা ভাসালে মূল অপরাধী পার পেয়ে যাবে। শাস্তি ভোগ করবে আমার নির্দোষ পুত্র। আমি মহামান্য আদালত ও পুলিশের তদন্ত বিভাগের কাছে দুটি দুর্ঘটনা আলাদাভাবে খতিয়ে দেখতে অনুরোধ জানাচ্ছি।’
শিগগিরই মূল ঘটনা উদঘাটিত হবে এবং কল্যাণ নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে জেল থেকে ছাড়া পাবেন বলে প্রত্যাশা কল্যাণের ভগ্নিপতি সাঞ্জুর।
এদিকে এখনো শংকা কাটেনি আহত আলোকচিত্রী জিয়া ইসলামের। তাকে দুর্ঘটনার পরপর উপস্থিত লোকজন দ্রুত উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করেন। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য জিয়া ইসলামকে মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর এ্যাপোলো হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে তাকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে।
জেইউ/এলএ