১৫০ সিনেমা হলে ডিজিটাল মেশিন বসাবেন ডিপজল
তথ্য প্রযুক্তির চরম উন্নয়নের এই সময়টাতেও ডিজিটাল হয়নি দেশের সিনেমা হলগুলো। সেলুলয়েডের ফিতা ছেড়ে সিডিতে সিনেমা বানানো হলেও হলগুলোতে সেইসব ছবি চালানো হয় মোটা অংকের টাকায় প্রজেক্টর ভাড়া করে। সেই টাকা বহন করতে হয় চলচ্চিত্রের প্রযোজককে। ফলে বেড়ে যায় ছবি নির্মাণের খরচ।
পাশাপাশি বিশেষ একটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ডিজিটাল মেশিন ভাড়া করতে হয় বলে ওই প্রতিষ্ঠানের হাতে জিম্মি থাকেন সিনেমার প্রযোজকেরা। সেই জিম্মিদশা কাটিয়ে উঠতে যাচ্ছে চলচ্চিত্র শিল্প। দেশের ১৫০টি হলে স্থায়ীভাবে ডিজিটাল মেশিন বসানোর ঘোষণা দিয়েছেন চলচ্চিত্র প্রযোজক, পরিচালক ও জনপ্রিয় অভিনেতা মনোয়ার হোসেন ডিপজল।
গতকাল শনিবার (৩১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ঢাকার অদূরে সাভারে ডিপজলের শুটিং বাড়িতে ডিপজল প্রযোজিত নতুন ছবির মহরত অনুষ্ঠানে একথা বলেন এক সময়ের আলোচিত এই অভিনেতা।
তিনি বলেন, ‘দেশ এখন ডিজিটাল। কিন্তু তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আমাদের সিনেমা হলগুলো ডিজিটাল হয়নি। তাই দর্শকরা ছবি দেখার আগ্রহ পায় না। আর যেসব হলে ডিজিটাল ছবি দেখানো হচ্ছে সেখানে হল মালিক ও প্রযোজকের অনেক টাকা ব্যয় হয়ে যায় প্রজেক্টর ভাড়া করে। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি এই সমস্যা দূর করতে কিছু কাজ করবো। প্রাথমিকভাবে ১৫০টি সিনেমা হলে ডিজিটাল মেশিন বসাবো। আপনারা সবাই পাশে থাকলে ধীরে ধীরে বাকী হলগুলোতেও মেশিন দেয়া হবে।’
জানা গেছে, প্রতিটি মেশিনের জন্য খরচ পড়বে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকা। খুব শিগগিরই এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ব্যবস্থা নেবেন ডিপজল।
অনুষ্ঠানে তিনি আরো বলেন, ‘আমি নানা কারণে সিনেমা থেকে দূরে ছিলাম। কিন্তু আমার মেয়ে ওলিজা ও চলচ্চিত্রের অনেক কাছের মানুষদের উৎসাহে আবারো ফিল্মে এসেছি। এখন থেকে নিয়মিত কাজ করবো। প্রতি মাসে দুইটি করে ছবি বানাবো।’
ডিপজল নিজের বক্তব্যে আরো বলেন, ‘এখন ইন্ডাস্ট্রিতে অভিভাবক বলতে কিছু নেই। যে যার মতো আসছে, কাজ করছে, ব্যবসা করে চলে যাচ্ছে। দায়বোধ, শ্রদ্ধাবোধ কিছু নেই। নানা কারণে তারকাদের বিরুদ্ধে অনেক কথা শুনে কষ্ট পাই। যতো বড় তারকাই হোক বেয়াদবি করা ঠিক না। সিনিয়রদের বলবো, সবাই চলচ্চিত্রে ফিরে আসুন। একসঙ্গে কাজ করলে সবরকম বেয়াদবি, অনিয়ম আমাদের চলচ্চিত্র শিল্প থেকে দূর হবেই। এফডিসি কারো নিজস্ব সম্পত্তি নয়। একে জিম্মি করে রাখার চিন্তা করলে সবাই মিলে রুখে দাঁড়াবো।’
চলচ্চিত্রের বর্তমান অবস্থা প্রসঙ্গে ডিপজল বলেন, ‘বেশ কয়েক বছর ধরেই চলচ্চিত্রের বাজার ভালো না। অনেক প্রযোজকরা আসছেন, সবাই খালি হাতে ফিরে যাচ্ছেন। কেউ টাকা উঠাতে পারছেন না। আমার মনে হয় ভালো ছবি আর হলের ভালো পরিবেশই এর জন্য দায়ী। সেই জন্য খুবই সুন্দর কিছু ছবি নির্মাণ করতে এসেছি আমি। এইসব ছবি সামাজিক আন্দোলনের ছবি, মানুষের বিবেক বদলে দেয়ার ছবি। ঘরের সবাইকে নিয়ে সিনেমা হলে গিয়ে উৎসব করে দেখার মতো ছবি হবে। নতুন করে যে যাত্রা শুরু করেছি তার জন্য সকলের দোয়া চাই আমি। আর আমার মেয়ের জন্যও দোয়া করবেন।’
শেষবেলায় তিনি বলেন, ‘সবাই নিজের মায়ের খেদমত করবেন। মায়ের মন ভালো থাকলে সন্তানের সব মুসিবত দূর হয়ে যায়। মাকে খুশি রাখলে আল্লাহ খুশি হয়ে যায়।’
গতকালকের মহরত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ছিলেন সংসদ সদস্য ইলিয়াস ভূঁইয়া। আরো ছিলেন ডিপজলের বড় মেয়ে ওলিজা মনোয়ার, পরিচালক সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার, মহাসচিব বদিউল আলম খোকন, যগ্ন মহাসচিব শাহীন সুমন, গুণী নির্মাতা ও চিত্রনাট্যকার ছটকু আহমেদ, নির্মাতা মনতাজুর রহমান আকবর, অভিনেতা মিজু আহমেদ, চিত্রনায়ক বাপ্পী ও চিত্রনায়িকা অমৃতা ও বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকবৃন্দ।
আজ রোববার থেকে শুরু হতে যাচ্ছে ডিপজলের প্রত্যাবর্তনের প্রথম ছবির শুটিং। অমিবনি কথাচিত্রের ব্যানারে ছটকু আহমেদের পরিচালনায় এই ছবিতে ডিপজলের পাশাপাশি অভিনয় করবেন বাপ্পী ও অমৃতা।
পাশাপাশি এ মাসের মাঝামাঝিতে শুরু হবে ডিপজলের মেয়ে ওলিজা মনোয়ারের পরিচালনায় ‘মেঘলা’ ছবির শুটিং। ধারাবাহিকভাবে প্রতি মাসে দুটি বিগ বাজেটের ছবি নিয়ে হাজির হবেন এক সময়ে ঢাকাই ছবির ডেঞ্জারম্যান খ্যাত অভিনেতা ডিপজল।
এলএ/আরআইপি