এফডিসির ফ্লোর ভেঙে শপিং কমপ্লেক্স
বিএফডিসি প্রবেশ করে একদিন দেখলেন ৩ নম্বর ও ৪ নম্বর ফ্লোরটি নেই! কেমন লাগবে? ধাক্কা খেলেও এটি সত্যি। শিগগিরই বদলে যাচ্ছে বিএফডিসি। পুরনো বিল্ডিং, খালি মাঠ, নোংরা সুইমিং পুল, ময়লার স্তুপ- এফডিসিতে ঢুকেই কিছুই আর চোখে পড়বে না। তার বদলে দেখা যাবে বহুতল সুরম্য এক ভবন আভিজাত্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সবাইকে অভ্যর্থনা জানাতে। এফডিসির সূত্রে এমন খবরই জানা গেল।
জাগোনিউজের অনুসন্ধানে জানা গেল, খুব শিগগিরই এফডিসির একতলা বিশিষ্ট ৩ ও ৪ নম্বর ফ্লোরের বিল্ডিংটি ভেঙে ফেলা হবে। ওই জায়গাটিতে গড়ে উঠবে বিশ তলারও বেশি বসুন্ধরা সিটির আদলে একটি ভবন। সেখানে থাকবে শপিং কমপ্লেক্স। থাকবে শুটিং ফ্লোর, সিনেপ্লেক্স, মিডিয়া হাবসহ আরো অনেক কিছু। শুধু ওই বিল্ডিংটিই নয়, এর পেছনের খোলা মাঠ, টিন শেড ঘর, সুইমিং পুল- সবই হারিয়ে যাবে বিশাল দালানের গর্ভে।
প্রকল্পের বাজেট প্রণয়ন ও পরিকল্পনার কাজ শেষ হয়েছে। এটি বর্তমানে অর্থ মন্ত্রণালয়ের টেবিলে রয়েছে। সেখান থেকে পাশ হলে একনেকের সভায় প্রধানমন্ত্রীর সামনে প্রকল্পটি উপস্থাপন করা হবে। সর্বসঅনুমোদিত হলেই শুরু হবে বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ। সম্পূর্ণ প্রকল্পের জন্য ২০০ কোটিরও বেশি বাজেট থাকছে। আর ৩ ও ৪ নম্বর ফ্লোর সম্বলিত ভবনটির ভাঙার জন্য তিন কোটি টাকা বাজেট ধার্য হয়েছে। নতুন বছরের শুরুতেই এর জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হবে। পুরো প্রজেক্টের জন্য কনসালটেন্টও নিয়োগ দেয়া হবে বলে জানা গেছে।
এফডিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা হিমাদ্রি বড়ুয়া জাগোনিউজকে বলেন, ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) বাংলা চলচ্চিত্রের আঁতুড় ঘর। এটিকে সময়োপযোগী করে তুলতে নতুন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আবারো ঘুরে দাঁড়াতে যাচ্ছে বিএফডিসি। করা হবে অবকাঠামোগত উন্নয়নও। এই ভবনটি চলচ্চিত্রের উন্নয়নের স্বার্থেই হচ্ছে। এখানে ছবি নির্মাণের জন্য প্রায় সব রকম সুবিধা থাকবে।’
তিনি জানান, ২০১২ সালের ১১ নভেম্বর বিএফডিসি পরিচালনা পর্ষদের ২৯১ তম সভায় ভবন নির্মাণের প্রস্তাবের ভিত্তিতে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর ২০১৫ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি বিএফডিসি পরিচালনা পর্ষদের ২৯তম সভায় ভবন নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। আর এ নির্দেশের ফলেই বিএফডিসি’র বহুতল ভবন নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন পর্ষদের চেয়ারম্যান হিসেবে তথ্যসচিব, তথ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব/যুগ্মসচিব, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব/যুগ্ম সচিব, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত/যুগ্ম সচিব, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত/যুগ্ম সচিব, বিএফডিসির এমডি, প্রযোজক পরিবেশক সমিতির সভাপতি।
ভবনটিতে থাকবে সিনেপ্লেক্স। এতে একদিকে বিএফডিসির আয়ও হবে অন্যদিকে হল সংকটে কিছুটা হলেও ভূমিকা রাখবে এফডিসি। পাশাপাশি থাকবে অত্যাধুনিক সুবিধাযুক্ত শুটিং ফ্লোর। পুরো ভবনজুড়ে বেশ কয়েকটি ফ্লোরকে শুটিংয়ের জন্য উপযোগী করে নির্মাণ করা হবে। থাকবে ম্যাকআপ রুম। এফডিসি কর্তৃপক্ষের দাবি, বহুতল ভবন হলে অনেকগুলো ফ্লোর করা যাবে শুটিংয়ের জন্য। এতে করে সংস্থাটির আয় বাড়বে এবং শুটিং ফ্লোরের অভাবও দূর হবে।
তবে ভবনটির মূল আর্কষণ থাকবে শপিং কমপ্লেক্স। নির্দিষ্ট ভাড়ার বিনিময়ে এখানে দোকান ভাড়া নিতে পারবেন ব্যবসায়ীরা। থাকবে ফুডকোর্ট, আবাসিক হোটেল, রেস্ট হাউস, সুইমিং পুল, অত্যাধুনিক জিম।
আরো কিছু পরিবর্তন
বহুতল এ ভবন প্রকল্পের বাইরেও বেশকিছু উন্নয়নমুলক পরিবর্তন আসবে এফডিসিতে। প্রায় তিন কোটি টাকার এই প্রকল্পে থাকবে শুটিং স্পট আধুনিকায়ন, নতুন স্পট নির্মাণ, ঝর্ণা স্পট মেরামত, বিএফডিসির অভ্যন্তরে সুইমিং পুল নির্মাণ, গেটের আধুনিকায়ন, ভেতরের রাস্তার উন্নয়ন, বাগান উন্নয়ন, নিরাপত্তা উন্নয়নসহ নানাকিছু।
এদিকে প্রায় অর্ধশত বছরের পুরনো ৩ ও ৪ নম্বার ফ্লোরের লাল রঙের ভবনটি ভেঙে ফেলা নিয়ে চলচ্চিত্র পাড়ায় চলছে আলোচনা-সমালোচনা। কেউ বলছেন, নতুন করে আধুনিক ভবন নির্মিত হলে সেখানে চলচ্চিত্র ও এই অঙ্গনের মানুষদের জন্য অনেক আধুনিক সুবিধা থাকবে।
আবার কেউ বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের দাবি, এভাবে এফডিসিকে বাণিজ্যিকীকরণ ঠিক হবে না। এখানে শপিং কমপ্লেক্স হলে বহিরাগতদের আনাগোনা বাড়বে। নানা রকম সমিতি গড়ে উঠবে। নোংরা রাজনীতির প্রভাব পড়বে চলচ্চিত্র নির্মাণের উপর। তারা চান সামগ্রিক চলচ্চিত্রের উন্নয়ন। প্রযোজক-পরিচালকরা যাতে বিএফডিসিতে সুষ্ঠুভাবে কাজ করতে পারে সে দিকে নজর দেওয়া উচিত কর্তৃপক্ষের। এফডিসিকে সবার ব্যবসার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়াটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হবে না। বহুতল ভবন হোক, কিন্তু সেখানে শপিং কমপ্লেক্সের মতো বাণিজ্যিক পরিকল্পনা না রাখাই মঙ্গলজনক হবে।
এলএ