১৬ ডিসেম্বর থেকে বিদেশি সিরিয়াল চললে গণআন্দোলন
দেশের টেলিভিশন সংশ্লিষ্ট কলাকুশলীদের ১৩টি সংগঠনের জোট সংগঠন ফেডারেশন অব টেলিভিশন প্রফেশনালস অর্গানাইজেশন (এফটিপিও) আয়োজিত সমাবেশ শেষ হয়েছে। বুধবার (৩০ নভেম্বর) সকাল ১০টা থেকেই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে শিল্পী-কলাকুশলীরা এক হয়ে তাদের পক্ষ থেকে পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেন।
তাদের এই দাবি যদি চ্যানেলগুলো না মানে তবে পরবর্তীতে জোর প্রতিবাদের হুমকি দেন। একইসঙ্গে এই দাবি না মানলে পরবর্তীতে আরো বড় আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দেন।
সমাবেশের সমাপনি টানেন এফটিপিও`র আহবাহক বরেণ্য নাট্য অভিনেতা মামুনুর রশীদ। এসময় শহীদ মিনারের বেদিতে মামুনুর রশীদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন আরো বহু নির্মাতা-শিল্পীরা।
সমাপনী বক্তব্যে মামুনুর রশীদ পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করেন। বলেন, ‘আমাদের পাঁচ দফা দাবি মধ্যে শুধু চ্যানেল মালিকদের কাছে না, আমাদের দাবিগুলো সরকারের সঙ্গেও সংশ্লিষ্ট। সরকারের যে কমিটি আছে তারা আমাদের দাবিগুলো ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে না মানেন, তবে পহেলা জানুয়ারি থেকে আমরা শিল্পীকলাকুশলীরা গণ আন্দোলনে নামব।’
চ্যানেলের কাছে দ্বিতীয় দাবি জানিয়ে নাট্যজন মামুনুর রশীদ বলেন, ‘যদি কোনো চ্যানেলে ১৫ ডিসেম্বরের পর একটিও বিদেশি সিরিয়াল বাংলায় ডাবিং অবস্থায় চলে তবে আমরা সেই চ্যানেলের সামনে অবস্থান নেব। ১৬ ডিসেম্বর থেকে অর্থাৎ বিজয়ের দিন থেকে বাংলাদেশের সব চ্যানেলে ডাবিং মুক্ত সিরিয়াল চাই।’
আরো বলেন, ‘প্রতিবছর আমরা শিল্পী-কলাকুশলীরা বছরের একটি দিন একত্রিত হয়ে আমাদের মাঝে বিদ্যমান সমস্যা নিয়ে সমাবেশ করবো। আমরা আমাদের শিল্পী কলাকুশলীদের অবস্থার উত্তরন চাই। আমাদের এই টেলিভিশন ইন্ড্রাস্টি অনেক বড় একটি মাধ্যম। আমরা যারা এখান থেকে খেটে খাই তারা প্রত্যেকেই আজ একত্রি হয়েছি আমাদের অবস্থার পরবর্তনের জন্য।’
যোগ করে বলেন, ‘গোটা শিল্পী কলাকুশলী সমাজ আজ একত্রিত হয়েছে। তাদের চোখেমুখে উচ্ছ্বাস দেখতে পাচ্ছি। এই উচ্ছ্বাস উদ্যম আগামীতেও দেখতে চাই।’
হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের এই দাবির প্রেক্ষিতে কোনো চ্যানেল যদি একজন শিল্পীর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়, ব্ল্যাকলিস্ট করে, তবে দেশের গোটা টেলিভিশনের শিল্পী নির্মাতারা তার পাশে দাঁড়াবো। কাজেই এখানে ষড়যন্ত্রের কোনো অবকাশ নেই। আর কোনো চ্যানেল যদি দুস্থ হয় তবে অবশ্যই আমরা তার পাশে দাঁড়াবো।’
আর চ্যানেলের কারণে কিংবা সরকারের পলিসির কারণে যদি আমাদের নির্মাতা-শিল্পীরা রুগ্ন হয়ে যায় তবে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। আমি নিজে একজন মুক্তিযোদ্ধা। আন্দোলন করতে, অধিকার আদায় করার ভাষা আমার এবং আমার সহযোদ্ধাদের সকলের জানা আছে।’
সবশেষে এই সমাবেশকে সফল করতে উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন মামুনুর রশীদ।
সমাবেশে সকাল থেকেই উপস্থিত ছিলেন আবুল হায়াত, সৈয়দ হাসান ইমাম, এটিএম শামসুজ্জামান, জাহিদ হাসান, তৌকির আহমেদ, বিপাশা হায়াত, তারিন, সুইটিসহ নানা প্রজন্মের শিল্পী, নাট্যকার ও কলাকুশলীরা উপস্থিত আছেন।
কড়া নিরাপত্তায় শান্তিপূর্ণভাবে চলছে শিল্পী-কলাকুশলীদের এই সমাবেশ। সব ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে মোতায়েন করা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
উল্লেখ্য, এফটিপিও এর পাঁচটি দাবি হচ্ছে- দেশের বেসরকারি চ্যানেলে বাংলায় ডাবিংকৃত বিদেশি সিরিয়াল বা অনুষ্ঠান বন্ধ, টেলিভিশন অনুষ্ঠান নির্মাণ, ক্রয় ও প্রচারের ক্ষেত্রে ক্লায়েন্ট বা এজেন্সির হস্তক্ষেপ ব্যতীত চ্যানেলের অনুষ্ঠানসংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্বারা নিয়ন্ত্রণ, দেশের টেলিভিশন শিল্পে বিদেশি শিল্পী এবং কলাকুশলীদের অবৈধভাবে কাজ করা বন্ধ, টেলিভিশন শিল্পের সর্বক্ষেত্রে এআইটির ন্যূনতম ও যৌক্তিক হার পুনর্নির্ধারণ এবং ডাউন লিংক চ্যানেলের মাধ্যমে বিদেশি চ্যানেলে দেশীয় বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধ করা।
এনই/এলএ/এমএস