শিল্পীদের সমাবেশ নিয়ে যা ভাবছে চ্যানেলগুলো
দেশীয় চ্যানেলে বিদেশি সিরিয়াল বন্ধসহ পাঁচ দফা দাবি নিয়ে আন্দোলনে নেমেছে ফেডারেশন অব টেলিভিশন প্রফেশনালস অর্গানাইজেশনের (এফটিপিও)। আগামীকাল বুধবার (৩০ নভেম্বর) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে টেলিভিশনে পেশাজীবী সংগঠনগুলোর স্বার্থ সংরক্ষণে মিডিয়ার ১২টি সংগঠনের সমন্বয়ে সংগঠনটি জোর আন্দোলনে নামছে।
সকাল ১০টা থেকে দিনভর চলবে শোবিজের নানা পেশার মানুষের সমন্বয়ে এ আন্দোলন। বন্ধ থাকবে টেলিভিশন নির্মাণের সব শুটিং।
পাঁচ দফা দাবির বেশির ভাগের দায়ই চ্যানেলগুলোর। তাই এই কথা বললে অত্যুক্তি হবে না, এফটিপিও’র প্রতিবাদ সমাবেশ মূলত চ্যানেলওয়ালাদের বিরুদ্ধে।
এখন কথা হচ্ছে, এফটিপিও’র ডাকা এই আন্দোলন নিয়ে চ্যানেলগুলো কী ভাবছে? তাদের কাছে শিল্পী-কলাকুশলীদের এ দাবি কতটা যুক্তিযুক্ত? কিইবা ব্যবস্থা নিচ্ছেন তারা এই পাঁচ দফা দাবিতে।
জাগো নিউজের সঙ্গে বেশ কয়টি চ্যানেলের কর্মকর্তারা জানালেন তাদের ভাবার কথা। বেসরকারি টেলিভিশন গাজী টিভির প্রোগ্রাম ম্যানেজার আদিত্য নজরুল বলেন, ‘এফটিপিও এর এই আন্দোলন নিয়ে কিছুই ভাবছি না। আমাদের এমডি স্যার এখন দেশের বাইরে । যদি কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হয় তিনি দেশে ফিরে আসলে তারপর নেয়া হবে।’
বিদেশি সিরিয়াল প্রচার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আলিফ লায়লা আমরা চালাবো কি না সে বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।’
মাছরাঙা টিভির অনুষ্ঠান প্রধান আরিফুর রহমান বলেন, ‘সমর্থনের কথা বললে প্রথমেই আমি শিল্পী ও কলাকুশলীদের এই সমাবেশ বলেন আর আন্দোলনই বলেন আমি ব্যক্তিগতভাবে তাদের সাফল্য কামনা করি। কারণ, শিল্পী, নির্মাতা, টেকনিশিয়ান ছাড়ো টেলিভিশন চলে না। তবে ষোলোআনা নয়। তাদের কিছু বিষয়ের সঙ্গে আমার একাত্মতা আছে। কিন্তু রুচিশীল বিদেশি সিরিয়াল হলে আমি সেটি চালানোর পক্ষে। আবার অবৈধ ডাউনলিংকের ইস্যুতে আমি এফটিপিও’র সঙ্গে একমত। বাকি যা সিদ্ধান্ত মাছরাঙার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ নেবে।’
বৈশাখী টিভির অনুষ্ঠান প্রধান আহসান কবীর বলেন, ‘আমার প্রিয় শিল্পী-নির্মাতাদের জন্য শুভকামনা রইলো। আশা করছি তারা তাদের দাবি আদায়ে সফল হবেন। তবে বৈশাখী টিভি এই সমাবেশে একাত্মতা জানাবে কি না সে বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারছি না। কেননা, আমি যতোই শিল্পীদের কথা বলি না কেন, এটা কিন্তু বাস্তব যে টেলিভিশনে ব্যবসা না থাকলে তারা টিকে থাকবে না। তাই সবাই আগে টিকে থাকতে চাইবে।’
এদিকে চ্যানেল আই, দেশ টিভি, চ্যানেল নাইন, দীপ্ত টিভির মতো চ্যানেলগুলো সূত্রে জানা গেছে, তারাও এই পাঁচ দফা দাবির সমাবেশে সরাসরি সংহতি প্রকাশ করবে না। তাদের মতে, এই আন্দোলনে অনেক ভ্রান্তি আছে। অনেকেই অনেকের ইশারায় ব্যবহৃত হচ্ছেন। একসময় যারা নাটক ব্যবসায় রাজত্ব করেছেন আজ তারা সময়ের স্রোতে দুর্বল হয়ে পড়েছেন। নানা অনিয়ম আর শিল্পী ও চ্যানেলগুলোকে তারা ঠকিয়েছে। সেসব কিছু প্রযোজক আজ নানাভাবে উসকানি দিয়ে শিল্পীদে রাস্তায় এনে দাঁড় করাচ্ছে।
ঠিক একইভাবে কিছু নির্মাতা আছেন যারা নিজেদের খাপ খাওয়াতে পারছেন না বদলে যাওয়া মিডিয়ার সঙ্গে, নির্মাণের সঙ্গে। নিজেরা আপডেট হতে পারছেন না বলে অন্যদের বদলে যাওয়াটা তারা মানতে পারছেন না।
নতুন একটি ব্যানার পেয়েছেন। সেটি নিয়ে সৃষ্টিশীল মানুষগুলোর মধ্যে নোংরা রাজনীতির বীজ বপন করে দিলেন। কিন্তু এটা যে কতো বড় ভুল হলো কিছুদিন পর নিজেরাই সেটি বুঝতে পারবেন।
চ্যানেলগুলোর দাবি, যে দাবি নিয়ে তারা মাঠে নেমেছেন তার অনেকগুলো বেশ যৌক্তিক। কিন্তু কিছু দাবি মেনে নেয়া যায় না। তারা বিদেশি সিরিয়াল বন্ধের কথা বলেন।
কিন্তু তারা ভাবেন না দর্শক খরায় ভুগতে ভুগতে চ্যানেলগুলো বন্ধ হবার পথে। কেন তারা একটা মানহীন নাটক-অনুষ্ঠানে তিন লাখ, পাঁচ লাখ টাকা ব্যয় করবেন? তারা এজেন্সির কথা বলেন। কিন্তু তারা বোঝার চেষ্টা করেন না, কম দিলেও এজেন্সি থেকে টাকাটা নিয়মিত দেয়।
কিন্তু যে প্রডিউসার ব্যক্তি প্রযোজনায় নাটক বানাচ্ছেন তার কাছ থেকে টাকা নিয়মিত পাওয়া যায় না। আবেগে গা ভাসিয়ে কিংবা লোকজনকে উল্টা পাল্টা বুঝিয়ে নিজেকে নেতা বানানো যেতেই পারে। কিন্তু অযৌক্তিক দাবি আদায় হয় না। তার জন্য সম্মিলিত প্রচেষ্টা চাই। সবাইকে স্যাক্রিফাইস করতে হয় ভালো কিছুর জন্য।
তারা দাবি করেন, এইসব ব্যাপার নিয়ে শিল্পী-নির্মাতাদের নেতৃবৃন্দরা চ্যানেলগুলোর সঙ্গে বসতে পারতেন। আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা হতে পারতো।
এভাবে দিনভর সমাবেশ করে ঢাকা শহরের মতো ব্যস্ত নগরীতে মানুষকে ভোগান্তি দিয়ে আন্দোলন সৃষ্টিশীল মানুষদের মানায় না।
উল্লেখ্য, এফটিপিও এর পাঁচটি দাবি হচ্ছে- দেশের বেসরকারি চ্যানেলে বাংলায় ডাবিংকৃত বিদেশি সিরিয়াল বা অনুষ্ঠান বন্ধ, টেলিভিশন অনুষ্ঠান নির্মাণ, ক্রয় ও প্রচারের ক্ষেত্রে ক্লায়েন্ট/এজেন্সির হস্তক্ষেপ ব্যতীত চ্যানেলের অনুষ্ঠান সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্বারা নিয়ন্ত্রণ, দেশের টেলিভিশন শিল্পে বিদেশি শিল্পী ও কলাকুশলীদের অবৈধভাবে কাজ করা বন্ধ, টেলিভিশন শিল্পের সর্বক্ষেত্রে এআইটির ন্যূনতম ও যৌক্তিক হার পুনর্নির্ধারণ ও ডাউন লিংক চ্যানেলের মাধ্যমে বিদেশি চ্যানেলে দেশীয় বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধ করা।
এনই/এলএ