বাড়লো হঠাৎ দেখার অপেক্ষা
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভীষণ প্রিয় কবিতা ‘হঠাৎ দেখা’। যে কোনো পাঠককেই এই কবিতা ছুঁয়ে যায় প্রেম আর বিরহের দোলায়। সেই কবিতাকে রুপালি পর্দায় নিয়ে আসছেন কলকাতার নির্মাতা রেশমি মিত্র।
বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ উদ্যোগে নির্মিত হচ্ছে এ ছবি। ইমপ্রেস টেলিফিল্ম ও কলকাতা রেশমী পিকচার্সের যৌথ প্রযোজনায় ছবিতে দুই দেশেরই অভিনেতা-অভিনেত্রীরা কাজ করেছেন। ছবিতে অমিত চরিত্রে অভিনয় করেছেন এপার বাংলার শক্তিমান অভিনেতা চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। মানসী চরিত্রে অভিনয় করেছেন ভারতের বাংলা ছবির বর্ষীয়ান অভিনেত্রী দেবশ্রী রায়। যুবক অমিত চরিত্রে অভিনয় করেছেন কলকাতার দ্বীপ ভট্টাচার্য। আর কিশোরী মানসীর ভূমিকায় দেখা যাবে জান্নাতুল সুমাইয়া হিমিকে। এর মাধ্যমে বড়পর্দায় অভিষেক হচ্ছে তার।
আরো আছেন এপারের মুনীরা মিঠু, ওপারের সাহেব ভট্টাচার্য,শংকর চক্রবর্তীদের মতো তারকারা। এরইমধ্যে ছবিটির শুটিং-এডিটিং শেষ হয়েছে। চলছে মুক্তি দেয়ার প্রস্তুতি। মাঝে শোনা গিয়েছিলো ছবিটি চলতি নভেম্বরের ২৫ তারিখ মুক্তি পাবে। তবে ইমপ্রেসে খোঁজ নিয়ে জানা গেলো, ২৫ তারিখে ছবিটি মুক্তির কোনো সম্ভাবনা নেই। কারণ ছবিটি এখনো সেন্সর বোর্ডেই জমা আছে। সেন্সর ছাড়পত্র পাবার পর মুক্তির বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসবে। সুতারাং বাড়লো ‘হঠাৎ দেখা’র জন্য অপেক্ষা।
এদিকে ‘হঠাৎ দেখা’ ছবিটি নিয়ে বেশ আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে গল্প প্রধান চলচ্চিত্রের দর্শকদের মধ্যে। অনেকেই ফেসবুকে ছবিটি কবে মুক্তি পাবে তার খোঁজ খবর করছেন। এই আগ্রহের মূলে রয়েছে অনেক কারণ। প্রথমত ছবিটি নির্মিত হয়েছে কবিগুরুর নিজেরই প্রিয় একটি কবিতা অবলম্বনে। দ্বিতীয়ত, এই ছবি দিয়ে দীর্ঘদিন পর আবারো সুযোগ হবে শক্তিমান অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চনের অভিনয় উপভোগের। তৃতীয়ত, ছবিটিতে কাঞ্চনের বিপরীতে থাকছেন ওপার বাংলার নন্দিত অভিনেত্রী দেবশ্রী রায়। পাশাপাশি, সাম্প্রতিক সময়ে কলকাতায় সমসাময়িককালে পরিচালকরা চলচ্চিত্র নির্মাণে বেশ মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন। সেই ভাবনা থেকে রেশমি মিত্র ছবিটিকে কতোটা উপভোগ্য করে তুলেছেন সেটাও দেখার অপেক্ষায় দর্শক।
‘হঠাৎ দেখা’ ছবির গল্প ১৯৩৮ সালের পটভূমিকায়। সেই সময়টাতেই ‘হঠাৎ দেখা’ কবিতাটি লেখা হয়। আর সেই কথা মাথায় রেখেই ছবিটির লোকেশন, সংলাপ তৈরি করা হয়েছে। বাংলাদেশে শুটিং করতে এসে নির্মাতা রেশমি মিত্র বলেছিলেন, ‘কবিতা লেখার প্রেক্ষাপট তুলে ধরার সবরকম চেষ্টা করেছি। মূল গল্প একটি ট্রেনে। দুই প্রেমিক-প্রেমিকার দীর্ঘদিন পর দেখা হওয়ার মধ্য দিয়ে গল্পের শুরু।’
রক্ষণশীল সমাজে বেড়ে ওঠা এক কিশোরীর জীবনের গল্প নিয়ে সাজানো হয়েছে ‘হঠাৎ দেখা’। সে কখনও কোনো ছেলের সামনে যাওয়ার অনুমতি পেতো না। হঠাৎ গৃহশিক্ষক অমিতের প্রেমে পড়ে মেয়েটি। কিন্তু মাঝপথে তাদের প্রেমে বিচ্ছেদ ঘটে। বহু বছর পর হঠাৎ একদিন দেখা হয় তাদের।
নির্মাতা পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ছবিটিতে যেমন থাকছে রবীন্দ্রসংগীত, তেমনই থাকছে বাউলগীতি। এর শুটিং হয়েছে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও কলকাতার বিভিন্ন জায়গায়।
ছবিটি নিয়ে বেশ আশাবাদী অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন। অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথের কবিতা হঠাৎ দেখা। আমার রবীন্দ্রনাথের প্রতি একটা আগ্রহ আছে, সেটি একটা বিষয়, আর একটি ব্যাপার হলো এই ছবিটি দুই দেশের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত হয়েছে। স্বাভাবিকভাবে বাজারটা বড়, প্রত্যাশাও বেশি। তাছাড়া, এখন তো এই ধরণের গল্প প্রধান ছবিগুলো ভালো চলছে। দর্শক বদলেছে বাংলা ছবির।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের দর্শকদের আমরা সবার ওপরে স্থান দেই। সেই দর্শক যদি দেখে মজা পায়, আনন্দ পায় তাহলে আমাদের অনুপ্রেরণা মিলবে। তারা যতো বেশি দেখবে ছবিটি ততো বেশি হিট হবে। তখনই আমরা একটা ছবির জায়গায় আর একটা ছবি করতে পারবো। ইন্ডাস্ট্রি একটি ইতিবাচক রাস্তায় হাঁটবে।’
ছবিটিতে কিশোরী মানসী চরিত্রে অভিনয় করা হিমি বলেন, ‘এই ছবিটি আমার কাছে সবসময় স্মরণীয় প্রাপ্তি হয়ে থাকবে। প্রথম ছবিতেই রবি ঠাকুরের নায়িকা হওয়াটা যে কোনো অভিনেত্রীর জন্যই বিশেষ কিছু। পাশাপাশি ইলিয়াস কাঞ্চন, দেবশ্রী রায়ের মতো গুণী শিল্পীদের সঙ্গে কাজ করা দারুণ কিছু। আমি চেষ্টা করেছি নিজেকে নির্মাতার চাহিদা মতো উপস্থাপন করতে। চমৎকার একটি ছবি হয়েছে। আমার বিশ্বাস, যারা ভালো গল্পের ছবি দেখতে চান, নির্মাণের মুন্সিয়ানা দেখতে চান, শিল্পীদের অভিনয়ে মুগ্ধতা খোঁজেন তাদের কাছে খুব ভালো লাগবে ‘হঠাৎ দেখা’।
সম্প্রতি ছবিটির ট্রেলার ও ফার্স্ট লুক প্রকাশ হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের কবিতা থেকে তৈরি ছবিতে সংগীত পরিচালনার দায়িত্বে আছেন রাজা নারায়ণ দেব। এখানে বিভিন্ন গানে কণ্ঠ দিয়েছেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, অনুপম রায় ও আরো অনেকেই।
দেখুন ‘হঠাৎ দেখার’র ট্রেলার :
এলএ/পিআর