ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিনোদন

চ্যানেল মালিকদের আন্দোলনে ঐক্যের ডাক

প্রকাশিত: ০১:১৮ পিএম, ১৩ নভেম্বর ২০১৬

একটা সময় বাংলাদেশের সংস্কৃতির অন্যতম বাহক ছিলো বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি)। ধীরে ধীরে চ্যানেলের সংখ্যা বেড়েছে, বিস্তৃত হয়েছে ছোট পর্দার আঙিনা, মার্কেট, ব্যবস্থাপনা ও দর্শকদের চাহিদা। তবে সাম্প্রতিক সময়ে কিছু বিষয় ভাবিয়ে তুলেছে ইন্ডাস্ট্রিকে।

তাই চ্যানেল মালিকরা নেমেছেন আন্দোলনে। তৈরি করেছেন ‘মিডিয়া ইউনিটি’ নামের একটি সংগঠন। এখানে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে রয়েছেন এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান ড. মাহফুজুর রহমান। আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ৭১ টিভির সিইও মোজাম্মেল বাবু। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন বাংলাদেশ টেলিভিশন ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (অ্যাটকো), বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে), ইলেকট্রনিক মিডিয়া মার্কেটিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইমা), ডিরেক্টরস গিল্ড অব বাংলাদেশ, অভিনয় শিল্পী সংঘ, টেলিভিশন নাট্যকার সংঘ, ক্যামেরাম্যান অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, শুটিং হাউজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, সহকারী পরিচালক সমিতি, ব্রডকাস্ট অ্যাসোসিয়েশনসহ মোট ১৬টি সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

মিডিয়া ইউনিটি আজ রোববার দুপুর ১২টায় রাজধানীর ঢাকা ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সেখানে দেশীয় চ্যানেল বাঁচিয়ে দেশীয় নির্মাণকে বাঁচানোর আলোচনা করা হয়। সেই সঙ্গে দেশীয় চ্যানেলে বিদেশি সিরিয়াল বাংলায় ডাবিং করে প্রচার ও দেশীয় পণ্যের বিজ্ঞাপন বিদেশি চ্যানেলে প্রচার বন্ধের জন্য আন্দোলনের ডাক দেয়া হয়। এজন্য সব চ্যানেল মালিক, নির্মাতা, শিল্পী, কলাকুশলী, বিজ্ঞাপনী সংস্থাকে এক হয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাবার কথা বলেন বক্তারা।

Media

৭১ টিভির সিইও এবং মিডিয়া ইউনিটির আহ্বায়ক মোজাম্মেল বাবুর নেতৃত্বে আজকের সংবাদ সম্মেলনে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইনডিপেনডেট টিভির প্রধান ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সালমান এফ রহমান, আরটিভির চেয়ারম্যান সংসদ সদস্য মোরশেদুল ইসলাম, এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান ড. মাহফুজুর রহমান, এশিয়ান টিভির চেয়ারম্যান হারুন-অর-রশিদ, গাজী টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফ আমান ফায়েজ, সময় টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ জুবায়ের, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও একুশে টিভির সিইও মনজুরুল আহসান বুলবুল, ডিরেক্টরস গিল্ডের সভাপতি গাজী রাকায়েত, অভিনয় সংঘের সদস্য সচিব আহসান হাবিব নাসিম, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, অভিনেতা শহীদুজ্জামান সেলিম, জাহিদ হাসান, শহীদুল আলম সাচ্চু, ইত্যাদির পরিকল্পক ও উপস্থাপক হানিফ সংকেত ও মিডিয়া ইউনিটির আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করা নেতা ও প্রতিনিধিরা।

এছাড়া উপস্থিত ছিলেন সৈয়দ হাসান ইমাম, শামস সুমন, আজিজুল হাকিম, শাহরিয়ার নাজিম জয়, চঞ্চল চৌধুরী, প্রাণ রায়, বন্যা মির্জা, তারিন, সুইটি, শাহেদ শরীফ খান, লাক্স তারকা বাঁধন, সাজু মুনতাসীর, আরশাদ আদনান, হিল্লোল, এস এ হক অলিক, চয়নিকা চৌধুরী, রোকেয়া প্রাচী, টেলিহোমের কর্ণধার আলী বশির, কৌশিক হোসেন তাপস প্রমুখ।

সম্মেলনে বক্তারা বেশ কিছু বিষয়ে আলোকপাত করেন। তারা দাবি করেন, বিদেশি সিরিয়াল প্রচার বন্ধ করতে হবে, বিদেশি চ্যানেলে দেশীয় পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধ করতে হবে, সব অবৈধ ডাউনলিংক চ্যানেল বন্ধ করা, কোনো দেশের চ্যানেল ডাউনলিংক করলে সে দেশের অরিজিনাল ফিড প্রচার করা, বিজ্ঞাপন প্রচারের নামে মানি লন্ডারিং বন্ধ করা, ক্যাবল অপারেটরদের ব্যবসার সঠিক হিসাব রাখা ও সেখান থেকে অর্জিত আয়ের সঠিক বিন্যাস ইত্যাদি।

Media

হানিফ সংকেত একটি জনপ্রিয় চ্যানেলকে ইঙ্গিত দিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘দেশীয় সংস্কৃতিকে ধ্বংস করতে বেশ কিছু জালিয়াতি চক্র সক্রিয় রয়েছে। সেই চক্রের সঙ্গে দেশের একটি চ্যানেল জড়িত। আমার খুব কষ্ট হয় যখন আমাদের শিল্পীদের সেখানে গিয়ে আবেগে গদ গদ হয়ে বলতে শুনি, অমুক চ্যানেল আমাদের পরিবার। আমরা এখানে সবাই পরিবারের সদস্য। চ্যানেলটি এই মেলা করে, ওই মেলা করে। চ্যানেল ব্যবসা করতে এসে তারা ইভেন্ট ব্যবসা খুলে বসেছে। কিন্তু তারা শিল্পীদের স্বার্থে বিদেশি সিরিয়াল বন্ধ রাখতে পারে না, সংস্কৃতি রক্ষায় নিবেদিত হতে পারে না।’

এরপর সংহতি প্রকাশ করতে এসে অভিনেতা শহীদুল আলম সাচ্চু বলেন, ‘আমরা এখানে সমবেত হয়েছি সংস্কৃতি রক্ষার দাবিতে। অযৌক্তিকভাবে অন্যের সমালোচনা করতে নয়। কোনো আন্দোলন করার সময় আবেগ এবং ব্যক্তিগত আক্রোশ নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। চেহারাটাকে সুন্দর রাখা উচিত। সবাই মিলে আজকের যে দাবি সেই দাবি অর্জন করতে আমরা সমর্থ হবো সেই প্রত্যাশা রইলো।’

ধারাবাহিকতায় বক্তব্য দিতে এসে এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান ড. মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবো না আপনাদের। এটা সত্যি আনন্দের বিষয় যে মিডিয়া ইউনিটির ডাকে আপনারা সবাই এসেছেন। এখানে আমাদের প্রিয় মানুষ, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এবং প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান রয়েছেন। তিনি জ্ঞানী এবং অভিজ্ঞ মানুষ। তার সাহচর্য আমাদের আরো সাহসী করে তুলেছে। আজকে যেসব সমস্যা নিয়ে আমরা এখানে সমবেত হয়েছি প্রয়োজনে তার সমাধানে আমরা প্রধানমন্ত্রীর দ্বার পর্যন্ত যাবো।’

Media

তিনি চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগরের ভূমিকাকে সংস্কৃতির রাজাকারের মতো দাবি করে বলেন, ‘সংস্কৃতি ধ্বংসের জালিয়াতি চক্রের কথা হানিফ সংকেত ইঙ্গিত করে বলেছেন। কিন্তু তিনি লজ্জায় নাম বলতে পারেননি। আমি সেই নামটা বলে দিতে চাই। তিনি আমার খুব কাছের মানুষ। যখন থেকে আমি চ্যানেল নিয়ে এসেছি তার এক সপ্তাহ পর থেকেই তার সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক। তিনি হলেন সাগর ভাই। চ্যানেল আইয়ের জনপ্রিয় মানুষ। তিনি বেশ কিছু বিষয়ে ভুল পথে আছেন। তার ভূমিকা অনেকটা সংস্কৃতির রাজাকারের মতোই। তাকে বলবো সময় থাকতে এই আন্দোলনে যোগ দিন। আর যেসব শিল্পী ওই চ্যানেলে যান, কাজ করছেন তাদের আমরা চিহ্নিত করে রেখেছি।’

ডিরেক্টরস গিল্ডের সভাপতি গাজী রাকায়েত বলেন, ‘দেশে দেশীয় বিনোদন বা সংস্কৃতি এখন কোমায় চলে গেছে বিদেশি সিরিয়ালের চাপে। দর্শকদের চাহিদার কথা বলে বস্তাপচা সিরিয়ালগুলো চালাচ্ছে চ্যানেল। এতে করে সমাজে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। দর্শক যা খুশি তাই বিনোদন হিসেবে চাইতে পারে। কিন্তু চ্যানেলের অনেক কিছু বিবেচনা করা উচিত। দেশপ্রেম থাকা উচিত। দেশের শিল্পীদের বেকার করে দিয়ে তারা কোন ইন্ডাস্ট্রি বাঁচাতে চাইছেন আমরা বুঝি না।’

তিনি বলেন, ‘এক সময় আমরা ধারাবাহিক নাটকের প্রতি পর্বে ১ লাখ ৭৩ হাজার টাকার বাজেট রাখতাম। আর সেটি এখন ৬০ হাজারে এসে ঠেকেছে। এটা খুবই বেদনাদায়ক।’

Media

অভিনেতা জাহিদ হাসান বলেন, ‘আজকের এই পরিস্থিতি কারো একার দায় নয়। আমরা প্রত্যেকটি বিভাগকেই নষ্ট করেছি ধীরে ধীরে। লজ্জার সঙ্গে বলতে হয়, এতদিনের অভিজ্ঞতা নিয়ে যখন নাটক নির্মাণ করতে গেলাম নানা রকম অশালীন প্রস্তাব শুনতে হয়েছে। চ্যানেল শিল্পীদের ভুয়া টিআরপি তৈরি করে নির্মাতাদের চাপ দিয়েছেন ওইসব আনকোয়ালিটির শিল্পীদের নিয়ে নাটক বানাতে। নিজেদের ভেতরে তাই সততা তৈরি খুব জরুরি। আর তারকাদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করবেন না। এটা পরিতাপের, কোনো নীতিনির্ধারণী মিটিং বা আলোচনায় আমরা ডাক পাই না, কিছু জানিও না। আমাদের ডাকা হয় আন্দোলনে মাঠে থাকার জন্য।’

সবশেষে বক্তব্য রাখেন ইনডিপেনডেন্ট টিভির চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান। তিনি বলেন, ‘এতক্ষণ আলোচনা শুনে আন্দোলনের বিষয়টিকে আমার খুব একটা সিরিয়াস মনে হয়নি। এত ছোটখাটো বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে বিরক্ত করা ঠিক হবে না। আগে নিজেরা বসে কিছু বিষয় যাচাই-বাছাই করি। সেগুলো নিয়ে তথ্য ও অর্থ মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ জানাই। আমার মনে হয় একটা ফল আমার পাবো। আর এখানে কোনো বিবাদ নয়, বিভেদ নয়। সবাই মিলেমিশেই টিকে থাকতে হবে। সম্পর্ক সুন্দর করতে হবে, নষ্ট যেন না হয়।’

প্রসঙ্গত, আগামী ৩০ নভেম্বর জাতীয় শহীদ মিনারে মানববন্ধন করবে মিডিয়া ইউনিটি। সেখানে উপস্থিত থাকবেন দেশের চ্যানেল মালিক, নির্মাতা, শিল্পী, কলাকুশলী ও মিডিয়া ইউনিটির নেতাকর্মীরা।

এলএ/পিআর

আরও পড়ুন