হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে প্রথম দেখা
মানুষ আসতেন তার জন্মদিনে ফুল নিয়ে, কেউ বই নিয়ে, কেউ বা শূন্য হাতে। সারা দেশে চেনা-অচেনা মানুষের এমন আগমন দেখে জীবদ্দশায় তিনি বিস্মিত হয়েছিলেন। তিনি আর কেউ নন, বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক, চলচ্চিত্রকার, নাট্যকার ও গীতিকার হুমায়ূন আহমেদ। আজ রোববার, (১৩ নভেম্বর) তার জন্মদিন। এমন দিনে তিনি সশরীরে বেঁচে নেই। জন্মদিনে তিনি নুহাশ পল্লিতে, গভীরতম এক ঘুমে আচ্ছন্ন। আজও হয়তো শিশির ভেজা ভোরে পাখিরা তাকে অভিবাদন জানিয়েছে। হয়তো তিনি দেখবেন, হয়তোবা দেখবেন না।
প্রিয় এই লেখক আজকের অনেক অভিনয় শিল্পীকে বানিয়েছেন তারকা। তারাও ভোলেননি প্রিয় হুমায়ূন আহমেদকে। তার জন্মদিনে জাগো নিউজকে জানিয়েছেন কালজয়ী এই মানুষের সঙ্গে প্রথম দেখা করার অভিজ্ঞতা...
চিত্রনায়ক রিয়াজ
হুমায়ূন আহমেদ স্যার ছিলেন আমার প্রিয় লেখকদের মধ্যে একজন। ভীষণ ভালো লাগতো তার লেখা। স্যার তার একজন সহকারীর মাধ্যমে আমাকে নুহাশ পল্লিতে ডেকেছিলেন। এটা ২০০০ সালের কথা। হুমায়ূন আহমেদের ডাকটাই আমার কাছে ছিল অনেক বড় পুরস্কার। নুহাশ পল্লিতে আমি তার সঙ্গে যেদিন দেখা করতে গিয়েছিলাম, ঠিক সেদিনেই তিনি আমাকে ‘দুই দুয়ারী’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তার সঙ্গে প্রথম দেখা করাটাই ছিল সৌভাগ্যের, তার ওপর চলচ্চিত্রের প্রস্তাব। এটা আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া ছিল। ‘দুই দুয়ারী’ তে রহস্যমানব চরিত্রে অভিনয় করে ব্যাপক সাড়া পেয়েছিলাম। আজকে আমি রিয়াজ হওয়ার পেছনে হুমায়ূন আহমেদ স্যারের অনেক ভূমিকা রয়েছে।
ফারুক আহমেদ
আমি তখন নাটকের সঙ্গে জড়াইনি। সে সময়ই হুমায়ূন স্যারের সঙ্গে আমার প্রথম দেখা হয়। অনেক আগে আমি মোহাম্মদপুরে থাকতাম। স্যারের ছোটভাই আহসান হাবীব ছিল আমার বন্ধু। আমরা একসঙ্গে পড়তাম। তার মাধ্যমেই প্রথমবার স্যারের সঙ্গে আমার দেখা হয় তাদের বাসায়। আহসান হাবীবের সঙ্গে তাদের বাসায় গিয়েছিলাম, ১৯৭২-৭৩ সেটা সালের ঘটনা। আমার স্পষ্ট মনে আছে, তাদের বাসায় ঢুকতেই চোখে পড়ে ড্রয়িং রুমে বসে স্যার কী জানি লিখছিলেন। আমি তাকে দেখেই সালাম দেই, তিনি মাথা নেড়ে উত্তর দিয়েছিলেন। আর স্যারে সঙ্গে আমার প্রথম কাজ ছিল ১৯৯২ সালে। সেটা ছিল ‘অচিন বৃক্ষ’ নামের একটি নাটক। নাটকটি বিটিভিতে প্রচার হয়েছিল।
সেলিম চৌধুরী
স্যার যখন শিক্ষকতা করতেন, আমি তখন তার ছাত্র ছিলাম। এটা ১৯৮৪ সালের কথা। এরপর আমি প্রথম গানের অ্যালবাম প্রকাশ করি ১৯৮৯ সালে। তখন স্যার জানতে পারেন আমি টুকটাক গানের সঙ্গে জড়িত। আমার অ্যালবাম প্রকাশের পর আমি স্যারকে একটা টি-শার্ট উপহার দিয়েছিলাম। স্যারের সঙ্গে আমার প্রথম কাজ তার সঙ্গে পরিচয়ের প্রায় ১১ পর, ১৯৯৫ সালে। স্যারের সঙ্গে আমার প্রথম কাজ ছিল ‘আজ পাশা খেলবো রে শ্যাম’ গানটি। তারপর তো তার সঙ্গে অনেকবার কাজের সৌভাগ্য হয়েছে। সেই সুবাদে হৃদ্যতা বেড়েছে। সেসব আজও স্মৃতিতে জ্বলজ্বল করছে। স্যার যে চলে গেছেন সেটা বিশ্বাস করতে খুব কষ্ট হয়। আজও আমার মুঠোফোনে স্যারের ফোন নম্বরটি সেভ করা আছে।
কুদ্দুস বয়াতি
স্যার ১৯৮৯ সালে ‘খাদক’ নামে একটি নাটক নির্মাণ করেন। সেই নাটকের মাধ্যমেই তার সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয়। ওই নাটকে গান করেছিলাম। এরপর আমাকে দিয়ে অনেক কাজ করিয়েছেন, আমার স্টার বানিয়েছেন। তিনি ছিলেন মানুষ গড়ার কারিগর।
মাজনুন মিজান
আমার অনেক দিনের ইচ্ছে ছিল হুমায়ূন স্যারের সঙ্গে কাজ করবো। সে কারণে কয়েকবার তার সঙ্গে কাজের জন্য ইন্টারভিউ দিয়েছি, কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। একদিন অভিনেতা চ্যালেঞ্জার ভাইকে বললাম, আমি হুমায়ূন আহমেদ স্যারের সঙ্গে কাজ করতে চাই। তাকে বলার পর দিন তিনি আমাকে গাজীপুরে নিয়ে যান। সেখানে নুহাশ পল্লিতে শুটিং চলছিল। যাওয়ার পর স্যারকে সালাম জানাতেই, তিনি বলেছিলেন- তোমাকে চেনা চেনা লাগছে। তারপর পাশ থেকে শাওন আপা বলেছিলেন- ঢাকা থেকে নুহাশ পল্লি আসার পথে বিলবোর্ডে দেখা যায় তাকে। এরপর স্যার জানতে পারেন আমি তার সঙ্গে কাজ করতে চাই। তিনি তার সহকারী জুয়েল রানাকে দিয়ে আমাকে একটা স্ক্রিপ্ট দেন। আমি সেটা আয়ত্ত করি। এরপর স্যার তার সহকারীকে জিজ্ঞেস করেন- জুয়েল কী অবস্থা? সে কি পারবে? জুয়েল বলেছিলেন- চলবে স্যার। তারপর শর্ট দেই। তার আগেই চ্যালেঞ্জার ভাই বলেছিলেন- তুমি যে ভালো অভিনয় করো, এটা স্যারকে বোঝাতে যেও না; স্যার যেমনটা চায় সেভাবেই কাজ করো। এরপর স্যারের নির্দেশনায় অভিনয় করলাম। এটা ছিল ‘কালা কৈতর’ নামের একটি নাটক। আমাকে সিকোয়েন্স ছিল তিনটি; কিন্তু স্যার আমাকে দিয়ে ২৩টি সিকোয়েন্স করিয়েছিলেন। যে চরিত্রে আমি অভিনয় করেছিলাম তার জন্য স্যার নিজে পছন্দ করে দর্জি দিয়ে পোশাক তৈরি করিয়েছিলেন। এটা ছিল স্যারের কাছে খুব দরদের একটা চরিত্র। পরে তিনি আমাকে খুব পছন্দ করেন এবং তার সঙ্গে অনেকবার কাজ করার সৌভাগ্য আমার হয়। আমি তাকে এতটই সম্মান করতাম যে, আমার প্রথম সন্তানের নাম স্যার রেখেছিলেন লুব্দক মানব।
এনই/আরআইপি