ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিনোদন

‘প্রধানমন্ত্রী শুনলে ঠিকই সাহায্য করতেন’

প্রকাশিত: ১০:৪৫ এএম, ১৬ অক্টোবর ২০১৬

বাংলাদেশের লোকগানের মধ্যে পল্লীগীতি ও ভাওয়াইয়া গানের একনিষ্ঠ চর্চা করে গেছেন যারা তাদের মধ্যে অন্যতম এক নাম সৈয়দ গোলাম আম্বিয়া। তুখোর একজন গায়কও ছিলেন তিনি। এছাড়া হামদ ও নাতের শিল্পী হিসেবেও খ্যাতি ছিলো তার।

কবি জসিমউদ্‌দীনও গায়কীতে মুগ্ধ হয়ে তার জন্য গান লিখেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে আমন্ত্রণ করে ডেকে নিয়ে তার কণ্ঠে হামদ ও নাত শুনেছিলেন।

প্রখ্যাত এই শিল্পীর গাওয়া গানগুলোর মধ্যে রাসুল নামে কে এলো মদিনায়, পিতা গুরু মাতা গুরু/তুমি তাদের ভক্তি করো, খালি হাতে পুলসিরাত কেমনে হবি পার এবং আজি দুঃখের কথা ভাবি ইত্যাদি গানগুলো বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিলো।

১৯৬৭ সাল থেকে বিটিভিতে গান গাওয়া শুরু করেন তিনি। পরবর্তীতে বিশেষ গ্রেডের শিল্পীর মর্যাদা অর্জন করেন সৈয়দ গোলাম আম্বিয়া। এমনকি সংগীত পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। শুধু তাই নয়, বিটিভি ও বাংলাদেশ বেতারে বহুদিন গানের বিচারক হিসেবেও নিয়োজিত ছিলেন লোকগানের অমর শিল্পী আব্দুল আলীমের শিষ্য সৈয়দ গোলাম আম্বিয়া।

এরচেয়ে বড় কথা তিনি তার কর্মজীবনে ছিলেন অত্যন্ত পরোপকারী। অসংখ্য মানুষ আর শিল্পীর দুরবস্থায় নিজের সামর্থ্য নিয়ে ছুটে গেছেন। অথচ সেসব জৌলুসময় কথা যেন তার জীবনে শুধুই অতীত। কারণ তিনি খিলগাঁওয়ের সিপাহিবাগের কাছেই নিজের করা একটি দ্বিতল বাড়িতে বসে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছেন। তার ভাষায়, ফাঁসির আসামির মতো দিন গুনছেন কবে হবে শেষ জীবনের!

তার শরীরে গত বছরের অক্টোবর থেকে মরণব্যাধি ক্যান্সার ধরা পড়েছে। প্রথমে কিডনিতে তারপর ক্যান্সার ছড়িয়ে গেছে লিভারেও। নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী ব্যাংককে গিয়ে উন্নত চিকিৎসাও করিয়েছেন। কিন্তু ফল হয়নি কোনো। ক্যান্সার নিরাময়ের জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। অথচ আত্মসম্মানের দিকে চেয়ে কারো কাছে হাত পাততেও নারাজ তিনি।

Golam-Ambiya

অন্যদিকে তিনি বাঁচতেও চান। সৈয়দ গোলাম আম্বিয়ার জীবন মৃত্যুর এমন দ্বিধার মাঝেই আলাপ হলো তার সাথে। কথায় কথায় তিনি জানালেন তার শিল্পী জীবনের কথা, অভিমানের কথা। ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার পর কেউ তার খবর নিচ্ছে না। সতীর্থরা তো না-ই এমনকি বাংলাদেশ বেতার ও বিটিভির বিশেষ গ্রেডের শিল্পী থাকা সত্ত্বেও সেখানকার কেউ খবর নিচ্ছে না।

তিনি বললেন, ‘আমার যখন সুযোগ ছিলো; যখন আমি উপ-সচিব ছিলাম তখন অসংখ্য শিল্পীকে বাংলাদেশ বেতার ও বিটিভিতে নিয়মিত গাইবার সুযোগ দিয়েছি। যোগ্যতা দেখে তালিকাভুক্ত করেছি। অনেক মানুষকে চাকরিও দিয়েছি। কিন্তু যাদের উপকার আমি করেছি পরবর্তীতে তাদের একজনও আমার সাথে যোগাযোগ পর্যন্ত রাখেনি। অনেক শিল্পী-মিউজিশিয়ানকে আমি আর্থিকভাবে সামর্থ্য অনুযায়ী সহায়তা করেছি। অনেকের অসুস্থতার সময় সবাইকে একত্রিত করে অর্থ তুলে দিয়েছি। এসব দেখে সেসময় ফেরদৌসি মজুমদার আমাকে বলেছিল, আপনি যেভাবে মানুষের সহায়তায় কাজ করছেন যদি কখনো আমাদেরও এরকম বিপদ হয় তাহলে পাশে থাইকেন! আমি বলেছিলাম, আল্লাহ না করুক এরকম যেনো আপনাদের না হয়। অথচ ভাগ্যের কি পরিহাস সে অবস্থায় পড়ে গেলাম আমি। অথচ আজ আমার পাশে কেউ নাই। শুধু সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর নিচ্ছেন উস্তাদ মমতাজ আলী খানের মেয়ে রুনো খান। সে আমার জন্য যা করছে তা আমার পরম সৌভাগ্য।’

বর্তমান প্রধানমন্ত্রী একবার তার দুটো গান শুনে আরো একটি গান গাওয়ার অনুরোধ করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর সেই অনুরোধ তার শিল্পী জীবনের পরম পাওয়া বলে উল্লেখ করতেও ভুলেননি গোলাম আম্বিয়া। সেই থেকে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছেও সাহায্য চেয়ে তার দপ্তরে একটি অনুরোধ বার্তা পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু সেখান থেকে এখনও কোনো উত্তর আসেনি। গোলাম আম্বিয়ার বিশ্বাস, হয়তো সেই অনুরোধ বার্তা পৌঁছানো হয়নি প্রধানমন্ত্রীর কাছে। যদি হতো তাহলে নিশ্চয়ই প্রধানমন্ত্রী কোনো উত্তর দিতেন। ঠিকই সাহায্য করতেন। শিল্প-সংস্কৃতি ও শিল্পীদের প্রতি বঙ্গবন্ধু কন্যার মমতার কথা কে না জানেন!

নানা অঙ্গনের বহু শিল্পী আর সংস্কৃতিকর্মীরাই প্রধানমন্ত্রীর ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছেন। সর্বশেষ সদ্য প্রয়াদ সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের প্রতি শেখ হাসিনার শ্রদ্ধা ছিলো প্রশংসিত। প্রধানমন্ত্রী অর্থ ও চিকিৎসা সাহায্য দিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন কিংবদন্তি লাকী আখন্দেরও। এসব দেখেই আশায় বুক বাঁধেন লোকগানের সাধক আম্বিয়া, তিনিও প্রধানমন্ত্রীর মমতার দেখা পাবেন। মিলবে মানুষের ভালোবাসাও।

এলএ/পিআর

আরও পড়ুন