কিংবদন্তি অভিনেতা আরিফুল হকের ৮৬তম জন্মদিন
সমসাময়িক প্রায় সব অভিনেতাই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে গেছেন। সবার দোয়া ও ভালোবাসায় এখনো বেশ ভালোই আছেন বরেণ্য অভিনেতা আরিফুল হক। দীর্ঘদিন অভিনয়ে নেই তিনি। পরিবার নিয়ে থাকছেন কানাডাতে।
একজন আরিফুল হক তার অভিনয় সত্তা দিয়ে এদেশের চলচ্চিত্রাঙ্গন এবং নাট্যাঙ্গন উভয়ই করেছেন সমৃদ্ধ। সাবলীল অভিনয়ের জন্য আজো দর্শকের মানসপটে শ্রদ্ধার তুলিতে আঁকা তার ছবি। তাই তিনি আড়ালে থাকলেও তার জন্মদিনের গুরুত্ব এতটুকু ম্লান হয় না। ঠিক তাই। আজ মঙ্গলবার (১১ অক্টোবর) আরিফুল হকের জন্মদিন। জীবনের দীর্ঘ সফরে তিনি ৮৫ বছর পেরিয়ে আজ পা রেখেছেন ৮৬ বছরে। শুভ জন্মদিন জীবন্ত কিংবদন্তি।
ভালোবেসে ছাত্রজীবনেই বেছে নিয়েছিলেন সংস্কৃতির পথ। পরবর্তীতে তিনি এদেশের মঞ্চ নাটকে, টিভি নাটকে, চলচ্চিত্রে নিজেকে উজাড় করে দিয়েছিলেন। আরিফুল হক এমনই একজন অভিনেতা যিনি অভিনয়কে ভালোবেসে একসময় নিজের চাকরি ছেড়ে নিজেকে একজন পেশাজীবী অভিনেতা হিসেবেই গড়ে তুললেন। তার অভিনয় দিয়ে এদেশের দর্শককে মুগ্ধ করেছেন তিনি। তারপরও জীবনের প্রয়োজনেই তিনি ২০০০ সালে সপরিবারে কানাডায় স্থায়ী হন। ২০১২ সালে তিনি সর্বশেষ দেশে এসেছিলেন। সেই সময় হানিফ সংকেতের নির্দেশনায় ‘পাঁচফোড়ন’-এ অভিনয় করেছিলেন।
মজার ব্যাপার হলো এই অভিনেতা একজন সংগীতশিল্পী হিসেবেও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন। ছোটবেলা থেকেই ছিল গানের প্রতি প্রবল আকর্ষণ। তাই সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি কলকাতার দক্ষিণী সংগীত বিদ্যালয় থেকে রবীন্দ্রসংগীতের উপর চার বছরের ডিপ্লোামা কোর্সও সম্পন্ন করেছিলেন। কলকাতা থেকে ১৯৬৪ সালে ঢাকায় চলে আসেন। এখানে এসেও স্বপ্ন ছিল নিজেকে সংগীতশিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার। কিন্তু অডিশন দেওয়ার পর নানান জটিলতার কারণে আর হলো না।
একসময় টেলিভিশনে গান করার সুযোগ আসে। কিন্তু প্রয়াত আতিকুল হক চৌধুরীর নির্দেশনায় একুশে ফেব্রুয়ারির একটি নাটকে অভিনয়ের পর দর্শকের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পান। আর গানে ফেরা সম্ভব হয়নি। অভিনেতা হিসেবেই নিজেকে সামনের পথে এগিয়ে নিয়ে গেলেন। আর সাফল্যের পথ ধরে আজ তিনি অভিনয়ের কিংবদন্তি।
কথাচ্ছলে এক সাক্ষাতকারে এই অভিনেতা জানিয়েছিলেন আরো মজার ঘটনা। উপমহাদেশের জনপ্রিয় অভিনেতা উত্তম কুমারের সঙ্গে ‘উত্তরায়ণ’ ছবিতে অভিনয় করেই চলচ্চিত্রে তার অভিষেক ঘটেছিলো কলকাতায়। ছবিটি নির্মাণ করেছিলেন বিভূতি লাহা। খুব ছোট্ট একটি চরিত্রে আমি অভিনয় করেছিলেন তিনি। একই পরিচালকের ‘অন্তরাল’ ছবিতেও তার প্রধান নায়কের ভূমিকায় অভিনয়ের কথা ছিলো। কিন্তু পরে ঢাকায় চলে আসার কারণে সে ছবিতে আর কাজ করা হয়ে উঠেনি।
এদেশে আরিফুল হক অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবি হচ্ছে ‘লালন ফকির’, ‘সারেং বউ’, ‘বড় বাড়ির মেয়ে’, ‘সূর্য কন্যা’, ‘সুন্দরী’, ‘সখি তুমি কার’, ‘কথা দিলাম’, ‘নতুন বউ’, ‘এখনই সময়’, ‘পিতা মাতা সন্তান’, ‘তোমাকে চাই’ ‘দেশপ্রেমিক’, ‘ঘৃণা’, ‘স্বপ্নের নায়ক’ ইত্যাদি।’
একজন আরিফুল হকের কাছে অভিনয়ের অনেক কিছুই শেখার আছে। আরিফুল হক, আপনি ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, যেখানেই থাকুন যেভাবেই থাকুন।
এলএ/এবিএস