অমিতাভ ও আয়নার ভেলকিবাজি
‘বাংলা সিনেমার সুদিন ফিরছে!’ এটি মারাত্মক রকমের সিনেমাটিক এক ডায়ালগ বটে। প্রায় দশ বছর ধরে এমন কথা শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা! অন্যদিকে সিনেমায় সুদিন ফেরানোর কোনো আন্তরিক তাড়না নেই কারো মধ্যে। সিনেমা নির্মাণের বড় যে জায়গা, মানে এফডিসি এখনো নানা রোগে আক্রান্ত।
আবার কিছু আশা জাগানিয়া মানুষও এজন্য দায়ী কোনো অংশে কম নন। যেমন মনপুরা নির্মাতা। সাত বছরের বেশি সময় আগে মনপুরা ছবিটি দর্শক মহা উল্লাসে সিনেমা হলে গিয়ে দেখেছে। সমালোচকরা সেই সময়ও বলেছিলেন সুদিন ফিরছে বাংলা ছবির। কিন্তু দেখুন ২০০৯ সালের পর গত সাত বছরে ‘মনপুরা’ নির্মাতা আর কোনো সিনেমাই নির্মাণ করলেন না! যাদের প্রতি দর্শকের এক ধরনের আস্থা তৈরি হয়, যারা ভরসা রাখতে শেখান তাদের দীর্ঘ সময় নীরব থাকাটা অন্যায়। নির্মাণে তাদের ভেলকি নিয়মিত না করতে পারলে ‘বাংলা সিনেমায় সুদিন ফিরছে’ ডায়ালগটি বছরের পর বছর মানুষের মুখে লেগেই থাকবে; কিন্তু সেই সুদিনের মুখ আর দেখা হবে না!
যাদের বোধ আছে, সিনেমাটা যারা বোঝেন এবং এ অঞ্চলের মানুষের বদলে যাওয়া রুচি যারা ধরতে পারবেন তারা সিনেমা নির্মাণ করলে দর্শক সিনেমা হলে যাবেই। ‘আয়নাবাজি’ যেন তারই এক মহা দৃষ্টান্ত।
মূল পর্বে যাবার আগে খুবই অপ্রাসঙ্গিকভাবে এখানে আমাদের সময়ের গুরুত্বপূর্ণ নির্মাতাদের হাস্যকর একটি দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েও একটু বলে নেয়া যায়। তা হচ্ছে নতুন সিনেমার আলোচনা। ইদানিং আমাদের সিনেমা নির্মাতাদের কেউ কেউ সিনেমা রিভিউতে নিতে পারছেন না। মানে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা নিয়ে সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে কেউ আলোচনা করুক, কথা বলুক এটা চান না তারা। তাদের দাবি, রিভিউগুলো দর্শকদের সিনেমা হলবিমুখ করে দেয়। দর্শক সিনেমার প্রতি ইন্টারেস্ট হারিয়ে ফেলেন। এটা খুবই খারাপ ও ভুল ধারণা নির্মাতাদের। এই অর্থে যে, তারা ধরেই নিচ্ছেন রিভিউ মানে সিনেমার নেতিবাচক আলোচনা! কিন্তু রিভিউতো ইতিবাচকও হতে পারে। হলিউড-বলিউডের দেশের বিভিন্ন প্রসিদ্ধ অনলাইনে কোনো নতুন সিনেমা মুক্তির প্রথম দিন থেকেইতো রিভিউ ছাপা হয়। তাদের কি তাহলে দর্শক টানাপড়েনে পড়তে হয়? হয়তো পড়তে হয়, হয়তো না!
শুধু তাই নয়, একসময় আমাদের দেশেও নির্মাতারা অপেক্ষা করতেন কবে কোথায় তাদের ছবির রিভিউ প্রকাশ হবে। তার ছবিটি সম্পর্কে ভালো-মন্দ জানবেন দর্শক। আসবেন হলে। বাঙালি সিনে-দর্শকের মন হলবিমুখ না হোক চাওয়া থেকেই সিনেমা মুক্তির সপ্তাহ পরে ‘আয়নাবাজি’ নিয়ে কিছু বলার দুঃসাহস দেখানো গেল। তো চলুন দেখি অমিতাভ রেজা ‘আয়নাবাজি’র মধ্য দিয়ে বাংলা সিনেমার দুয়ারে কি পয়গাম নিয়ে আসলেন...
গল্প বা কাহিনী একটা সিনেমার শরীর। বিশেষ করে নির্মাণের চেয়ে গল্পকেই এই অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়। অমিতাভ রেজা যখন সিনেমা নির্মাণের ঘোষণা দিলেন তখন থেকেই হয়তো কিছু কিছু মানুষ গতানুগতিকতার বাইরে ভিন্ন ধারার একটি সিনেমার প্রত্যাশায় ছিলেন। আর অমিতাভ রেজা তার প্রথম সিনেমা হিসেবে এমন এক গল্পকে টার্গেট করলেন, যা একেবারেই বাংলা সিনেমার প্রেক্ষাপটে পুরোপুরি উদ্ভট! ভিন্ন ধারার সিনেমার মানে আমাদের মতো অনেকের কাছে নারীর ক্রাইসিস, ঐতিহ্য হারানোর হাহাকার, সামাজিক ত্রুটি-বিচ্যুতি দায়বদ্ধতা ইত্যাকার বিষয় বলে প্রতিষ্ঠা পাইয়ে দিচ্ছিলেন কেউ কেউ। সেই ধারণা যেন নিখাদ একটা আজগুবি গল্প চিত্রায়নের মধ্য দিয়ে মুহূর্তে উগরে ফেলে দিল অমিতাভ রেজার আয়নাবাজি! যে গল্পের বীজ হয়তো এই সমাজের কোথাও নেই। কিংবা আছে প্রত্যেকের মধ্যে!
হ্যাঁ। আয়নাবাজি কারো কারো কাছে একটি উদ্ভট গল্পের চিত্রায়ন বলেই মনে হতে পারে। তা না হলে কে আগে ভেবেছিল যে ‘হিপনোটাইজ’র ওপর ভিত্তি করে কেউ একজন আস্ত একটা সিনেমা বানিয়ে ফেলবেন! তাও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত কোনো বোদ্ধা সিনেমা চিত্রনাট্যকার বা নির্মাতা নন; বরং সিনেমার দুনিয়ায় একেবারে নবজাতক দুই শিশু গাউসুল আজম শাওন এবং অমিতাভ রেজা।
হিপনোটাইজ মানে হচ্ছে সম্মোহন! জাদু বিদ্যার অপরিহার্য অস্ত্র! যার দ্বারা মানুষকে রিড করে তার ভেতরে ঢুকে যাওয়া সম্ভব। মানে যার ওপর এই বিদ্যা প্রয়োগ করছেন তাকে যন্ত্র হিসেবে পরিণত করে তার পুরো নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়া। তারপর প্রোগ্রামগুলো নিজের মতো সেট করে দিয়ে মনের বিভিন্ন স্তরে ঘোরাফেরা করা। ফলে আপনি যাই বলেন না কেন হিপনোসিস ব্যক্তির কাছে সবকিছুই নির্মল সত্য বলে প্রতীয়মান হয়। আয়নাবাজির নায়ক শরাফত আয়না যেমন যখন তখন যে কারো মনের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিতে পারেন অনায়াসে। এখন আপনি আমি যতই আয়নাবাজিকে উদ্ভট গল্প বলে প্রচার করার চেষ্টা করি এই ব্যাপারটা কিন্তু যথেষ্ট বিজ্ঞানসম্মতও। কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদ তার কোনো আত্মজীবনী বইয়ে হিপনোটাইজিংয়ের চমৎকার বর্ণনা দিয়েছিলেন।
আয়নাবাজি একটি চমকের ওপর দাঁড়ানো এবং চমকটা হচ্ছে সম্মোহন। ভোজবাজি। ঘোরগ্রস্ততা! আর সেটা নির্মাতা অমিতাভ রেজা সিনেমায় নায়কের পা ফেলার প্রথম দৃশ্যেই দেখিয়েছেন। দৃশ্যে নায়ক অায়না এবং মাছ বিক্রেতাকে দেখি। মাছ বিক্রেতা আজ বাউস মাছ নিয়ে বসেছেন। চড়া মূল্য। আয়নার মতো গোবেচারা এত দাম দিয়ে বাউস মাছটা নিতে পারবে না বলেই আশঙ্কা করছে মাছ বিক্রেতা। সেটা অায়নাকে জানিয়েও দেয় সে! মাছ বিক্রেতার এমন অাশঙ্কার পরই আসলে আয়না চরিত্রটি খোলাসা করেন নির্মাতা। কথার জাদুতে মাছ বিক্রেতাকে ভাজা ভাজা করে সেই চড়া মূল্যের মাছটিই বাজারের ব্যাগের সাথে ঝুলিয়ে ঝুলিয়ে আমরা নিয়ে যেতে দেখি আয়নাকে! এটা আসলে সম্মোহনের শক্তি! হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার সম্মোহনের শক্তি যেমন থাকে তার বাঁশির সুরে, তেমনি আয়নার শক্তি কথায়। কথা দিয়েই মানুষকে তিনি আচ্ছন্ন করে ফেলেন। ঘোরগ্রস্ত করে ফেলেন। ফেলতে পারেন বুদ্ধির ফাঁদে! কথার ইন্দ্রজাল তৈরিটাই তার প্রধান শক্তি। এমন ইঙ্গিত দিয়েই মূলত সিনেমার শুরু।
এরপর ধীরে ধীরে আয়না আরো ভয়ঙ্কর সম্মোহনের দিক উম্মোচিত হয়। দর্শক যে আয়নাকে কিছু ছিন্নমূল শিশুদের অভিনয় শিক্ষক হিসেবে জানতো সেই আয়নাকেই সমাজের বিভিন্ন ক্যারেক্টারের হয়ে চুক্তিতে জেল খাটতে দেখে ভিমড়ি খায়। মাঝে মধ্যে উধাও হয় আয়না। চারপাশের মানুষেরা জানে সে দূরে জাহাজে যায়। সমুদ্রের বিশাল ঢেউ উপেক্ষা করে জাহাজের মাস্তুল ধরে থাকে সে! মাস তিনেক জাহাজ চালিয়ে প্রচুর অর্থকড়ি নিয়ে বাড়ি ফিরে। অথচ বাস্তবিক অর্থে জাহাজ চালানোর সময় কাটে তার জেলখানায় বসে। কখনো নারীখোর লম্পট প্রভাবশালীর চরিত্রে, কখনো খুনী গেম সিকার আবার কখনো ফাঁসির আসামি রাজনৈতিক নেতার চরিত্রে দেখা মেলে আয়নার। সম্মোহনী শক্তি প্রয়োগে সবকিছু থেকে বের হয়ে আসলেও রাজনৈতিক নেতা নিজাম সাঈদ চৌধুরী নামের এক ফাঁসির আসামির চরিত্র করতে গিয়ে ফাঁদে পড়েন তিনি। কিন্তু নির্মাতার অনেক শক্তি। তিনি সবকিছু আগে থেকেই ছক কষে রেখেছেন। ফলে শরাফত আয়নার কিচ্ছুটি হয় না! যেরকমটা মসলাদার কমার্শিয়াল সিনেমায় হর হামেশাই হতে দেখি আমরা।
কমার্শিয়াল সিনেমায় নায়ক সবকিছু ছাপিয়ে একমাত্র হয়ে উঠেন নির্মাতার কৃপায়। অমিতাভ রেজাও তার আয়নাবাজিতে নায়কের প্রতি সেই কৃপা এড়াতে পারেন নাই। ছবিতে নায়ক আয়নার একচ্ছত্র আধিপত্য দর্শক দেখছেন। কোনোবারই আয়না ফাঁদে পড়েন নাই। এমনকি শেষতক যে মনে করা হয়েছিল আয়নার ইচ্ছার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক নেতা নিজাম সাঈদ চৌধুরীর চরিত্র রোল প্লে করতে গিয়ে ফাঁসি হতে পারে। আর সে সম্ভাবনাও আয়নাকে রজনীকান্তের মতো নায়ক করতে গিয়ে নির্মাতা উড়ায়ে দিছেন।
আয়না নায়ক হলেও সে কিন্তু অপরাধীই। কিন্তুু তার প্রতি মানুষের সহানুভূতি আদায় করতে নির্মাতা একটা মানবতার গল্পও ফেঁদেছেন। যেটা সিনেমার শুরুতে ক্যান্সার বিষয়ক কথাবার্তায় এবং শেষের দিকে যা আয়নার মায়ের প্যাথেটিক অবস্থার বর্ণনার মধ্য দিয়ে নিঃষ্পত্তি হয়। অন্যদিকে মেইনস্ট্রিম সিনেমায় যেমন নায়ক তার নায়িকার প্রেমে পরে ক্রিমিনাল পরিবেশ থেকে সুন্দর জীবনের দিকে পা ফেলান, তেমন করে এই ছবিতেও আয়নাকে প্রেমেও ফেলছেন নির্মাতা। হৃদি নামের এক মেয়ের প্রেমে পরে হিপনোটিস্ট আয়না। এবং প্রেমে পরার পর সেও যথারীতি হিপনোটাইজকে অপরাধ জ্ঞান করে এ রাস্তা থেকে বের হয়ে আসার চেষ্টা করে প্রাণপনে। পুরনো বাসা পরিবর্তন পর্যন্ত করেন। কিন্তু আয়না চাইলেই কি সেই চক্র থেকে বের হয়ে আসা সম্ভব? যেরকম মসলাদার সিনেমায় আন্ডারওয়ার্ল্ড জগতের ডন সুস্থ জীবন প্রত্যাশি নায়ককে শাসিয়ে দেন এই বলে যে, এ রাস্তায় ঢুকা সহজ কিন্তু বের হওয়া ততোধিক কঠিন! কিন্তু নায়কের জন্যে পৃথিবীর কোনো কঠিনই কঠিন না। বরং সিনেমার পরতে পরতে ভেলকি দেখান নায়ক আয়না।
সিনেমার গল্পতো ভেলকির উপরই। সেইসাথে ছবির সিনেমাটোগ্রাফিতেও কিন্তু কম ভেলকি দেখাননি ছবির চিত্রগ্রাহক রাশেদ জামান। যেমন ধরুন, আপনি ঢাকা শহরের যে বাজারেই যান না কেন সেখানে ঢুকলেই হয়তো আপনার গা ঘিন ঘিন করে। বিরক্তিকর লাগে মাছের মলটি কিংবা ঘুপচিতে মুরগির ধাপাধাপিও কম বিরক্তির না! অথচ রাশেদ জামানের ক্যামেরায় ছবিতে যে বাজার আমরা প্রায়শই দেখি। মানে যেখানে বাজার করতে দেখি আয়না এবং হৃদিকে, সে বাজারটি কতো নির্মল সতেজ হয়ে উঠে আয়নাবাজিতে। মাছ মুরগি মিষ্টি কুমড়া আর আলু পেয়াজের বাস্তবের সেই বিরক্তিকর বাজারটিও চাকচিক্যময় হয়ে উঠে। পরিবারের চাপাচাপি স্বত্ত্বেও আপনি হয়তো কখনোই বাজার করেননি, কিন্তু আয়নাবাজি সিনেমা দেখার পরদিনই হয়তো দেখা গেল ব্যাগ নিয়ে আপনি বাজারে ছুটছেন...! এছাড়া সদরঘাটের ব্যস্ততা, পারাপার, পুরান ঢাকার সৌন্দর্য, শহুরে বৃষ্টির দৃশ্য, কিংবা ছবিতে জেলখানার ভেতরের যে নান্দনিকতার আমেজ ফুটিয়ে তুলেছেন তা বাংলা সিনেমায় বিরল!
আয়না চরিত্রটি ঘিরেই বাকি সব চরিত্রদের আবতর্ন বির্বতন। ফলে সবার থেকে আয়না চরিত্রে সবচেয়ে ভালো অভিনয়টা চঞ্চল চৌধুরীকে করতেই হতো। না পারলেও! কিংবা এই চরিত্রে যাকেই নির্মাতা কাস্ট করতেন না কেনো, একেবারে পরিপক্ক অভিনেতা ছাড়া আয়না চরিত্রটি সম্ভব ছিলো না। চঞ্চল চৌধুরী শতভাগ পরিপক্কতার সাথেই শরাফত আয়নাকে উপস্থাপন করতে পেরেছেন। অন্যদিকে হৃদি চরিত্রে নাবিলা, সাংবাদিক চরিত্রে পার্থ বড়ুয়া তাদের সেরাটা দিয়েছেন বলেই মনে হলো। আসলে আয়না চরিত্রটি সবার এতো মনযোগ প্রত্যাশা করে যে বাকি চরিত্রগুলোকে একেবারে গৌণ করে দেয়। কিন্তু তারপরও ছোট ছোট চরিত্রে লুৎফর জর্জ, আরেফিন শুভ, বিজরী বরকতউল্লাহ, বৃন্দাবন দাশ, মিরাক্কেলের জামিল, গাউসুল আজম শাওন এবং হলিউড স্টুডিওর বাচ্চা ছেলেটাকে মানুষের মনে থাকবে।
অন্যদিকে ছবির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে আবহ সংগীত। কাহিনীর সাথে কানেক্টেড থাকলে যে কারো স্নায়ু দুর্বল করে দিবে মুহূর্তেই। একটা ঘোরগ্রস্ত আবেশ তৈরি করতে আয়নাবাজির চেয়ে ভালো আবহ সংগীত আর হতেই পারে না।
আর এইসব বিচারে সাহস করে আয়নাবাজিকে বাংলা সিনেমার ইতিহাসে একটা কমপ্লিট সিনেমা বলে ফেললে বোধহয় খুব একটা অত্যুক্তি হবে না। সেইসাথে বাংলা সিনেমার প্রেক্ষিতে অমিতাভ রেজার আদলটা হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার। যার সুরে মোহাচ্ছন্ন হয়ে দলেবলে বাংলার মানুষ সিনেমা হলে ঝাঁপিয়ে পড়ছে। যদিও জানি, একজনের দ্বারা কখোনই সর্বেসর্বা হয়ে উঠা সম্ভব নয়। মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি, অমিতাভ রেজা চৌধুরী যতোই কর্মঠ আর সৃষ্টিশীল হোন না কেনো তার একার দ্বারা কখনোই সম্ভব হতো না আয়নাবাজিকে একটি পরিপূর্ণ সফল ছবি হিসেবে নামিয়ে ফেলা। প্রি-প্রোডাকশন থেকে পোস্ট-প্রোডাকশনে প্রত্যেকে নিজেদের কাজটা ঠিকঠাকভাবে করেছেন বলেই এমন সফলতা পকেট জমা করতে পেরেছেন। সেই স্বাক্ষর আয়নাবাজির পুরো শরীরে লেগে আছে।
গল্প, ডায়ালগ, অভিনয়, সিনেমাটোগ্রাফি, আবহ সংগীত সব মিলিয়ে বাংলাদেশে ইদানিংকালে অন্যতম সফল ছবি হিসেবে পরিপূর্ণতা পাওয়ার দাবি রাখে আয়নাবাজি। প্রিন্টিং এবং প্রমোশনেও যে মুন্সিয়ানা দেখা গেছে তা বাংলাদেশের সিনেমা প্রচারণায় বিরল। এখন শুধু এইসব ‘বিরল’ ঘটনাগুলো নিয়মিত অভ্যাসে পরিণত করতে হবে। এক সিনেমার সফলতা সাঙ্গ করে হাত গুটিয়ে সময় নষ্ট করার সময় নেই কারো। বড় নির্মাতার ভেক ধরে থাকারও সময় নেই। এখন সময় ফাইটিংয়ের। তো, হে নির্মাতা! বলুন, অ্যাকশন...! এবং বাংলা সিনেমার জন্য তা বলতেই থাকুন। আর আমরা তো অনেককাল ধরেই বলার অপেক্ষায় আছি, বাংলা চলচ্চিত্রে- বসন্ত এসে গেছে.....!
এলএ/আরআইপি