ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিনোদন

দর্শকের রুচি বদলেছে বলেই নাটক বদলেছে : নিশো

নাহিয়ান ইমন | প্রকাশিত: ১০:২৭ এএম, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬

জনপ্রিয় অভিনেতা আফরান নিশো। শোবিজে তার শুরুটা মডেলিং দিয়ে। এরপর মডেলিং থেকে আসেন নাটকে। নানামাত্রিক সব চরিত্রে টিভি পর্দায় তার উপস্থিতি বরাবরই দর্শকদের কাছে বাড়তি আগ্রহের বিষয়। গেল ঈদে নিশো অভিনীত প্রায় ডজন খানেকের বেশি নাটক প্রচারিত হয়েছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, তার অধিকাংশ নাটকই দারুণ প্রশংসিত হয়েছে। কেউ কেউ দাবি করছেন, এবারের ঈদে স্বস্তা জনপ্রিয়তার বাইরে গিয়ে মানসম্পন্ন গল্পের নাটকে অভিনয় করা অভিনেতাদের মধ্যে সবার চেয়ে এগিয়ে নিশো।
ঈদের পর ক’দিন বিশ্রাম নিয়ে আবারো ব্যস্ত হয়েছেন এই অভিনেতা। তারই ফাঁকে নিশো কথা বললেন জাগো নিউজের বিনোদন বিভাগে। সঙ্গে ছিলেন স্টাফ রিপোর্টার নাহিয়ান ইমন ও আলোকচিত্রী মাহবুব আলম

জাগো নিউজ : কেমন আছেন?
নিশো : এইতো ভালো আছি। তবে কিছুদিন আগে পা মচকে গেছিলো। বেশ কিছুদিন অসুস্থ হয়ে কিছুটা বেকায়দায় পড়েছিলাম। ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে এখন পুরোপুরি সুস্থ। আবারো কাজে ফিরেছি। পুরনো ব্যস্ততার দেখা পেয়েছি।

nisho

জাগো নিউজ : এবারের ঈদে আপনার অভিনীত নাটকগুলো দেখেছেন?
নিশো : সবগুলো দেখা হয়নি। কয়েকটি নাটক দেখেছি। ভালোই লেগেছে। বাকিগুলো দেখে নেব ইউটিউব থেকে।

জাগো নিউজ : ঈদে আপনার নাটকগুলোর খুব প্রশংসা হচ্ছে। কেমন লাগছে?
নিশো : আসলে কাজ করে সেটার জন্য দুটো ভালো কথা শুনতে পেলে সবারই ভালো লাগে। আমারও লাগছে। আমি চেষ্টা করি একজন অভিনেতা হিসেবে নিজের চরিত্রটি সাবলীলভাবে ফুটিয়ে তুলতে। তার ফলস্বরূপ ‘স্বপ্নকুহক’, ‘ট্যাটু’, ‘তুমি না থাকলে’, ‘প্রতিক্ষা’, ‘ভালবাসার গল্পসমগ্র’, ‘ভূতের ভ্যালেন্টাইন’ ইত্যাদি নাটকগুলোর জন্য অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছি। প্রতিটি নাটকের চরিত্র এবং গল্প ছিল একেবারেই ব্যতিক্রম। ঈদে এত এত নাটক-টেলিফিল্ম আর তারকাদের ভিড়ে আমার অভিনীত কাজগুলো দেখেছেন, প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন- এ সত্যি আমার জন্য বিশেষ প্রাপ্তি। এভাবে সবার ভালোবাসা পেতেই কাজ করে যেতে চাই।

জাগো নিউজ : বেশ বৈচিত্র্যময় চরিত্রে কাজ করেন আপনি। চরিত্রে প্রবেশ করতে আপনার মনোযোগ ও প্রস্তুতিরও বেশ সুনাম রয়েছে নাটক পাড়ায়। চরিত্রে চরিত্রে নিজেকে কেমন করে বদলে নেন?
নিশো : আমি নিজেই সবসময় একটু ব্যতিক্রমভাবে হাজির হতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। আর ভিন্ন সব চরিত্রে নির্মাতা আমাকে কাজের সুযোগ দেন বলেই হয়তো আমি কিছু করার চেষ্টা করি। সেজন্য নির্মাতাদের ধন্যবাদ। ধন্যবাদ জানাই চিত্রনাট্যকারদেরও; যারা আমাকে নিয়ে এমন সব চরিত্রদের ভাবেন যেখানে নিজেকে প্রমাণের সুযোগ পাই আমি। আর একটা বিষয় হচ্ছে, একজন অভিনেতা যে চরিত্র পাবেন সেটা থেকে দর্শকদের নতুন কাছে নতুন কিছু পৌঁছানোই অভিনয়ের মূল কথা।

nisho

জাগো নিউজ : নাটকে হিরোগিরির চাইতে একজন অভিনেতা নিশোকেই বেশি উপভোগ করেন দর্শক। এটাকে আপনি কীভাবে দেখেন....
নিশো : এটাই আমি চাই। কেননা, একজন অভিনেতাই হতে চেয়েছি সবসময়। নায়িকার সঙ্গেই প্রেম করলেই নায়ক বলতে হবে এমন নিয়ম এই উপমহাদেশ ছাড়া আর কোনো ইন্ডাস্ট্রিতে নেই। সবখানেই অভিনয়ের মূল্যায়ন চলে। আর আমাদের এখানে নায়ক-নায়িকার কদর। তাছাড়া একজন প্রকৃত অভিনেতাকে যে শুধু নায়ক হয়ে অভিনয় করতে হবে এমন তো কথা নেই। আমি মনে করি, একটা সময় শেষে হিরোগিরির দিন ফুরাবে। তখন হিরোর স্বভাব থেকে গেলেও হিরো হয়ে কাজের সুযোগ হবে না। কিন্তু একজন অভিনেতা কোনোদিন কাজের জন্য হতাশ হন না। তাই আগে অভিনেতা। পরে একজন অভিনেতা হিরো হতে পারেন, মুচি হতে পারেন, ট্যাক্সি ড্রাইভারও হতে পারেন। তাই আমি মনে করি কেউ যদি ক্যারিয়ার সচেতন হন তবে অবশ্যই তাকে ভার্সেটাইলিটি দেখাতে হবে। আমিও অভিনয়টাই করে যেতে চাই।

জাগো নিউজ : বর্তমান নাটক নিয়ে আপনার মূল্যায়ন...
নিশো : অনেকেই বলেন নাটকের মান পড়ে গেছে। আমার কাছে সেটা মনে হয়না। বরং মনে হয় নাটকের মান আরো বেড়েছে। আগে যে সব ভালো নাটক হতো তা কিন্তু না। একটা উদাহরণ দেই- যখন মানুষের ক্ষুধা লাগে তখন যে কোনো খাবার তার মুখে সুস্বাদু লাগে। আর পেটে ক্ষুধা না থাকলে টেবিল ভর্তি খাবার সাজানো থাকলেও কনফিউশনে পড়ে যায় কোনটা ভালো আর কোনটা মন্দ খাবার। ঠিকই তেমনি আগে চ্যানেলের সংখ্যা ছিল একেবারেই সীমিত। সেজন্য নাটক যা প্রচার হতো ভালো লাগতো। এখন তো অনেক চ্যানেল সেজন্য ভালো নাটকগুলো সঠিকভাবে মন্দের ভিড়ে হারিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু অনেক ভালো নাটক নির্মাণ হচ্ছে। অনেকেই দারুণ নির্মাণ করছেন, মুগ্ধ হবার মতো অভিনয় করছেন। একতরফা কিছু বলা ঠিক নয়।

nisho

জাগো নিউজ : আগে তো অনেক জীবনমুখী নাটক নির্মাণ হতো। এখন সেটা দেখা যায় না বললেই চলে। কেন?
নিশো : মানুষের রুচির ওপর নির্মাতারা নাটক নির্মাণ করেন। আগের চেয়ে মানুষ এখন প্রযুক্তিনির্ভর। নির্মাতা যে নাটক নির্মাণ করেন সেটা সময়োপযোগী হয়ে থাকে। যেমন আগে উঁকি দিকে পেছনে ঘুরে তারপর প্রেমের প্রস্তাব দেয়া হতো, আর এখন কি করা হয় সেটা সবাই জানেন। মোটকথা সময়ের সাথে সাথে মানুষেরে হিউমারের পরিবর্তন হয়েছে। এখন দর্শক ফ্যান্টাসি পছন্দ করেন, হাসতে পছন্দ করেন। তাই নির্মাণও হচ্ছে তেমনি। তবে কিছু নাটক-টেলিফিল্ম মাঝেমধ্যে হতাশ করে যায়। গল্পের প্রতি নজর না দিয়ে তারকা খ্যাতি কাজে লাগানো দর্শকদের ঠকানোর মতো।

জাগো নিউজ : আপনার অভিনয়ের আদর্শের কেউ আছেন?
নিশো : আমি একজন অভিনেতাকে আদর্শ হিসেবে মানি। তিনি হচ্ছেন অকাল প্রয়াত হুমায়ূন ফরিদী। তার অভিনয় আমাকে উৎসাহ দেয়। অভিনেতা হিসেবে তিনি আমার কাছে বিশ্বসেরা।

জাগো নিউজ : নির্মাতা হওয়ার ইচ্ছে আছে?
নিশো : পরিচালনার জায়গাটা খুব সৃষ্টিশীলতার। আমি এটাকে সম্মান করি। এটা আমার কাছে খুবই লোভনীয় কাজও মনে হয়। আমি জানি, নির্মাতা হওয়ার অনেক সুযোগ আছে আমার জন্য। কিন্তু আমি এটা এখনই কাজে লাগাতে চাইনা। এর জন্য আগামীতে আরো ভাবার সময় আছে।

nisho

জাগো নিউজ : আপনার সমসাময়িক অনেকেই চলচ্চিত্রে কাজ করছেন। অথচ আপনাকে এখনো দেখা যায়নি। কেন? চলচ্চিত্রে কাজের ইচ্ছে নেই?
নিশো : অবশ্যই ইচ্ছে আছে। তবে আমাদের এখন যে ধারাটা চলছে এই ধারার কোনো ছবিতে আমি কাজ করতে চাইনা। আমার কাছে চলচ্চিত্রে অভিনয় করার প্রচুর প্রস্তাব আসে। কিন্তু এখনকার ছবিতে সৃষ্টিশীলতার জায়গাটি কমে গেছে। যারা সৃষ্টিশীল ছবি বানান তাদের ছবি চলে না হলে। আর ব্যবসা সফল বা সুপারহিট বলতে যা ছবি হচ্ছে নব্বভাগই কপি-পেস্ট কারবার। আমি এটা ভীষণ অপছন্দ করি। আমার কথা হচ্ছে, আমার কি গল্পের অভাব হয়েছে যে অন্যের গল্প কপি মেরে ছবি বানাতে হবে! আমাদের নিজস্ব একটা সংস্কৃতি আছে। সেটা থেকে হাজারো গল্প বের করা যায়। সেগুলোও সুপারহিট হতে পারে। তবে আশার কথা হলো ইন্ডাস্ট্রিতে এখন অনেক নতুনরা আসছেন যারা মৌলিক গল্প বের করে আনছেন। আবার অনেকেই যারা আছেন সঠিক যোগাযোগের অভাবে তাদের মেধা কাজে লাগাতে পারছেন না। ছোট বেলায় দেখেছি আমাদের মা-খালারা কত আগ্রহ নিয়ে ছবি দেখতেন। অথচ এখন মানুষ হলে যেতে চায় না। ঘরে বসেও টিভিতে দেখেন না। আবার পুরনো ছবিগুলো প্রচার হলে ঠিকই দেখেন। তার মানে মানুষের ভাবনা আমাদের চলচ্চিত্রে ফুটে উঠছে না। চলচ্চিত্রকে সবার মাঝে আবারো ছড়িয়ে দিতে হলে এখানে গল্প বাছাইয়ে আরো মনযোগী হতে হবে। চাকচিক্যের নির্মাণ দিয়ে চোখ জুড়ালেও মন ভরে না। মন ভরানোর মতো কাজের সুযোগ পেলে আমি চলচ্চিত্রে কাজ করতে চাই।

এনই/এলএ/আরআইপি

আরও পড়ুন