অনন্যা শীর্ষ দশ সম্মাননা পেয়ে গর্বিত অপর্ণা
নারীর চোখে বিশ্ব দেখার প্রত্যয় নিয়ে ‘পাক্ষিক অনন্যা’ পথচলা শুরু করেছিলো ১৯৮৮ সালে। সাফল্যের ২৮ বছর অতিক্রম করছে ম্যাগাজিনটি। সাহিত্য, রাজনীতি, বিনোদন, লাইফস্টাইলসহ নানা বিষয় নিয়ে প্রতিবেদন ছাপা হয় এখানে।
পাশাপাশি সাফল্যের নানা ক্ষেত্রে নারীদের উৎসাহিত করতে এবং তাদের অর্জনকে স্বীকৃতি দিতে প্রতি বছর ‘পাক্ষিক অনন্যা’ ১০ জন নারীকে ‘অনন্যা শীর্ষ দশ সম্মাননা’ প্রদান করে। এই সম্মাননা প্রদান পর্বেরও দুই যুগপূর্তি হয়েছে এবার।
প্রতিবারের মতো অনন্যা এবারও পুরস্কৃত করেছে শীর্ষ দশ নারীকে। আর সেই সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন জনপ্রিয় মডেল ও অভিনেত্রী অপর্ণা ঘোষ। আজ শনিবার (৩ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ফার্মগেটে অবস্থিত কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট অডিটোরিয়ামে অপর্ণার হাতে অনন্যা পুরস্কার তুলে দেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং বর্তমানে সংসদ সদস্য ডা. দীপু মনি, সফল নারীনেত্রী এবং মানবাধিকারকর্মী খুশি কবির ও ডাকসুর সাবেক ভিপি অধ্যাপক মাহফুজা খানম। এসময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন ‘পাক্ষিক অনন্যা’র সম্পাদক ও অনুষ্ঠানটির সভাপতি তাসমিমা হোসেন।
অনুষ্ঠানটি শুরু হয় জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে। পুরস্কার প্রদান পর্বে ‘অনন্যা শীর্ষ দশ সম্মাননা-২০১৫’ পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী অপর্ণা ঘোষকে উত্তরীয় পরিয়ে দেন খুশি কবির, তার হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন ডা. দীপু মনি এবং সনদ তুলে দেন ডাকসুর সাবেক ভিপি অধ্যাপক মাহফুজা খানম।
পুরস্কার হাতে নিয়ে উচ্ছ্বসিত অপর্ণা মঞ্চে এসে আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, ‘ভয় লাগছে। চারদিকে এত বড় গুণী আর নন্দিত নারীরা বসে আছেন। এখানে অনেকেই আছেন যাদের কর্ম ও সাফল্য দেখে আমি অনুপ্রাণিত হয়েছি বারবার। আজ তাদের পাশে, তাদের সঙ্গে, তাদের হাত ধরেই অনন্যা সম্মাননা পেয়ে আমি গর্বিত। এটি আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ একটি স্বীকৃতি হয়ে থাকবে। এর যোগ্য আমি নই কি না বুঝতে পারছি না। তবে অল্পদিনের ক্যারিয়ারে চেষ্টা করেছি সবসময় নিজেকে একজন অভিনেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে। চেষ্টা করেছি নারীর উন্নয়ন ও নারীর অধিকার-স্বাধীনতা নিয়ে কিছু কাজের সঙ্গে জড়িত হতে। সেই ভাবনা থেকেই ‘মৃত্তিকা মায়া’, ‘সুতপার ঠিকানা’র মতো ছবিতে কাজ করেছি। তার ফলস্বরূপ এই অনন্যা পুরস্কার প্রাপ্তি আমাকে আন্দোলিত করেছে। আমাকে আরো সামনে এগিয়ে যাবার তাগিদ দিয়েছে।’
তিনি অনন্যাকে ধন্যবাদ দিয়ে বলেন, ‘নারীদের অনুপ্রাণিত করতে নানা অঙ্গনে সফল নারীদের সম্মান জানানোর যে প্রক্রিয়া দীর্ঘদিন ধরে অনন্যা চালু রেখেছে সেজন্য অনন্যার প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল।’ এসময় তিনি নিজের পরিবার, কর্মস্থলে পুরুষ সহকর্মীদের সহযোগিতার কথা উল্লেখ করেন। তিনি দাবি করেন, ‘আমার প্রথম নায়ক আমার বাবা। আমার প্রথম শিক্ষক আমার বাবা। আমার সব কাজের অনুপ্রেরণাও আমার বাবা। নারী-পুরুষের বিভাজন নয়, তিনি আমাকে শিক্ষা দিয়েছেন মানুষ হতে। মানুষের জন্য কিছু করতে।’
অপর্ণা ঘোষ ২০০৬ সালে লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতায় সেরা পাঁচের একজন নির্বাচিত হয়ে শোবিজে পা রাখেন। তিনি বর্তমান প্রজন্মের জনপ্রিয় একজন টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র অভিনেত্রী-মডেল। কাজ করছেন মঞ্চেও। থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নম্বর (২০০৯) চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্রে অভিষেক। বেশ কিছু টেলিভিশন ধারাবাহিক এবং খণ্ড নাটকে অভিনয়ের পাশাপাশি ‘মৃত্তিকা মায়া’, ‘সুতপার ঠিকানা’ ও ‘মেঘমল্লার’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে প্রশংসিত হয়েছেন। বর্তমানে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের উপর ভিত্তি করে নির্মিতব্য চলচ্চিত্র ‘ভুবন মাঝি’ চলচ্চিত্রে ওপার বাংলার পরমব্রত চ্যাটার্জির বিপরীতে অভিনয় করছেন।
অপর্ণা ২০১৩ সালে মৃত্তিকা মায়া চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ সহ অভিনেত্রীর জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। ২০১৫ সালে তার অতি উল্লেখযোগ্য কাজ হলো নারীনির্ভর চলচ্চিত্র সুতপার ঠিকানা’র কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয়। ছবিটি দেশে ও বিদেশে প্রশংসিত হয়েছে। তিনি শেকসপিয়ার রচিত ওথেলো, দ্য মার্চেন্ট অব ভেনিসসহ বেশ কয়েকটি মঞ্চনাটকে অভিনয় করেছেন। অপর্ণা বসুন্ধরা কর্পোরেট, প্রাণ সস, অটবি, নিডো, প্যারাসুট নারিকেল তেল, হোয়াইট প্লাস টুথপেস্ট ইত্যাদি বাণিজ্যিক পণ্যের বিজ্ঞাপনচিত্রে মডেল হিসেবে কাজ করেছেন।
এছাড়াও ‘অনন্যা শীর্ষ দশ সম্মাননা-২০১৫’ সম্মাননা পেয়েছেন আরো নয় নারী। তারা হলেন- লুভা নাহিদ চৌধুরী- মহাপরিচালক (বেঙ্গল ফাউন্ডেশন), সোনিয়া বশির কবির- ব্যবস্থাপনা পরিচালক (মাইক্রোসফট বাংলাদেশ), ওয়াসফিয়া নাজরীন- পর্বতারোহী, মালিহা এম কাদির- ব্যবস্থাপনা পরিচালক (সহজ.কম), অণিমা মুক্তি গমেজ- সংগীতশিল্পী, সুপ্রীতি ধর- সম্পাদক-কর্ণধার (উইমেন চ্যাপ্টার), মাবিয়া আক্তার ও মাহফুজা খাতুন শিলা- খেলাধুলা, উম্মে তানজিলা চৌধুরী মুনিয়া- শিক্ষাকর্মী এবং সাহিদা আক্তার স্বর্ণা- সমাজকর্মী।
এলএ/এইচআর/আরআইপি