আরএফএলের সঙ্গী হলেন পূর্ণিমা
বরেণ্য চলচ্চিত্র পরিচালক জাকির হোসেন রাজু পরিচালিত ‘এ জীবন তোমার আমার’ ছবি দিয়ে ঢাকাই ছবিতে শুভযাত্রা হয় নন্দিত চিত্রনায়িক পূর্ণিমার। ১৯৯৭ সালে মুক্তি পাওয়া ছবিটিতে তার বিপরীতে ছিলেন সেই সময়ের হার্টথ্রব নায়ক রিয়াজ।
প্রথম ছবিতেই বাজিমাত করেছিলেন মিষ্টি হাসির এই লাবণ্যময়ী। জানান দিয়েছিলেন ইন্ডাস্ট্রিতে অনবদ্য এক রোমান্টিক নায়িকার আগমন ঘটছে। এরপর অভিনয়ের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তার সাফল্যের মুকুটে যোগ হয়েছে অসংখ্য পালক। তিনি উপহার দিয়েছেন ‘নিঃশ্বাসে তুমি বিশ্বাসে তুমি’, ‘যোদ্ধা’, ‘হৃদয়ের কথা’, ‘আকাশ ছোঁয়া ভালোবাসা’, ‘জামাই শ্বশুর’, ‘মায়ের সম্মান’, ‘পরাণ যায় জ্বলিয়া রে’, ‘টক ঝাল মিষ্টি’, ‘স্বামী স্ত্রীর যুদ্ধ’, ‘মেঘের পর মেঘ’, ‘ভালোবাসার লাল গোলাপ’সহ আরো অনেক ব্যবসা সফল ও আলোচিত্র চলচ্চিত্র। পাশাপাশি বড় পর্দার তারকাদের প্রথাবিরুদ্ধ হয়ে ছোট পর্দাতেও সাফল্য পেয়েছেন পূর্ণিমা।
এই চিত্রনায়িকা চমক দেখিয়েছেন বেশ কিছু বিজ্ঞাপনের মডেল হয়েও। তারই ধারাবাহিকতায় এবার পূর্ণিমার ক্যারিয়ারে যোগ হলো আরো একটি নতুন পালক। দেশের বৃহৎ বিপণন প্রতিষ্ঠান আরএফএল গ্রুপের সঙ্গী হলেন তিনি। এক বছরের চুক্তিতে এই গ্রুপের দুটি পণ্যের মডেল হিসেবে দেখা যাবে তাকে। তার একটি হচ্ছে টপার প্রেসার কুকার এবং অন্যটি আরএফএল কিচেন র্যাক। এরই মধ্যে আজ শনিবার (২০ আগস্ট) টপার প্রেসার কুকারের একটি বিজ্ঞাপনের শুটিংয়ে অংশও নিয়েছেন পূর্ণিমা। এটি পরিচালনা করেছেন নির্মাতা সানবীম আশরাফ।
এ বিষয়ে একটি চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে। রাজধানীর জনপ্রিয় শুটিং স্পট কোক স্টুডিওতে আজ শনিবার (২০ আগস্ট) আরএফএল গ্রুপের পণ্য দুটির মডেল হিসেবে চুক্তি স্বাক্ষর করেন চিত্রনায়িকা পূর্ণিমা। সেখানে আরো উপস্থিত ছিলেন এরএফএল’র হেড অব মার্কেটিং ফজলে আদি, ব্র্যান্ড ম্যানেজার শরীফুল ইসলাম এবং বিজ্ঞাপন নির্মাতা সানবীম আশরাফ।
চুক্তির আনুষ্ঠানিতা শেষে পূর্ণিমা জাগো নিউজকে বলেন, ‘দেশের বৃহৎ এবং অনেক জনপ্রিয় বিপণন প্রতিষ্ঠান আরএফএল। নিজের দেশের পণ্য যারা বিদেশে রপ্তানি করে বিশ্বের দারপ্রান্তে বাংলাদেশকে পৌঁছে দিচ্ছে তাদের মধ্যে এই প্রতিষ্ঠানটি অন্যতম। এমন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হতে পেরে আমি সত্যি আনন্দিত। আরএফলকে ধন্যবাদ জানাই তাদের প্রচারে আমাকে সঙ্গী করে নেয়ার জন্য।’
পূর্ণিমা আরো বলেন, ‘যে বিশ্বাস ও আস্থা নিয়ে আরএফএল’র দুটি পণ্যের প্রচারের জন্য আমাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে আমি তা যথাযথভাবে পালনের চেষ্টা করবো।’
বিজ্ঞাপনের অভিজ্ঞতা জানিয়ে এই অভিনেত্রী বললেন, ‘আজ সকাল ১০টা থেকে টপার প্রেসার কুকারের শুটিং করছি। বেশ ভালো একটি স্ক্রিপ্ট নিয়ে কাজ হচ্ছে। পরিচালক সানবীম আশরাফ এবং তার টিম বেশ গোছালো আর কাজের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। ভালো লাগছে।’
পূর্ণিমাকে আরএফএল’র সঙ্গে পেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন প্রতিষ্ঠানটির হেড অব মার্কেটিং ফজলে আদি। তিনি বলেন, ‘পূর্ণিমা আমাদের দেশের প্রথম সারির একজন অভিনেত্রী। সিনেমা এবং টেলিভিশনে তার জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বি। গতানুগতিক তারকা জীবনের বাইরে গিয়ে তিনি নিজের ইমেজকে ইতিবাচকভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তাই তার মতো শিল্পীকে আমাদের সঙ্গে পাওয়াটা অবশ্যই আনন্দের। আশা করছি যে যাত্রা তাকে নিয়ে শুরু হলো সেটি সফল হবে এবং ভবিষ্যতে আরো অনেক চমক নিয়ে আরএফএল’র সঙ্গে থাকবেন পূর্ণিমা।’
আরএফএল’র ব্র্যান্ড ম্যানেজার শরীফুল ইসলাম বলেন, ‘এর আগেও আরএফএল’র বিভিন্ন পণ্যের প্রচারে মৌসুমী, ওমর সানী, রিয়াজের মতো তারকারা যুক্ত হয়েছেন। সেই তালিকায় এবার যোগ হলেন চিত্রনায়িকা পূর্ণিমা। আশা করি তাকে সঙ্গে নিয়ে ক্রেতা ও ভোক্তাদের কাছে নতুন করে হাজির হবে আরএফএল’র টপার প্রেসার কুকার ও কিচেন র্যাক।’
এদিকে নির্মাতা সানবীম আশরাফ বলেন, ‘একজন মনোযোগী শিল্পী হিসেবে পূর্ণিমার সুনাম আছে। আজ (শনিবার) যখন আমরা কাজ শুরু করেছি তখনও দেখেছি তিনি সঠিক সময়ে সেটে উপস্থিত হয়েছেন। যেহেতু পণ্যটি প্রেসার কুকার, তাই বিজ্ঞাপনের গল্পটিও সাজিয়েছি গৃহস্থালির আবহে। এখানে পূর্ণিমা একজন সচেতন গৃহিণী হিসেবে হাজির হবেন। তার সঙ্গে দেখা যাবে আরো একজন মডেল আইনুন পুতুলকে।’
পরিচালক জানালেন, বিজ্ঞাপনটি আসছে কোরবাবি ঈদকে সামনে রেখেই নির্মাণ করা হয়েছে। শিগগিরই এটি প্রচারে আসবে।
প্রসঙ্গত, পূর্ণিমা ১৯৮১ সালের ১১ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক বাড়ি চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে। জন্ম এবং বেড়ে ওঠা ঢাকায়। তার পারিবারিক নাম দিলারা হানিফ ডাক নাম রিতা। ২০০৭ সালের ৪ নভেম্বর পারিবারিকভাবে আহমেদ জামাল ফাহাদকে বিয়ে করেন এই নায়িকা। সেই সংসারে ২০১৪ সালের ১৩ এপ্রিল তিনি প্রথম কন্যা সন্তানের মা হন। তার মেয়ের নাম আরশিয়া উমাইজা।
দীর্ঘ ক্যারিয়ারে কোটি মানুষের ভালোবাসাসহ নানা রকম পুরস্কার ও স্বীকৃতি-সম্মাননায় তিনি ভূষিত হয়েছেন। কাজী হায়াত পরিচালিত ‘ওরা আমাকে ভালো হতে দিলো না’ ছবিতে অভিনয় করে তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান ২০১০ সালে।
বর্তমানে তিনি বড় পর্দায় নিয়মিত নন। অনেকদিন তার কোনো নতুন ছবি নেই। তবে নিয়মিতই অভিনয় করছেন ছোট পর্দায়। গেল রোজার ঈদে বেশ কিছু নাটক-টেলিফিল্মে তিনি প্রশংসিত হয়েছেন অভিনয় দিয়ে। আসছে কোরবানী ঈদেও তাকে দেখা যাবে হানিফ সংকেত, এস এ হক অলিক, রেদওয়ান রনিসহ আরো অনেক স্বনামধন্য পরিচালকের নাটক-টেলিছবিতে।
আরএফএল’র সঙ্গে ঢাকাই ছবির নন্দিত মুখ পূর্ণিমার নতুন পথচলা শুভ হোক, সাফল্যের হোক।
এলএ/আরআইপি