আজ নাট্যজন রামেন্দু মজুমদারের জন্মদিন
নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার। সেই ষাট দশকের শুরু থেকেই তিনি অভিনয়ে নিবেদিত প্রাণ। যে ক’জন সংস্কৃতিকর্মী শিল্পচর্চার মধ্য দিয়ে দেশে স্বাধীনতা আন্দোলনকে বেগবান করেছেন তাদের অন্যতম তিনিও। ঢাকার মঞ্চনাটক আন্দোলনের পথিকৃৎ। স্বাধীন বাংলাদেশেও তিনি নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন নাট্যাঙ্গনের।
অভিনয়ে সর্বজন শ্রদ্ধেয় এই মানুষটির আজ জন্মদিন। আজ ৭৫ বছর পূর্ণ করে ৭৬ এ পা রাখলেন এই নাট্যব্যক্তিত্ব । ১৯৪১ সালের এই দিনে লক্ষ্মীপুরে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। অভিনেত্রী ফেরদৌসী মজুমদার তার স্ত্রী। অভিনয়শিল্পী ত্রপা মজুমদার তাদের একমাত্র কন্যা।
জন্মদিনে দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী ও প্রিয়জনদের শুভেচ্ছায় সিক্ত হয়েছেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ শিক্ষালাভের পর তিনি অধ্যাপনাকে বেছে নেন পেশা হিসেবে। চৌমুহনী কলেজে বছর তিনেক অধ্যাপনার পর পেশা পরিবর্তন করে যোগ দেন বিজ্ঞাপন শিল্পে ১৯৬৭ সালে করাচিতে। ১৯৭২ এ দেশে ফিরে বিটপী অ্যাডভার্টাইজিংয়ে পরিচালক হিসেবে যোগ দেন এবং ১৯৯৩ এ প্রতিষ্ঠা করেন এক্সপ্রেশন। সেখানে বর্তমানে তিনি ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে কর্মরত আছেন।
পাশাপাশি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির পরিষদ সদস্য ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। ‘অ্যাডভার্টাইজিং এজেন্সিজ এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশেরও সভাপতি রামেন্দু মজুমদার।
স্বাধীনতাযুদ্ধেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে তার। মুক্তিযুদ্ধকালে স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রের কয়েকটি অনুষ্ঠানে অংশ নেন তিনি এবং বঙ্গবন্ধুর বক্তৃতা, বিবৃতির একটি ইংরেজি সংকলন সম্পাদনা করে দিল্লি থেকে প্রকাশ করেন।
বেতার ও টেলিভিশনে তিনি নাটক করেছেন যথাক্রমে ১৯৬২ ও ১৯৬৫ থেকে। এ দুটো মাধ্যমে দীর্ঘদিন সংবাদ পাঠ করেছেন। মঞ্চে অভিনয় করছেন ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে। টিভিতেও প্রচুর নাটকে অভিনয় করেছেন। বাংলাদেশের নাট্যজগতে রামেন্দু মজুমদারের পদচারণা পাঁচ দশকজুড়ে। তিনি থিয়েটারের সঙ্গে জড়িয়েছিলেন ছাত্রজীবনে। দীর্ঘ অভিনয়জীবনে মঞ্চ ও টেলিভিশনে বহু স্মরণীয় প্রযোজনায় অভিনয় করেছেন। বিটিভির সংবাদ পাঠক হিসেবেও তিনি জনপ্রিয় ছিলেন।
অভিনয়-নির্দেশনার পাশাপাশি একজন লেখক হিসেবেও সমাদৃত তিনি। তার মৌলিক ও সম্পাদিত গ্রন্থ সংখ্যা ১৬। একজন ভালো বক্তাও তিনি। শিল্প ও সংস্কৃতি চর্চায় তার কথামালা বিভিন্ন প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করেছে বহুবার।
দীর্ঘ বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে রামেন্দু মজুমদার অসংখ্য সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। তারমধ্যে ২০০৯ সালে পেয়েছেন রাষ্ট্রীয় সম্মান ‘একুশে পদক’। বাংলা একাডেমি তাকে সম্মানসূচক ফেলোশিপ প্রদান করেছে। রামেন্দু মজুমদার দ্বিতীয় এশিয়ান হিসেবে বিশ্বনাট্য সভা- ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউশনের (আইটিআই) সভাপতি নির্বাচিত হয়ে বাংলাদেশের জন্যে বয়ে এনেছেন অনন্য গৌরব।
শুধু ৭৬ কেন, প্রিয় এই নাট্যজনকে নিয়ে তার শতবর্ষ জন্মদিন পালনের স্বপ্ন দেখেন সংস্কৃতি কর্মীরা। সুস্থতায়, সৌন্দর্যে বেঁচে থাকুন রামেন্দু মজুমদার; তার হাত ধরে আমাদের নাট্যাঙ্গনে আরো অনেক প্রাচুর্য আসুক- এই প্রত্যাশা আমাদের।
এলএ/এইচআর/এমএস