টেক কেয়ার পাওলি দাম (দেখুন ছবিতে)
ঠাকুরপুকুর ক্যানসার হসপিটালে পাওলি দাম। আছেন বেড নং-২ তে। ব্যাপার কী! নাহ কোনও দুঃসংবাদ নয়। বালাই ষাট! আসলে পরিচালক জয়শ্রী মুখোপাধ্যায়ের কথাতেই হসপিটালে পাওলি। তাঁকে অনুসরণ করছে ইউনিটের ক্যামেরা।
লাইট-ক্যামেরা-অ্যাকশন বলামাত্রই পাওলি হয়ে উঠছেন তিস্তা। আসলে এই তিস্তাই ব্রেস্ট ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি ক্যানসার হসপিটালে। ২৭ বছরের মেয়েটার জীবনে আকস্মিক নেমে এসেছে দুঃস্বপ্নের কালো ছায়া। আর তিস্তার জীবনের সেই সংকট মুহূর্তকেই ক্যামেরার সামনে ফুটিয়ে তুলছেন পাওলি দাম। চলছে পাওলির নতুন ছবি ‘টেক কেয়ার’-এর শুটিং।
এ ছবিতে পাওলি হয়ে উঠছেন উত্তরবঙ্গের মেয়ে তিস্তা। এখন থাকে কলকাতায়। সে মিডিয়াকর্মী৷ পাশাপাশি করে মডেলিংও। সাত্র ২৭ বছরে হঠাৎ তার জীবনে ঘনিয়ে এসেছে চরম দুঃসময়। ব্রেস্ট ক্যানসারে আক্রান্ত হয় সে। তার মনে পড়ে, একই অসুখে আক্রান্ত হয়ে চলে গেছে তার মা। তাহলে কী হবে তিস্তার? ছটফটে জীবনটা কি নিমেষে ফুরিয়ে যাবে? তিস্তার বয়ফ্রেন্ড রণিতের কাজকর্ম বিজ্ঞাপন জগতে৷ সুন্দর দেহবল্লরী তাকে যতটা আকর্ষণ করে, দেহের ওপারে সুন্দর মনের খোঁজ সে ততটা রাখে না। অসুখের অক্টোপাস দেহে-মনে নানাদিক থেকে জড়িয়ে ধরতে খাকে তিস্তাকে।
তবু নুয়ে পড়তে পড়তেও জীবন একবার ঠিক মাথা তুলে দাঁড়ায়। তাকায় সামনের দিকে। আর তখনই চোখে পড়ে অপ্রত্যাশিত আশার আলো। তিস্তার ডাক্তারবাবু ডঃ পিল্লাই তাঁকে সাহস দিয়ে বারবার বলেন ‘টেক কেয়ার’। এই কথাদুটোই যেন ম্যাজিকের মতো কাজ করে। তিস্তাকে ফিরিয়ে দিতে থাকে জীবনের হারানো সুর। এমন একটা সময়েই সংকটের ভিতর দিয়ে তাঁর জীবনের পথচলাকে ক্যামেরাবন্দি করে রাখে অনি। তিস্তার জীবনের যন্ত্রণাকে তিনি তুলে রাখেন তথ্যচিত্রে।
একদিন অন্ধকারের উৎস হতে উৎসারিত হয় আলো। সব প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে, যন্ত্রণার অবসান ঘটিয়ে তিস্তা ফিরে পায় জীবনের গোলাপি আভা। তার তথ্যচিত্র ‘এ পিঙ্ক জার্নি’ পৌঁছয় কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে। সেখানে সহপরিচালকের সম্মান দেওয়া হয় তাকে। জীবনের পলি জমা হয়েও আটকাতে পারে না তিস্তার প্রবাহ। তিস্তা এগিয়ে চলে জীবনের নতুন দিকে। এই তিস্তার চরিত্রকে পর্দায় ফুটিয়ে তুলছেন পাওলি। তারই একপ্রস্থ শুটিং চলল ঠাকুরপুকুর ক্যানসার হসপিটালে। ছবিতে ডাক্তার পিল্লাইয়ের ভূমিকায় অভিনয় করবেন রাজেশ শর্মা।
তথ্যচিত্র পরিচালক অনির ভূমিকায় দেখা যাবে পল্লবী চট্টোপাধ্যায়কে। আর তিস্তার বয়ফ্রেন্ড রণিতের ভূমিকায় থাকবেন সাহেব চট্টোপাধ্যায়৷ এছাড়াও ছবিতে আছেন বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী দেবরাজ রায়, মাধবী মুখোপাধ্যায় প্রমুখ।
রিল লাইফে তিস্তার জার্নি মনে করিয়ে দেয় লিন্ডা স্ট্র্যান্সবেরির জীবনকথাকেও। ঠিক বিয়ের প্ল্যানিংয়ের সময় ব্রেস্ট ক্যানসারে আক্রান্ত হন তিনি। তারপর চিকিৎসা চলাকালীন তিনি নিজের সব সংকট কাটিয়ে উঠতে একসময় বেছে নিয়েছিলেন লেখালিখিকে। লেখালিখির মাধ্যমেই নিজেকে ভালো রাখতেন। সুস্থ হয়ে ওঠার পর সেই সমস্ত লেখা নিয়ে তিনি একটি বই প্রকাশ করেছিলেন, নাম দিয়েছিলেন ‘মাই পিঙ্ক জার্নি ইন ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট’।
আর এক ব্রেস্ট ক্যানসার আক্রান্তা লিন্ডা গ্রেবম্যানও সুস্থ হয়ে ওঠার পর পিঙ্ক পোশককে বেছে নিয়েছিলেন। ১৯৯২ সাল থেকে ব্রেস্ট ক্যানসার সম্পর্কে সচেতনতা প্রচারে পিঙ্ক রিবনকেই সিম্বল হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে আন্তর্জাতিভাবে। তাই ছবিতে তিস্তার পিঙ্ক জার্নি সিনেমার মতো শক্তিশালী মাধ্যমের দ্বারা সচেতন করে তুলবে সাধারণকে। যন্ত্রণা পেরিয়ে ফিরে আসতে সাহায্য করবে অনেককে।
বাংলা ছবিতে নানা বিষয় নিয়ে পরীক্ষা চলছে এ সময়ে। ব্রেস্ট ক্যানসারকে বিষয় করে তৈরি এ ছবি নিঃসন্দেহে বিনোদনের সঙ্গে সামাজিক দায়বদ্ধতা পালনেরও মেলবন্ধন ঘটাবে। দেখিয়ে দেবে সেই পথ, যে পথে আলো জ্বেলে মিলবে এক জীবনেই জন্মান্তরের সন্ধান।