ওস্তাদ জাকির হুসেনের বিয়ে মানতে চাননি তার মা
প্রয়াত কিংবদন্তিতুল্য তবলা বাদক ওস্তাদ জাকির হুসেন প্রেম করে বিয়ে করেছিলেন। তিনি আকৃষ্ট হয়েছিলেন ইতালির সুন্দরী অ্যান্তোনিয়ার প্রতি। ভালোলাগা থেকে ভালোবাসা- এরপর তাদের প্রণয় ঘটে। তবে এটি সহজসাধ্য ছিল না।
জাকির হুসেন তার সংসার ও ব্যক্তিগত জীবন খুব বেশি প্রকাশ্যে আনেননি। তাই অনুরাগীরা তার বিয়ে, বিদেশিনী স্ত্রী এবং দুই মেয়ে সম্পর্কে খুব একটা জানেন না।
গত শতকের সাতের দশকে অ্যান্তোনিয়ার সঙ্গে জাকির হুসেনের প্রথম দেখা হয়েছিল। সে সময় তারা দুজনেই আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া বে-তে শিল্পকলার শিক্ষার্থী ছিলেন। জাকির শিখছিলেন তবলা। অ্যান্তোনিয়ার বিষয় ছিল কত্থকনাচ। ইতালির এ সুন্দরীকে প্রথম দেখাতেই মুগ্ধ হন জাকির হুসেন। তবে প্রেমের পথ খুব একটা সহজ ছিল না।
অ্যান্তোনিয়াকে প্রেমে মজাতে জাকিরকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছিল লড়াকু যাত্রী। প্রেয়সীর ক্লাসের বাইরে রোজ অপেক্ষা করতেন জাকির। শুধু একবার তাকে দেখার জন্য। তার হৃদয়ে নিজের আসন চিরস্থায়ী করবেন- এমন স্বপ্নও দেখতে শুরু করেন। অবশেষে ইতালির এ সুন্দরীর মনের বরফ গলেছে। জাকিরের প্রতি আকৃষ্ট হলেন অ্যান্তোনিয়াও। ভালোলাগা থেকে ভালোবাসা তৈরি হলো। একবছর পরিচয় পর্বের পর তারা একসঙ্গে থাকতে শুরু করেন।
দুই পরিবারের পক্ষ থেকেই বিয়ের জন্য বাধা এসেছিল । স্ত্রীকে তার ডাকনাম টোনি বলেই ডাকতেন জাকির। সিমি গারেওয়ালের টেলিভিশন শো-এ এসে কিংবদন্তিতুল্য শিল্পী বলেছিলেন, ‘কিছু কারণে আমি বুঝতে পেরেছিলাম টোনিই সেই মেয়ে যার প্রতি আমার মনোযোগ থাকবে বাকি জীবনভর। পরিচয়ের এক বছর পর আমরা একসঙ্গে থাকতে শুরু করি।’
জাকির-অ্যান্তোনিয়া প্রথম আলাপের ৮ বছর পর বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। দুই পরিবারের ধর্ম ও সাংস্কৃতিক পার্থক্যের জন্য অনেক বাধা এসেছিল। বিশেষ করে জাকিরের মা বাভী বেগম একদমই চাননি তার ছেলে কোনো বিদেশিনীকে বিয়ে করুক। শেষ পর্যন্ত মায়ের কাছে গোপন রেখেই বিয়ে করেছিলেন জাকির। প্রথমে সিভিল ম্যারেজ। পরে ইসলামিক রীতিতে তাদের বিয়ের সময় উপস্থিত ছিলেন উস্তাদ আল্লা রাখা। তত দিনে মা জেনে গিয়েছেন ছেলের বিয়ের কথা। কিন্তু তারপরও তিনি বিয়ে মানতে পারেননি। তবে বিয়ের বেশ কয়েক বছর পর ইতালির সুন্দরীকে জাকিরের মা পুত্রবধূ বলে মেনে নেন।
আরও পড়ুন:
জাকিরের সঙ্গে বিয়ের জন্য নিজের ক্যারিয়ারকে তেমন গুরুত্ব দেননি কত্থকশিল্পী অ্যান্তোনিয়া। দুই মেয়ে আনিসা ও ইসাবেলাকে নিয়ে আমেরিকায় দিনের পর দিন একা সংসার সামলেছেন। অন্যদিকে জাকির হুসেন বিশ্বজুড়ে অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন। এ একাকিত্ব অ্যান্তোনিয়াকে ভীষণ কষ্ট দিয়েছে। কিন্তু সেসব ছাপিয়ে তাদের ভালোবাসার জয় হয়েছে।
এমএমএফ/এমএস