ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ নিয়ে যত সিনেমা
কাশ্মীরের পুলওয়ামায় ১৪ ফেব্রুয়ারি ভয়াবহ আত্মঘাতী হামলায় ভারতের সিআরপিএফের কমপক্ষে ৪০ সেনা নিহত হয়েছেন। ওই হামলার দায় স্বীকার করেছে পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি গোষ্ঠী জয়েশ-ই-মোহাম্মদ।
এরপর থেকেই ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। সেই ধারাবাহিকতায় পাক অধিকৃত কাশ্মীরে ভারতীয় বিমান বাহিনী হামলা করেছে। এ হামলায় অন্তত ৩০০ সন্ত্রাসী নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া ট্যুডে।
এই হামলার পর থেকে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে দুই দেশের মধ্যে। আসন্ন যুদ্ধের হাওয়া দুই দেশের সংস্কৃতি অঙ্গনেও। বিভিন্ন অঙ্গনের তারকারা বাকযুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। এতে বেশ এগিয়ে রয়েছে বলিউড।
তবে পাক-ভারত যুদ্ধ নিয়ে বলিউড এগিয়ে রয়েছে চলচ্চিত্র নির্মাণেও। খোঁজ নিয়ে পাওয়া গেল বেশ কিছু সিনেমা নির্মিত হয়েছে ভারতে যেখানে পাকিস্তানের সঙ্গে নানা যুদ্ধের গল্প উঠে এসেছে।
দেখে নেয়া যাক সেই তালিকাটি-
এলওসি কার্গিল
১৯৯৯ সালের মে-জুলাই মাসে কাশ্মীরের কার্গিল জেলায় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘটিত সশস্ত্র সংঘর্ষটি ইতিহাসে ‘কার্গিল যুদ্ধ’ নামে পরিচিত। এই যুদ্ধ নিয়ে বেশ কয়টি ছবি বলিউডে নির্মিত হয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম ‘এলওসি কার্গিল’। ২০০৩ সালে ছবিটি পরিচালনা করেন জে পি দত্ত।
‘এলওসি কার্গিল’ ছবিটি তৈরি হয় কার্গিল অপরাশেনে ভারতের বিজয়কে কেন্দ্র করে। ক্যাপ্টেন বিক্রম বত্রা, সুবেদার যোগেন্দ্র সিং যাদব এবং মেজর দীপক রামপালের মতো বীর সেনারা কার্গিল যুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন। তাদেরকেই তুলে আনা হয়েছে এর গল্পে।
এতে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন সঞ্জয় দত্ত, আয়ুব খান, সুনীল শেঠি, সাইফ আলি খান ও অভিষেক বচ্চন, কারিনা কাপুর প্রমুখ।
আরও একটি কারণে এই ছবিটি বলিউডের ইতিহাসে উজ্জ্বল। সেটি হলো ভারতের সবচেয়ে দীর্ঘ ছবিগুলির মধ্যে এটি একটি। যার দৈর্ঘ ৪ ঘণ্টা ১৫ মিনিট।
লক্ষ্য
দায়িত্বজ্ঞানহীন যুবক থেকে দায়িত্ববান সেনা অফিসারের চরিত্রে অভিনয় করে ‘লক্ষ্য’ ছবিতে দারুণ প্রশংসিত হয়েছিলেন হৃতিক রোশন। এই ছবির পরিচালক ফারহান আখতার। তিনি কার্গিল যুদ্ধের প্রেক্ষাপটেই বুনেছিলেন ছবির গল্প।
‘লক্ষ্য’ ছবির ক্লাইম্যাক্সে পাহাড়ে চড়ার দৃশ্য ইতিহাস হয়ে রয়েছে। প্রায় ১৮,০০০ ফুট উচুঁ থেকে শুট করা হয়েছিল এই দৃশ্য। কিন্তু এতকিছু সত্ত্বেও বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়েছিল এই ছবিটি।
২০০৪ সালে নির্মিত এই ছবিতে হৃতিকের সঙ্গে জুটি বেঁধেছিলেন প্রীতি জিনতা। আরও অভিনয় করেছেন অমিতাভ বচ্চন, ওম পুরিসহ অনেক তারকা।
ট্যাঙ্গো চার্লি
পরিচালক মণি শঙ্করের এই ছবি সরাসরি যুদ্ধের ছবি না হলেও শক্রদের বিরূদ্ধে লড়তে লড়তে নিজেদের জীবনযুদ্ধের ছবি প্রকাশ্যে এনেছে ‘ট্যাঙ্গো চার্লি’। ২০০৫ সালে মুক্তি পাওয়া ছবিটি বেশ প্রশংসা পেয়েছিলো।
অজয় দেবগণ ও ববি দেওল অভিনীত এই ছবিতে সেনাদের সংগ্রামের কথা বলা হয়েছে। নিজের ভালবাসার মানুষগুলো থেকে আলাদা থাকার যন্ত্রণার অভিব্যক্তি ফুটে উঠেছে এই ছবিতে।
দ্য ঘাজি অ্যাটাক
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানি নৌ-বাহিনীর সাবমেরিন ‘পিএনএস ঘাজি’ রহস্যজনকভাবে ডুবে গিয়েছিল। ভারতীয় নৌ-বাহিনীর জাহাজ ‘আইএনএস রাজপুত’-এর কয়েকজন নেভি অফিসার পাকিস্তানি সাবমেরিনটি ডুবিয়ে দিয়েছিলেন। এ জন্য টানা ১৮ দিন সমুদ্রের তলদেশে থাকতে হয়েছিল তাদের।
সেই ঘটনা নিয়েই নির্মিত হয়েছে ‘দ্য ঘাজি অ্যাটাক’ ছবিটি। সিনেমাটি এই বছর ১৭ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পায়। দুটি সাবমেরিনে সংগঠিত লড়াইয়ের গল্প দেখানো হয়েছে এই সিনেমায়। এতে মূল দুটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন ‘বাহুবলি’র খল-অভিনেতা রানা ডাগুবাতি ও ‘পিঙ্ক’ ছবির নায়িকা তাপসী পান্নু।
ছবিটি পরিচালনা করেছেন সংকল্প রেড্ডি। নিজের লেখা উপন্যাস ‘দ্য ব্লু ফিশ’ অবলম্বনে সিনেমাটি নির্মাণ করেছেন তিনি। ভারতে নির্মিত সাবমেরিন ভিত্তিক প্রথম ছবি এটি।
এতে রানা অভিনয় করেছেন নৌ-বাহিনীর একজন ক্যাপ্টেনের চরিত্রে, এবং একজন শরণার্থী বাংলাদেশি মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন তাপসী। এ সিনেমার একটি দৃশ্যে অভিনেত্রী তাপসী পান্নুকে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের লাইন ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ বলতে শোনা গেছে। ২০১৭ সালে মুক্তি পাওয়া সিনেমাটি প্রযোজনা করেছেন করণ জোহর।
গুন্ডে
যশরাজ ফিল্মসের ব্যানারে নির্মিত হয়েছে সিনেমাটি। ১৯৭১-এর যুদ্ধে শরণার্থী শিবির থেকে পরিবারহারা দুই শিশুর পালিয়ে কলকাতায় গিয়ে আসর জমানোর গল্প নিয়ে ছবিটির কাহিনি। সেখানে দেখানো হয়েছে ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধ।
মূলত ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নির্মিত। যেখানে নির্মাতা যুদ্ধটিকে পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের দাবি করে বিতর্কিত হয়েছেন। ছবির শুরুর প্রেক্ষাপট নির্মাণকারীর নেপথ্য ভাষ্যের ছোট্ট দুটি কথা সে সময় বিতর্ক সৃষ্টি করে। সেখানে বলা হয়, ‘১৯৭১-এর পাক-ভারত ৯ মাসের ভয়ংকর যুদ্ধ। যার পরিণতিতে জন্ম নেয় ছোট্ট এক রাষ্ট্র বাংলাদেশ’।
বাংলাদেশকে পাক-ভারত যুদ্ধের ফসল হিসেবে মাথা পেতে নেয়াটা সহজভাবে নিতে পারেনি বাংলাদেশের তরুণ সমাজ। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে ইন্টারন্যাশনাল মুভি ডেটাবেজের ওয়েবসাইটে ওঠে নিন্দার ঝড়। আলোড়ন তুলতে সক্ষম একটি ছবি রাতারাতি পরিণত হয় বিতর্ক আর তিরস্কারের লক্ষ্য বস্তুতে। শেষ অব্দি মান বাঁচাতে ক্ষমা চাইতে বাধ্য হয় ছবির নির্মাতা।
এমনকি মূল ছবিটি তাৎক্ষণিকভাবে বাজার থেকে তুলে নিয়ে সেই নেপথ্য ভাষ্যে পরিবর্তনও আনা হয়। ২০১৪ সালে মুক্তি পাওয়া ছবিটিতে অভিনয় করেছিলেন রণবীর সিং, প্রিয়াঙ্কা চোপড়া ও অর্জুন কাপুর।
১৯৭১
২০০৭ সালে মুক্তি পায় বলিউড সিনেমা ‘১৯৭১’। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে নির্মিত হলেও ছবিটি কৌশলে পাক-ভারতের যুদ্ধ হিসেবেই দেখানো হয়েছে। কিছু দুর্লভ ফুটেজ আর বঙ্গবন্ধুর চিত্রায়ণের মাধ্যমে ১৯৭১ শিরোনামের ছবির গল্প স্থাপনের শুরুই রয়েছে বাংলাদেশের যুদ্ধের সময়ের ঘটনাকে কেন্দ্র করে। পরবর্তী সময়ে পাক-ভারত সীমান্ত আর ভারতে পাকিস্তানি গুপ্তচরদের নানা ফন্দি-ফিকিরের দিকে ঝুঁকে সিনেমার কাহিনী।
এই সিনেমায় অভিনয় করেন মনোজ বাজপেয়ী, রাভি কিষাণ, দীপক ডোব্রিয়াল, পীযূষ মিশরা। ছবিটি ২০০৭ সালে ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে দুটি পুরস্কার অর্জন করে। সেরা অডিওগ্রাফি ও সেরা সিনেমার খেতাব জয় করে ‘১৯৭১’ নামের সিনেমাটি।
বর্ডার
ভারত-পকিস্তান যুদ্ধের উপর তৈরি হওয়া জেপি দত্তর এই ছবিটি তুমুল আলোড়ন ফেলেছিল। সানি দেওল, সুনীল শেঠি, অক্ষয় খান্না, জ্যাকি শ্রফ অভিনীত এই ছবিটি বক্স অফিস দারুণ সাড়া ফেলেছিল।
ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কর্মরত সেনাদের দেশপ্রেম নিয়ে তৈরি এই সিনেমা এক নতুন ধারার জন্ম দিয়েছিল। এ ছবির টিকিট বিক্রী হয়েছিল ৩ কোটি ৭০ লক্ষেরও বেশি। ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৯৭ সালে।
আরও আছে ১৯৬৭ সালে মুক্তি পাওয়া ‘উপকার’, ১৯৭৩ ও ১৯৯৯ সালের ‘হিন্দুস্তান কি কসম’, ২০০৩ সালের ‘স্টাম্পড’, ২০১১ সালের ‘মৌসুম’, ২০১৮ সালের ‘রাজি’ সিনেমাতেও দেখা যায় ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের আবহ ও আমেজ।
এলএ/পিআর