হিন্দুত্ববাদীদের বিক্ষোভে আজমীরে নাসিরুদ্দিন শাহর অনুষ্ঠান বাতিল
উগ্র হিন্দুত্ববাদী কয়েকটি সংগঠনের বিক্ষোভের জেরে ভারতের রাজস্থানের আজমীর শহরে আয়োজিত প্রখ্যাত বলিউড অভিনেতা নাসিরুদ্দিন শাহের একটি অনুষ্ঠান বাতিল করে দেয়া হয়েছে।
শুক্রবার আজমীর সাহিত্য উৎসবে মূল ভাষণ দেয়ার কথা ছিল নাসিরুদ্দিন শাহর। ওই শহরেই তিনি স্কুলে পড়াশোনা করেছেন।
এই সপ্তাহে দেয়া একটি সাক্ষাতকারে নাসিরুদ্দিন শাহ মন্তব্য করেছিলেন যে, ‘ভারতে একজন পুলিশ অফিসারের মৃত্যুর থেকেও বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে গরুর মারা যাওয়ার ঘটনা।’
ডিসেম্বরের শুরুতে উত্তর প্রদেশের বুলন্দশহরে গরু জবাইকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ ছড়ালে এক পুলিশ অফিসার নিহত হন। তারপরও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কর্মকর্তাদের একটি বৈঠকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন যে কীভাবে ‘গো-হত্যা’ হলো- সেই তদন্তের ওপরে। আর পুলিশ অফিসারের মৃত্যুকে তিনি বলেছিলেন, ‘দুর্ঘটনা’।
একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আয়োজিত ‘কারওয়ান-এ-মুহব্বত’ নামের একটি অনুষ্ঠানের অংশ হিসাবে নাসিরুদ্দিন শাহ একটি ভিডিও সাক্ষাতকার দেন, যেটি গত সোমবার ইউটিউবে আপলোড করা হয়েছে। সেখানেই নাসিরুদ্দিন শাহ উত্তর প্রদেশের হিংসাত্মক ঘটনাটি নিয়ে ওই মন্তব্য করেন।
তারপর থেকেই দক্ষিণপন্থী এবং হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি তার ব্যাপক সমালোচনা শুরু করেছে।
ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি এবং হিন্দুস্তান টাইমসসহ বেশ কয়েকটি সংবাদ মাধ্যম জানাচ্ছে, শুক্রবারও আজমীর সাহিত্য উৎসব চত্বরে হিন্দুত্ববাদী ভারতীয় জনতা যুব মোর্চাসহ বেশ কয়েকটি সংগঠনের সদস্যরা হাজির হয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। কালি মাখিয়ে দেয়া হয় নাসিরুদ্দিন শাহর ছবি সংবলিত পোস্টারে। তারা দাবি করতে থাকে- নাসিরুদ্দিন শাহকে যেন ওই অনুষ্ঠানে ভাষণ দিতে না দেয়া হয়।
সাহিত্য উৎসবের অন্যতম কর্মকর্তা সোমরতন আরিয়া হিন্দুস্তান টাইমসকে জানিয়েছেন, ‘ওই হাঙ্গামার পরে আমরা আর ঝুঁকি না নিয়ে তার অনুষ্ঠানটা বাতিল করে দিয়েছি। অতিথিদের নিরাপত্তা নিয়েই আমরা চিন্তিত ছিলাম।’
সাহিত্য উৎসবের আরেক কর্মকর্তা রাসবিহারী গৌড় ইন্ডিয়া টিভিকে জানিয়েছেন, ‘নাসিরুদ্দিন শাহর কিছু মন্তব্য নিয়ে স্থানীয় মানুষজন বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন। সেজন্যই তিনি আর অনুষ্ঠান উদ্বোধন করতে আসেননি।’
তবে নাসিরুদ্দিন শাহ আজ সময়মতোই আজমীরে গিয়েছিলেন। নিজের ছোটবেলার স্কুলে বেশ কিছুক্ষণ সময় কাটান তিনি। সেখান থেকেই সাহিত্য উৎসবে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ততক্ষণে উৎসব চত্বরে বিক্ষোভ শুরু হয়ে যায়।
স্কুলের সামনে হাজির হয়া সাংবাদিকদের নাসিরুদ্দিন শাহ জানান, ‘আমি একজন দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ভারতীয় হিসাবেই ওই মন্তব্যগুলো করেছিলাম। এসব কথা তো আগেও বলেছি। এবার নতুন কী বলেছি যার জন্য আমাকে বিশ্বাসঘাতক বলা হচ্ছে?’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘সমালোচনা শুনতে আমি রাজি। তারা যদি আমার সমালোচনা করার অধিকারী হয়, আমারও সেই একই অধিকার রয়েছে। আমি যে দেশটাকে ভালবাসি, যে দেশে আমি থাকি, তার জন্য উদ্বেগ থেকেই ওই কথাগুলো বলা। এটা কি অপরাধ?’
কারওয়ান-এ-মুহব্বত অনুষ্ঠানের ওই ভিডিও সাক্ষাতকারে নাসিরুদ্দিন শাহ আরও মন্তব্য করেছিলেন, ‘আমি আর আমার স্ত্রী দুজন দুই ধর্মের থেকে এসেছিলাম। কিন্তু আমাদের সন্তানদের কোনো ধর্মই পালন করাইনি আমরা। কিন্তু এখন চিন্তা হয় যে কাল যদি একদল মানুষ আমার সন্তানদের ঘিরে ধরে জানতে চায় যে ওরা হিন্দু না মুসলমান, তাহলে তো তারা কোনো জবাব দিতে পারবে না! এই পরিস্থিতিটার কোনো উন্নতি খুব তাড়াতাড়ি হবে বলে মনে হয় না। একবার যে জ্বিন বোতল থেকে বেরিয়ে গেছে, তাকে আবার বোতলে ফেরত পাঠানো কঠিন।’
এই সাক্ষাতকার ইউটিউবে প্রচারিত হওয়ার পর থেকেই গোড়া হিন্দুত্ববাদীরা নাসিরুদ্দিন শাহকে নিয়ে নানা বিরূপ মন্তব্য করছেন।
একটি হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের প্রধান অমিত জানি নামে এক ব্যক্তি নাসিরুদ্দিন শাহের জন্য পাকিস্তানের এক পিঠের টিকিট সংরক্ষণ করে দিয়েছেন।
১৯৯৯ সালে তৈরি হওয়া ‘সরফারোশ’ সিনেমাটিতে নাসিরুদ্দিন শাহ পাকিস্তানি গজল শিল্পীর আড়ালে পাকিস্তানের গুপ্তচর হওয়ার অভিনয় করেছিলেন যিনি ভারতে নাশকতা চালানোর ছক কষেছিলেন। সেই চরিত্রটির সঙ্গে আসল নাসিরুদ্দিন শাহের তুলনা টেনেছেন উত্তর প্রদেশের এক বিজেপি নেতা।
এর আগে আমির খানও ২০১৫ সালে ভারতে ক্রমবর্ধমান অসহিষ্ণুতার পরিবেশ নিয়ে মন্তব্য করে হিন্দুত্ববাদীদের প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন।
সূত্র : বিবিসি
এমবিআর/এমএস