ভয়ে আছেন নাসিরুদ্দিন শাহ
ভারতে দেশজুড়ে চলমান অসহিষ্ণুতা নিয়ে বারবারই মুখ খুলেছেন বিশিষ্টজনেরা। এবার তাদের দলে শামিল হলেন বলিউডের শক্তিশালী অভিনেতা নাসিরুদ্দিন শাহ। উত্তরপ্রদেশের বুলন্দশহরের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেছেন, এ দেশে এখন তার নিজের সন্তানদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তা হয়!
একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে নাসিরের বক্তব্যের ভিডিও। সেখানে তিনি বলেছেন, ‘যারা লাগাতার আইন নিজের হাতে নিচ্ছে, তাদের কিছুই বলা হচ্ছে না। আমরা তো দেখতেই পাচ্ছি, নিহত পুলিশ অফিসারের চেয়ে এখন গরুর গুরুত্ব বেশি।’
নাসিরের আশঙ্কা, বিদ্বেষের বিষ ছড়িয়ে গেছে এবং সেই বিপজ্জনক জিনকে ফের বোতলে ঢোকানো কঠিন। পরিস্থিতির আশু উন্নতির আশা তিনি দেখছেন না।
এ প্রসঙ্গে সন্তানদের কথা তুলেছেন প্রবীণ অভিনেতা। নাসিরের কথায়, ‘আমার রীতিমতো দুশ্চিন্তা হয়- আমার সন্তানদের ঘিরে ধরে উন্মত্ত জনতা যদি প্রশ্ন করে- তোমরা হিন্দু না মুসলিম, ওরা উত্তরই দিতে পারবে না। কারণ আমরা (নাসির ও তার স্ত্রী রত্না পাঠক) সচেতনভাবেই ওদের কোনো ধর্মীয় শিক্ষা দিইনি।’
কংগ্রেস এবং এনসিপি নাসিরের বক্তব্যকে সমর্থন করেছে। মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, কংগ্রেসের পৃথ্বীরাজ চহ্বাণ বলেছেন, ‘বিজেপি যে ভীতির পরিবেশ তৈরি করেছে, তাতে নাসিরের মতো ধর্মনিরপেক্ষ নাগরিক মাত্রেই ভয় পাচ্ছেন।’
এনসিপি নেতা নবাব মালিকের মন্তব্য-‘নাসিরের তো চিন্তা হতেই পারে। কিন্তু আরএসএসকেও বুঝতে হবে, মেরুকরণে শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক ফায়দা হয় না।’
তবে নাসিরের এ ধরনের মন্তব্যে চটেছে শিবসেনা ও আরএসএস। শিবসেনা সাংসদ অরবিন্দ সাওয়ন্ত বলেছেন, ‘জনতা জিজ্ঞেস করলে ওর সন্তানেরা বলতেই পারে, তারা হিন্দুস্তানি!’ আরএসএস-ঘনিষ্ঠ রাজ্যসভা সাংসদ রাকেশ সিনহার পরামর্শ, ‘সন্তানদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তা হলে আগে রোহিঙ্গাদের এদেশ ছাড়তে বলুন!’
সম্প্রতি নাসির বিরাট কোহালির ঔদ্ধত্য নিয়ে মন্তব্য করেও বিতর্কিত হন। পাছে তাঁকে পাকিস্তানে যেতে বলা হয়, তার জন্য আগেভাগেই বলে রেখেছিলেন, তিনি দেশ ছাড়তে রাজি নন!
প্রসঙ্গত, ৩ ডিসেম্বর উত্তরপ্রদেশের বুলন্দশহরের স্যানা মহকুমা এলাকায় মাহু গ্রামের বাইরে জঙ্গল লাগোয়া একটি মাঠে প্রায় ২৫টি গরুর মাংস পড়ে থাকতে দেখা যায় বলে গুজব রটে। গো-হত্যার প্রতিবাদে সকালে ওই এলাকায় বিক্ষোভ শুরু হয়। ট্র্যাক্টর ও ট্রলি ভরে ওই মাংস নিয়ে রাস্তা অবরোধ করে প্রতিবাদ জানায় এলাকার প্রায় ৪০০ মানুষ। খবর পেয়ে অবরোধ সরাতে পুলিশ সেখানে গেলে বিক্ষোভকারীদের ছোড়া পাথরে গুরুতর আহত হন ইনস্পেক্টর সুবোধ কুমার সিংহ। পরে হাসপাতালে নেয়ার পর তিনি মারা যান। এ ছাড়া পুলিশের গুলিতে সুমিত নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা নিহত হয়েছেন।
এসআর/এমএস