বইপড়ার পাশাপাশি সংস্কৃতিচর্চার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে
বাংলাদেশে বহু ভাষা, ধর্ম ও মতের মানুষ মিলে মিশে থাকুক, নতুন প্রজন্ম এটিই চায়। তারা চায় কেউ কাউকে হেয় না করুক। এটি করা গেলে সত্যিকার অর্থে নতুন প্রজন্ম আলোকিত মানুষ হয়ে গড়ে উঠবে। আর এজন্য বর্তমান সময়ে বইপড়ার অভ্যাস গড়ে তোলার পাশাপাশি সংস্কৃতিচর্চার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। বই-ই পারে মানুষের হতাশা দূর করে জীবনকে আনন্দে পরিপূর্ণ করতে।
রোববার (৮ ডিসেম্বর) বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের দেশব্যাপী ভ্রাম্যমাণ বইমেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ছাত্রজীবনের স্মৃতি রোমন্থন করে বলেন, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের কথা বলতে গেলে আমি সবসময় নস্টালজিক হয়ে পড়ি। কারণ, পাবলিক লাইব্রেরির পাশাপাশি বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ছিল আমার বইপড়ার অন্যতম জায়গা। বইপড়া ও সংস্কৃতিচর্চার অভ্যাস গড়ে উঠলে সত্যিকারের আলোকিত মানুষ গড়ার পথ সুগম হবে।
তিনি বলেন, আমি মনে করি, গত ১৫ বছরে আমাদের বাইরে রাজনীতিগত এবং ভেতরে সাংস্কৃতিক অধঃপতন হয়েছে। সাংস্কৃতিক অধঃপতনের জন্য কে দায়ী কারা দায়ী, এটি নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে। তবে যারা সংস্কৃতিচর্চা করেন তারা সবার প্রতি একই ধরনের উদারতা দেখাবেন, এটিই কাম্য।
একে অন্যকে ‘অপর’ ভাবার প্রবণতা সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য ‘ভালো কিছু নয়’ উল্লেখ করে সংস্কৃতি উপদেষ্টা বলেন, বর্তমান প্রজন্ম এই প্রবণতা থেকে দূরে থাকতে চায়।
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমাণ পাঠাগারের ভূমিকা তুলে ধরে তিনি বলেন, এখানে সরকারের নিজের কোনো টাকা নেই, টাকা জনগণের। জনগণের টাকা জনগণের কাজেই ব্যয় করতে হয়। ভ্রাম্যমাণ পাঠাগারও জনগণের কাজ। এই কাজে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় যুক্ত থাকতে পারায় আমি মনে করি মন্ত্রণালয় তার কাজ ঠিকঠাক করছে। আমরা আগামী দিনে এই কাজ নিয়ে আরও এগিয়ে যাবো। এটিকে কীভাবে আরও ছড়িয়ে দেওয়া যেতে পারে, আমরা তা নিয়ে কাজ করবো।
আরও পড়ুন
কেমন হবে গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী বইমেলা
চলছে প্রস্তুতি, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই হচ্ছে বইমেলা
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, হতাশা দূর করে জীবনকে আনন্দে পরিপূর্ণ করতে বই-ই একমাত্র মাধ্যম। তিনি এই বইপড়া কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা জানিয়ে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের আয়োজনে দেশব্যাপী বইমেলা ও সাংস্কৃতিক উৎসবকে সাধুবাদ জানান।
দেশব্যাপী বইমেলা ও সাংস্কৃতিক উৎসব আয়োজন করার জন্য বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রকে ধন্যবাদ জানিয়ে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য অনুবিভাগ) নাফরিজা শ্যামা বলেন, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এ আয়োজনের অংশীদার হতে পেরে গর্বিত।
সভাপতির বক্তব্যে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সভাপতি আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ব্রিটিশরা চায়ের নেশা ধরিয়ে দিয়েছিল আর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র বইয়ের নেশা ধরিয়ে দেওয়ার জন্য কাজ করছে। প্রায় আড়াই কোটি পাঠককে বিনা পয়সায় বই পড়িয়েছে এই প্রতিষ্ঠান। বই সবার জন্য উন্মুক্ত করার লক্ষ্যে এই প্রচেষ্টা। বিশেষত স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বইপড়ার অভ্যাস তৈরির লক্ষ্যে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র কাজ করে যাচ্ছে।
এদিন বেলা ১১টায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র প্রাঙ্গণে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও মেটলাইফ ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় দেশব্যাপী ভ্রাম্যমাণ বইমেলা ও সাংস্কৃতিক উৎসবের উদ্বোধন করেন উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের পরিচালক শামীম আল মামুন এবং মেটলাইফ ফাউন্ডেশনের কমিউনিকেশন বিভাগের সহকারী ভাইস প্রেসিডেন্ট ফারিয়া মাহবুব।
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র তিনটি গাড়ির মাধ্যমে দেশের ৬৪ জেলা এবং সংলগ্ন উপজেলা ও বিভিন্ন শহরে মোট ১২৮টি স্থানে বইমেলা ও সাংস্কৃতিক উৎসব আয়োজন করছে। স্থানীয় পর্যায়ে বইমেলা ও সাংস্কৃতিক উৎসব পরিচালিত হবে মেটলাইফ ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায়।
এমকেআর/জিকেএস