ভিডিও EN
  1. Home/
  2. একুশে বইমেলা

যাপিত জীবনের গল্প: দিন যাপনের দিনলিপি

সালাহ উদ্দিন মাহমুদ | প্রকাশিত: ০৩:১০ পিএম, ২৪ জুলাই ২০২৪

গণমাধ্যমকর্মীদের ব্যাপারে সাধারণ মানুষের আগ্রহ কেমন হতে পারে? হয়তো কখনো ইতিবাচক, কখনোবা নেতিবাচক। পত্রিকায় ছাপা হওয়া ঝকঝকে সংবাদটি কিভাবে সংগ্রহ করা হয়, কোন প্রক্রিয়ায় প্রকাশিত হয়—এসব বিষয়ে অনেকেই জানেন না। এই পেশার সঙ্গে যারা যুক্ত নন, তাদের জানার কথাও নয়। ফলে সংবাদসংশ্লিষ্টরা প্রতিনিয়ত যে ঝড়-ঝাপ্টা মোকাবিলা করেন, তা জানার আগ্রহ কম-বেশি অনেকেরই থাকে। সেই তৃষ্ণা মেটাতে এবার সহযোগিতা করবে সাংবাদিক মনিরুজ্জামান উজ্জ্বলের ‘যাপিত জীবনের গল্প’ বইটি।

২০২৪ সালের অমর একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে সিনিয়র সাংবাদিক মনিরুজ্জামান উজ্জ্বলের ‘যাপিত জীবনের গল্প’ বইটি। তিনি সাংবাদিকতা পেশায় দুই যুগেরও বেশি সময় কাটিয়ে দিয়েছেন। এখনো দুর্বার গতিতে কাজ করে যাচ্ছেন। তবে এটিই তার প্রকাশিত প্রথম বই। সংগতকারণেই বইটিতে তিনি সাংবাদিকতা পেশার সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, প্রিয়-অপ্রিয় এবং বিব্রতকর পরিস্থিতির পাশাপাশি গ্রাম ও শহুরে জীবনের নানা বাস্তব ঘটনা তুলে ধরেছেন।

বইটিতে তিনি তুলে ধরেছেন যাপিত জীবনের না-বলা অনেক গল্প। অজানা অনেক কাহিনি তার লেখনীতে উঠে এসেছে—

এক. বাংলার বাণীর সেই দিনগুলো যদি আবার ফিরে পেতাম;
দুই. নায়ক-নায়িকার গোপন বিয়ে মামলা আমার জেলখানায় প্রবেশের সুযোগ;
তিন. জীবনের প্রথম মর্গে লাশ কাটা দেখে রাতে ঘুমাতে পারিনি;
চার. আমার বন্ধুটি কি ১ লাখ লাশ কাটার রেকর্ড করতে পেরেছে?
পাঁচ. যে সম্পাদকের হাতের ছোয়ায় সাধারণ নিউজও হয়ে উঠত অসাধারণ!
ছয়. রিপোর্টটা বাসায় নিয়ে যান, বউকে পড়তে দিয়েন;
সাত. সাংবাদিকতা জীবনের অন্যতম সেরা সময় কেটেছে যেথায়;
আট. পচাগলা লাশের দুর্গন্ধে জন্মদাতা বাবাও বারবার নাকে-মুখে রুমাল চেপে ধরেছিল;
নয়. কয়েক মিনিট সময় দেন প্লিজ, হালকা মেকআপ নিয়ে আসি।
দশ. একটি গোপন চিঠির গল্প!
এগারো. দূর মিয়া, প্যান্টে প্রস্রাব কইরা দিলে তারপর কি ডাকবো?
বারো. পাঁচ বছর অপেক্ষার পর কাঙ্ক্ষিত সেই ফোনকলটি এসেছিল;
তেরো. দুঃখের মাঝে হাসির স্মৃতি;
চৌদ্দ. আপনি আমার রাতের ঘুম হারাম করে দিয়েছেন।
পনেরো. দেখতে তো মাস্তান মাস্তান লাগে, পড়াশোনা না-কি রাজনীতি, কোনটা করবে?
ষোলো. ডিআরইউ-তে না গেলে পেটের ভাত হজম হতো না!
সতেরো. তাস খেলার নেশায় অপরিচিতের বাসায়: ডাকাত ভেবেছিল মহল্লার ছেলেরা;
আঠারো. আমারে দেন, আমি পাই নাই বলেই টেবিল ভেঙে মাটিতে গড়াগড়ি!
উনিশ. প্রেস রিলিজ নিয়ে যাওয়ার সময় অনেকবার কেঁদেছিলাম;
বিশ. প্রিন্ট থেকে অনলাইন জার্নালিজমে যাত্রা যেভাবে শুরু;
বিশ-২. যুগান্তর টু ঢাকাট্রিবিউন: স্বপ্ন ডানা মেলেছিল কিন্তু উড়তে পারেনি!
একুশ. ঢাকাট্রিবিউনকে মিস করি, তবে কথিত এলিট সাংবাদিকদের দেখলে এখনও থুথুর দলা জমে;
বাইশ. বেশি বেতনে চাকরির বিড়ম্বনায় কেটে যায় বেকারত্বের ৭ মাস।
তেইশ. বৈধ উপার্জনের অন্যতম মাধ্যম শ্রেষ্ঠ রিপোর্টারের পুরস্কার ও ফেলোশিপ লাভ!
চব্বিশ. শহরে জন্মগ্রহণ করলেও শৈশবজুড়ে অজপাড়াগাঁয়ের অসংখ্য স্মৃতি!
পঁচিশ: ঘরে টিভি, বাইরে হলে ও ভিসিআরে সিনেমা দেখার সেই ফেলে আসা সোনালি দিন;
ছাব্বিশ: আবাহনীর ঘোর সমর্থক হয়েও চড়থাপ্পড় খেয়ে স্টেডিয়াম ছাড়তে হয়েছিল;
সাতাশ: গভীর রাতে চার রাস্তার মোড়ে বাপবেটা হাঁড়ি ভাঙতেই কে কে বলে চেঁচিয়ে ওঠে প্রতিবেশী;
আটাশ: শুধু চেয়ে চেয়ে দেখলাম তুমি চলে গেলে আমার বলার কিছু ছিল না;
ঊনত্রিশ: টিএন্ডটি টেলিফোনের রিং শুনলেই রিসিভ করতে ঝাঁপিয়ে পড়তাম!
ত্রিশ: সেইদিন খুশি হবো যেদিন এসিড ভিকটিমদের নিয়ে আর রিপোর্ট লিখতে হবে না।
একত্রিশ: আরেক প্লেট অর্ডার দিলে কিন্তু মাইরা উঠাইয়া দিম;
বত্রিশ: এমন বাপ কই পাবি বেটা, ফেল করলেও যার সমস্যা নাই;
তেত্রিশ: গরিবের ডাক্তারকে খুব মনে পড়ে, না-জানি কেমন আছে তার রাজা বাদশাহ ও সম্রাট;
চৌত্রিশ: আবাসিক হোটেলে চাকরির বিচিত্র অভিজ্ঞতা।
এসব শিরোনামের মধ্য দিয়েই প্রতীয়মান হয়, তার যাপিত জীবনের গল্পের ধরন। নিঃসন্দেহে তিনি বিচিত্র অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন।

অধুনালুপ্ত ‘দৈনিক বাংলার বাণী’র মাধ্যমে মনিরুজ্জামান উজ্জ্বলের সাংবাদিকতার পথচলা শুরু হয়। পরে তিনি দেশের শীর্ষস্থানীয় দুটি জাতীয় পত্রিকা ‘দৈনিক যুগান্তর’ ও ‘দৈনিক সমকাল’র রিপোর্টিং বিভাগে যোগ দেন। সেখানে এক যুগেরও বেশি সময় কেটেছে তার। তারপর ইংরেজি জাতীয় দৈনিক পত্রিকা ‘ঢাকাট্রিবিউন’ হয়ে বর্তমানে দেশের জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে প্ল্যানিং এডিটর হিসেবে কর্মরত।

বইটি পাঠে জানা যাবে, বিগত দুই যুগের বেশি সময় সাংবাদিকতা পেশায় মাঠ পর্যায়ের রিপোর্টার ছিলেন উজ্জ্বল। দেশের প্রথিতযশা সম্পাদক প্রয়াত গোলাম সারওয়ার, মুসা আহমেদ এবং শফিকুল আজিজ মুকুলসহ প্রখ্যাত সম্পাদকদের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ হয়েছে তার। রিপোর্টিং পেশায় থাকার কারণে সমাজের উচ্চবিত্ত থেকে শুরু করে নিম্নবিত্তসহ সব শ্রেণিপেশার মানুষের সঙ্গে চলাফেরা ও অবাধ মেলামেশা করতে পেরেছেন তিনি।

কখনো কখনো জীবনের ঝুঁকি নিয়ে একজন প্রকৃত রিপোর্টার হিসেবে নানা ঘটনা প্রবাহের মধ্য দিয়ে সামনে এগিয়ে গেছেন। তবে সব ঘটনা কিন্তু পত্রিকায় প্রকাশিত হয় না। নানা কারণে তা ধামাচাপা পড়ে যায়। অনেক সময় রিপোর্টারের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল গুরুত্বপূর্ণ সংবাদটি পাঠক পর্যন্ত পৌঁছায় না। সেসব অজানা ঘটনাই পাঠকের সামনে সবিস্তারে তুলে ধরেছেন লেখক উজ্জ্বল।

সাংবাদিকতা ছাড়াও জীবনের নানাবিধ ঘটনা উল্লেখ করেছেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে তিন তারকা হোটেলে রিসেপশনিস্ট হিসেবেও কাজ করেছেন তিনি। উঠে এসেছে পারিবারিক জীবনের গল্পও। পিঠ চাপড়ে তিনি ছেলেকে বলেছিলেন, ‘যা বেটা ঘুমাতে যা, এমন বাপ কই পাবি, যার ফেল করলেও কোনো সমস্যা নেই।’ বিছানায় শোয়ার পর কপালে হাত বুলিয়ে বলেছিলেন, ‘দেখে নিস কাল তোর পরীক্ষা ভালো হবে।’

এ ছাড়া যারা সাংবাদিকতা পেশায় আসছেন বা আসতে চাচ্ছেন, তাদের পাশাপাশি একজন পেশাদার সাংবাদিক সম্পর্কে অনেকেরই জানার কৌতূহল আছে। ‘যাপিত জীবনের গল্প’ বইটি পড়ার মাধ্যমে তারা অনেক অজানা তথ্য জানতে পারবেন। ৩৪টি উল্লেখযোগ্য ঘটনার গল্প নিয়ে বইটির প্রথম খণ্ড সাজানো হয়েছে। গল্পগুলোতে সত্য তুলে ধরতে বিন্দুমাত্র পিছপা হননি লেখক। এই লেখক ও সাংবাদিক সম্পর্কে দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক সাইফুল আলম লিখেছেন, ‘সাংবাদিকতার মত একটা অনিশ্চয়তায় ভরা পেশাকে আঁকড়ে ধরে থাকতে পারে একমাত্র অদম্য সাহসী এবং নিবেদিত প্রাণ ব্যক্তিরা। উজ্জ্বল সেই সীমিত সংখ্যক ব্যক্তিদের একজন।’

বইটি পাঠ শেষে পাঠক অবশ্যই দ্বিতীয় খণ্ডের জন্য অপেক্ষা করতে বাধ্য থাকবেন। সাংবাদিকতায় আগ্রহী এবং সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীদের দিকনির্দেশক হিসেবে টিকে থাকবে বইটি। ‘যাপিত জীবনের গল্প’ বইটি ঝুমঝুমি প্রকাশন থেকে প্রকাশিত হয়েছে। বইটির প্রচ্ছদ এঁকেছেন চিত্রশিল্পী মামুন হোসাইন। মূল্য রাখা হয়েছে ৪৭০ টাকা। আমি বইটির বহুল পাঠ ও প্রচার কামনা করছি।

এসইউ/জিকেএস

আরও পড়ুন