বইকে আমি সন্তান মনে করি না: নির্জন
ফরিদুল ইসলাম নির্জনের জন্ম ১৯৮৭ সালের ১০ অক্টোবর সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায়। হিসাববিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর সরকারি বাঙলা কলেজ থেকে। বর্তমানে আইসিএমএবিতে সিএমএ কোর্সে অধ্যয়নরত। শৈশব থেকেই পড়ার প্রতি তুমুল আগ্রহ। সেই আগ্রহ থেকেই নিয়মিত লিখতে থাকেন। লেখালেখির হাতেখড়ি কবিতা হলেও কথাসাহিত্য নিয়েই এগিয়ে চলেছেন। বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে বিজয়ী হয়েছেন। এছাড়া বাংলাদেশ নারী লেখক সোসাইটির গ্রন্থ সম্মাননা হিসেবে শুভেচ্ছা স্মারক-২০২২, বাসপ সাহিত্য পুরস্কার-২০২৩ অর্জন করেন। প্রকাশিত হয়েছে পাঁচটি বই—শিশু-কিশোর গল্পগন্থ ‘স্কুল মাঠে ভূতের মেলা’, রম্যগল্পের বই ‘প্রেমের নাম হাসপাতাল’ ও উপন্যাস ‘আজো খুঁজি তারে’, ‘আশ্রয়’ এবং ‘আপনজন’।
এবারের বইমেলা, বই প্রকাশ ও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন জাগো নিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কবি ও কথাশিল্পী সালাহ উদ্দিন মাহমুদ—
জাগো নিউজ: এবারের বইমেলা সম্পর্কে কিছু বলুন—
ফরিদুল ইসলাম নির্জন: এবারের বইমেলা শুরুতেই অনেক অগোছালো ভাবে গড়ে উঠেছে। ওয়াশরুম নেই, সিরিয়াল সাজাতে খামখেয়ালিপনা। তবে এসবের বাইরে আনন্দের খবর, শুরু থেকেই পাঠকের আনাগোনা, পাঠকমুখর হয়ে ওঠা। প্রতি বছর কোনো না কোনো ঝামেলা থাকে, এবার সে ঝামেলা নেই। সে হিসেবে বইমেলা এবার জমবে অনেক।
আরও পড়ুন: সুশৃঙ্খল একটি মেলা দেখতে চাই: চাণক্য বাড়ৈ
জাগো নিউজ: অনেকেই বলেন ‘তরুণদের বই চলে না’—এ ব্যাপারে আপনার অভিমত কী?
ফরিদুল ইসলাম নির্জন: আমি এই মতের ঘোর বিরোধী। কারণ আপনি নিজেও একজন তরুণ লেখক হিসেবে জানেন, সবচেয়ে বেশি বই চলে তরুণদের। আগে বেশিরভাগ প্রকাশক তরুণদের বই বের করতে চাইতেন না। এখন কিন্তু অনেক প্রকাশক আগ্রহ নিয়েই তরুণদের বই করছেন। তরুণদের বই বিক্রি হচ্ছে বলেই তো বই বের করার সাহস করছেন তারা। বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয়, পাঠকপ্রিয় কথাসাহিত্যিক, কবি, প্রবন্ধকার তরুণদের মধ্যে। আগামীতে আরও তরুণ পৃথিবীতে সাহিত্যের রাজপুত্র হিসেবে কাজ করবে।
জাগো নিউজ: অনেকেই বইকে সন্তান মনে করেন—আপনার কী মনে হয়?
ফরিদুল ইসলাম নির্জন: বইকে আমি সন্তান মনে করি না। আপনি নিজেও একজন লেখক। আপনার অনেকগুলো বই আছে। নিয়মিত লিখছেন। আপনি জানেন, সব বই একই রকমের হয় না। একটা পর্যায় গিয়ে কোনো কোনো সময় মনে হয়, ওই বইটি খারাপ ছিল। কোনো কোনো লেখক সেই বইটিকে অস্বীকার করেন। কিন্তু একজন সন্তান সে যেমনই হোক, তাকে কেউ অস্বীকার করতে পারে না। বইয়ের ভালোবাসা এক রকম, আর সন্তানের ভালোবাসা আরেক রকম।
জাগো নিউজ: আপনার এবারের উপন্যাস ‘জীবনবিলাস’ সম্পর্কে বলুন—
ফরিদুল ইসলাম নির্জন: ‘জীবনবিলাস’ আমার ষষ্ঠ গ্রন্থ ও চতুর্থ উপন্যাস। মানুষের যাপিত জীবনের গল্প, স্মৃতির রোমন্থন। মানবজনমের কিছু স্মৃতি থাকে যা ভুলে থাকা যায় না, মনের ক্যানভাসে জলছবি হয়ে ভাসে। সেটি হতে পারে জীবনবিলাসে বিচ্ছেদ বা মিলন। আমি এসবকেই তুলে ধরেছি। আমাদের সময় সেই সোনালি শুক্রবার, আলিফ লায়লা, ভিসিআর, সিডি, মাঠে খেলাধুলা আর অসংখ্য স্মৃতি—যেগুলোকে বর্তমানে তুলনা করেছি। জীবনবিলাস উপন্যাস প্রতিটি মানুষের হৃদয়ের ভেতরটাকে জাগিয়ে তুলবে। পড়তে গিয়ে মনে হবে এই তো আমার জীবনের গল্প। কেননা উপন্যাসের একটি চরিত্র রিমি। যার বেদনাদায়ক অধ্যায়কে সুখপাঠ্য করে তোলে দাদি, ফুফু ও অন্য স্বজনরা। কিশোরী বয়সে সম্পর্ক গড়ায় সৌরভের সঙ্গে। দাদির মধ্যস্ততায় সম্পর্কের মিলন ঘটে। ভালো চাকরি হয়, কন্যা আসে। তার ভেতরই নেমে আসে বিশ্বাস আর ভরসার ঘাটতি, মান-অভিমান। ঠিক তখনই উপন্যাসের মোড় ঘুরে যায়। বাড়তে থাকে কাহিনির চিত্রপট।
আরও পড়ুন: বইমেলায় পাঠকের ভিড় দেখতে চাই: কিঙ্কর আহসান
জাগো নিউজ: পাঠক আপনার বইটি কেন পড়বেন?
ফরিদুল ইসলাম নির্জন: মানুষ তার স্মৃতি কখনো কখনো ভুলে যায়। দীর্ঘদিনের এই স্মৃতিকে বইটি জাগিয়ে তুলবে। পাঠক বা শুভাকাঙ্ক্ষীদের মনে হবে এই তো আমার জীবনের গল্প। প্রেম মানুষকে কাছে টানে, বিচ্ছেদ মানুষকে কতটা পোড়ায়, তা পড়তে গিয়ে বুঝতে পারবেন। অতীতের স্মৃতি আর বর্তমানের সমন্বয় হিসেবে জীবনবিলাস পাঠককে কাছে টানবে। আমার মনে হয়, এই কাছে টানা থেকেই জীবনবিলাস পড়বেন সবাই।
জাগো নিউজ: বইমেলার পাঠকদের জন্য কিছু বলুন—
ফরিদুল ইসলাম নির্জন: একজন লেখক নিজের সর্বোচ্চ মেধা আর মননের বহিঃপ্রকাশে লেখেন। নিজের মতো সাজান কবিতার শ্লোক বা কথার বাহারে। তাদের এই মেধা, মনন আর শ্রমকে সার্থক করতে পাঠকের বিকল্প নেই। আপনারা বইমেলায় আসুন। বই কেনার বাজেট রাখুন। কত টাকা, কত ভাবে ব্যয় হয়। একটি সুখপাঠ্য বই কিনে রাখুন। যতদিন পৃষ্ঠা থাকবে, ততদিন আলো ছড়াতে থাকবে। বইমেলায় ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশের স্টলে আমার নতুন বইটি পাবেন। পড়ে দেখবেন। ভালো লাগবে আশা করি।
এসইউ/জিকেএস