ভিডিও EN
  1. Home/
  2. একুশে বইমেলা

ভালো বইমেলার আশা প্রকাশকদের, বাংলা একাডেমির যত আয়োজন

রায়হান আহমেদ | প্রকাশিত: ০৬:৫১ পিএম, ২৯ জানুয়ারি ২০২৪

আর দুদিন পর পর্দা উঠবে অমর একুশে বইমেলা-২০২৪ এর। এবার করোনার মতো মহামারি কিংবা কোনো রাজনৈতিক অস্থিরতা নেই। লিপইয়ার হওয়ায় মিলছে একদিন বাড়তি সময়। সঙ্গে যোগ হয়েছে মেট্রোরেল সুবিধা। সব মিলে ভালো একটি মেলার আশা করছেন প্রকাশকরা। বাংলা একাডেমি মেলার সব আয়োজন নিজেরাই সম্পন্ন করছে এবার। স্টল বিন্যাস, প্রবেশপথ, খাবারের ব্যবস্থাসহ মেলা প্রাণবন্ত করতে একাডেমির পক্ষ থেকেও থাকছে নানান আয়োজন।

আমাদের পূর্ণ প্রস্তুতি চলছে। ১০১টি নতুন বই মেলায় আসবে। মেলার সফলতা আসলে আয়োজক কমিটির ওপর নির্ভর করবে। তারা কীভাবে পরিচালনা করছে। মেলায় পাঠকের উপস্থিতি বাড়ানোর জন্য শুক্রবারও মেট্রোরেল চালু রাখার জন্য বাংলা একাডেমিকে জানিয়েছি।- অন্যপ্রকাশের কর্ণধার মাজহারুল ইসলাম

এবার মেলায় অংশ নেবে মোট ৬৪৭টি প্রতিষ্ঠান। তালিকাভুক্ত ৬২৪টির সঙ্গে নতুন যুক্ত হচ্ছে ২৩টি প্রকাশনী। মেট্রোরেল চালু থাকায় মেলায় পাঠকদের অংশগ্রহণ নিয়ে উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে মেলার আয়োজক ও প্রকাশকদের মধ্যে। বিগত বছরগুলোর শঙ্কা কাটিয়ে এবারের মেলা আরও জমজমাট হবে আশা করছে বাংলা একাডেমি।

করোনা মহামারিতে বিগত বছরগুলোতে বইমেলা নিয়ে নানান সংকটে পড়তে হয় আয়োজক ও প্রকাশকদের। করোনা মহামারি চলাকালীন ২০২১ সালে মেলায় বই বিক্রি হয় মাত্র ৩ কোটি ১১ লাখ টাকার। ২০২২ সালে করোনার কারণে কিছুটা দেরিতে শুরু হয় বইমেলা। ১৫ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া ওই মেলায় প্রায় ৫২ কোটি ৫০ লাখ টাকার বই বিক্রি হয়। ২০২৩ সালে যথাসময়ে মেলা চললেও কাগজের মূল্যবৃদ্ধিতে বইয়ের চড়ামূল্য নিয়ে ছিল সমালোচনা। তারপরও বিক্রি হয় ৪৭ কোটি টাকার বই। পাশাপাশি আদর্শ প্রকাশনীকে স্টল বরাদ্দ না দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা-সমালোচনা তৈরি হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন পরিসরে। এ বছর আদর্শ প্রকাশনীকে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

jagonews24

এবার সব আয়োজন বাংলা একাডেমির

বিগত বছরগুলোতে বিভিন্ন ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে মেলার কাঠামোসহ অন্য সব কাজ সম্পন্ন হতো। বিভিন্ন অসহযোগিতা ও সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এবার পুরো মেলার দায়িত্ব বাংলা একাডেমি একাই সম্পন্ন করবে। এমনটাই জানিয়েছে বইমেলা কমিটি।

মেলা কেন্দ্র করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বাংলা একাডেমি অংশে এরই মধ্যে প্রায় সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে আয়োজক কমিটি। প্রথমবারের মতো শিক্ষার্থীদের জন্য অতিরিক্ত ৫ শতাংশ ছাড়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কার্ড দেখাতে পারলেই মিলবে এ সুযোগ। এছাড়াও ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের বইমেলায় নিয়ে আসতে শিক্ষকদের কাছে চিঠি দিয়েছে বাংলা একডেমি।

মেট্রোরেলে বাড়তি উচ্ছ্বাস

রাজধানীতে যানজট থাকার কারণে প্রতিবার মেলায় পাঠক-দর্শনার্থীদের নানান ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এবছর মতিঝিল থেকে উত্তরা পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু হওয়ায় উচ্ছ্বসিত মেলার আয়োজক ও পাঠকরা। প্রকাশকরা মনে করছেন, মেট্রোরেলের কারণে এবার মেলায় দর্শনার্থী ও পাঠকের উপস্থিতি বাড়বে।

jagonews24

আদর্শ প্রকাশনীর সিইও মাহবুবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘গত বছর আমাদের মেলায় স্টল দেওয়া হয়নি। এবারও নানান ধোঁয়াশার পর অনুমতি পেয়েছি। স্টল পাবো কি না তা নিয়ে অনেক চিন্তায় ছিলাম। সব গোছাতে পারিনি এখনো। খুব ব্যস্ত সময় যাচ্ছে। আমাদের ৫০টি নতুন বই আসছে এবার। মেলায় এবার পাঠকদের আনাগোনাও বেশি দেখা যাবে মনে করছি। মেট্রোরেল বাড়তি একটা সুবিধা দেবে।’

স্টল বরাদ্দ দেরিতে হওয়ায় মেলা শুরুর আগে সম্পূর্ণ স্টল নির্মাণ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন প্রকাশকরা। প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান পুঁথিনিলয়ের প্রকাশক এবং পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সহ-সভাপতি শ্যামল পাল জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা বাংলা একাডেমিকে চলতি মাসের ১৫ তারিখ স্টল বরাদ্দের কথা বলেছিলাম। বারবার আবেদন জানিয়েছিলাম স্টল সাজানোর জন্য অন্তত ১৫ দিন সময় দিতে। কিন্তু তারা শোনেনি। বাংলা একাডেমি কলকাতা বইমেলা নিয়ে ব্যস্ত ছিল। ২৩ তারিখ স্টল বরাদ্দ দেওয়ার পর সাতদিনে কাজ শেষ করা সম্ভব হয় না। এতে মেলার সৌন্দর্য নষ্ট হবে।’

তিনি বলেন, ‘এবার মেট্রোরেল আমাদের অনেক সুবিধা দেবে। পাঠকরা মেলামুখী হবে। এবার স্টল বরাদ্দ নিয়ে কোনো প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ঝামেলায় পড়েনি। প্রকাশকরা আগে থেকে সচেতন ছিল।’

অন্যপ্রকাশের কর্ণধার মাজহারুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের পূর্ণ প্রস্ততি চলছে। ১০১টি নতুন বই মেলায় আসবে। মেলার সফলতা আসলে আয়োজক কমিটির ওপর নির্ভর করবে। তারা কীভাবে পরিচালনা করছে। মেলায় পাঠকের উপস্থিতি বাড়ানোর জন্য শুক্রবারও মেট্রোরেল চালু রাখার জন্য বাংলা একাডেমিকে জানিয়েছি।’

 

মেলার প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন। গত এক সপ্তাহ থেকে প্রতিদিন মেলা প্রাঙ্গণ পরিদর্শন করছি। কোনো ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ছাড়া নিজেরাই মেলা পরিচালনা করা হচ্ছে। এবার মেলায় কোন বই থাকবে আর কোনগুলো থাকবে না সে সিদ্ধান্ত নেবে টাস্কফোর্স। এটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও পুস্তক প্রকাশক মালিক সমিতি নিয়ে গঠিত হবে। আশা করছি সবার সহযোগিতায় সুন্দর সুশৃঙ্খল মেলা উপহার দিতে পারবো।- বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব কে এম মুজাহিদুল ইসলাম

 

লিপইয়ারের কারণে এবছর মেলা হবে ২৯ দিন। বাংলা একাডেমি সূত্রে জানা যায়, প্যাভিলিয়ন ও স্টলের জন্য রাখা হয়েছে আলাদা সারি। প্রবেশদ্বার থাকবে চারটি। টিএসসির উল্টোদিকের প্রবেশদ্বার, বাংলা একাডেমির উল্টোদিক ও রমনা কালীমন্দিরের নিকটবর্তী প্রবেশপথ। গত বছর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের (আইইবি) দিকের প্রবেশপথটি সপ্তাহে পাঁচদিন বন্ধ থাকতো। এবার তা পূর্ণ সময় খোলা থাকবে। রমনা কালীমন্দিরের নিকটবর্তী মেলার অংশটুকু হবে শিশুচত্বর। প্রতিবারের মতো এ বছরও বইমেলায় খাবারের দোকান থাকছে। মেলায় খাবারের দোকান থাকবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শেষ প্রান্তে। চুলা বন্ধ রাখাসাপেক্ষে তাদের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

এদিকে বইমেলার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে বাংলাদেশ পুলিশ, র‌্যাব, আনসার, বিজিবি ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। নিরাপত্তার জন্য মেলা এলাকাজুড়ে সিসিটিভি ক্যামেরার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

jagonews24

সার্বিক বিষয়ে বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব কে এম মুজাহিদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘মেলার প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন। গত এক সপ্তাহ থেকে প্রতিদিন মেলা প্রাঙ্গণ পরিদর্শন করছি। কোনো ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ছাড়া নিজেরাই মেলা পরিচালনা করা হচ্ছে। এবার মেলায় কোন বই থাকবে আর কোনগুলো থাকবে না সে সিদ্ধান্ত নেবে টাস্কফোর্স। এটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও পুস্তক প্রকাশক মালিক সমিতি নিয়ে গঠিত হবে। আশা করছি সবার সহযোগিতায় সুন্দর সুশৃঙ্খল মেলা উপহার দিতে পারবো।’

মেট্রোরেলের নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ম্যানেজার মাহফুজুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আগের নিয়মেই আমাদের ট্রেন চলাচল করবে। মেলা উপলক্ষে শিডিউল এখনো পরিবর্তন হয়নি। শুক্রবার মেট্রোরেল চালুর ব্যাপারে আবেদন করেছিল; তবে এ ব্যাপার এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

আরএএস/এএসএ/জিকেএস