বইয়ের বিক্রি বাড়ানোর বিকল্প নেই: মুনশি মুহাম্মদ উবাইদুল্লাহ
মুনশি মুহাম্মদ উবাইদুল্লাহ একাধারে তরুণ লেখক, সম্পাদক ও অনুবাদক। গল্প, ছড়া, কবিতা, মুক্তগদ্য, কলাম, প্রবন্ধ-নিবন্ধসহ সব শাখায় তার অবাধ বিচরণ। মাতৃভাষা বাংলার পাশাপাশি লিখছেন আরবি, উর্দু ও হিন্দি ভাষায়। দেশের জাতীয় দৈনিক ছাড়াও ভারত, পাকিস্তানের বাংলা, হিন্দি ও উর্দু ভাষার জাতীয় দৈনিকে রাখছেন মেধার স্বাক্ষর। দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশের ইসলাম পাতায় সম্পাদনার দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান লেকচার পাবলিকেশন্সের ধর্মীয় প্রকল্প ‘আজহান পাবলিকেশন্স’র কোরআন ও ধর্মীয় সৃজনশীলের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত। তার রচিত, অনূদিত ও সম্পাদিত বইয়ের সংখ্যা ত্রিশেরও বেশি।
সম্প্রতি বইমেলা ও বই প্রকাশ সম্পর্কে কথা বলেছেন জাগো নিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কবি ও কথাশিল্পী সালাহ উদ্দিন মাহমুদ—
জাগো নিউজ: আগামী বইমেলায় আপনার কয়টি বই প্রকাশিত হচ্ছে?
মুনশি মুহাম্মদ উবাইদুল্লাহ: ২০২৪ সালের একুশে বইমেলায় আমার ৭টি বই প্রকাশ পেতে যাচ্ছে, ইনশাআল্লাহ। রাহনুমা প্রকাশনী থেকে শায়খ আবদুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ রচিত ও আমার অনূদিত ‘নবীজির শিক্ষানীতি’ এবং বিভিন্ন সিরাত গ্রন্থ অবলম্বনে আমার রচিত ‘উম্মাহাতুল মুমিনিন’; ভাষা প্রকাশ থেকে মুফতি মুহাম্মদ তাকি উসমানি রচিত ও আমার অনূদিত ‘তাসাউফ (আত্মশুদ্ধির বয়ান)’ এবং মুইনুল ইসলাম, আল মামুন নূর ও মুহাম্মাদুল্লাহ ইয়াসিন অনূদিত ও আমার সম্পাদিত ‘হারামাইনের মিম্বরধ্বনি’; ইত্তিহাদ পাবলিকেশন থেকে মাওলানা সারফরাজ খান সফদার রচিত ও আমার অনূদিত ‘রাহে সুন্নাহ’; সমকালীন প্রকাশন থেকে গর্ভবতী নারীদের লাইফস্টাইল বিষয়ে পাকিস্তানের সাদিয়া আমের দেওয়ান রচিত ও আমার অনূদিত ‘আপনি যদি মা হন’ এবং পথিক প্রকাশন থেকে আরব বিশ্বের সাড়া জাগানো আরবি গ্রন্থ অবলম্বনে আমার রচিত ‘মহীয়সী নারীদের ইবাদত’ প্রকাশিত হবে।
আরও পড়ুন: গোছানো ও পরিপাটি বইমেলা চাই: রনি রেজা
জাগো নিউজ: বাংলা একাডেমি আয়োজিত আসন্ন বইমেলা কেমন দেখতে চান?
মুনশি মুহাম্মদ উবাইদুল্লাহ: বাংলা একাডেমি আয়োজিত বইমেলা আমাদের প্রাণ, বাঙালির গর্ব। মেলায় সমৃদ্ধি ও প্রাণবন্ত আয়োজন সব লেখকেরই কাম্য। লেখক-পাঠকের মেলবন্ধন হবে, বইয়ের সোদা গন্ধে মাতোয়ারা হয়ে উঠবে একাডেমি প্রাঙ্গণ— এমনটাই কামনা করি। মেলার পরিসর আরও বাড়ুক, সময় আরও বাড়ুক, বেশি বেশি লেখক-পাঠক-প্রকাশকের সমাগম হোক, এটাই সব সময়ের চাওয়া।
জাগো নিউজ: আপনার দেখা বিগত বইমেলায় কোনো অসঙ্গতি চোখে পড়েছে?
মুনশি মুহাম্মদ উবাইদুল্লাহ: একুশে বইমেলা মূলত বইয়ের মেলা, লেখক-পাঠকের প্রাণের মেলবন্ধনের জায়গা। এখানে অন্য কোনো উদ্দেশ্য চরিতার্থ করা কিংবা অহেতুক দেখা-সাক্ষাতের জন্য ভিড় করা কখনোই কাম্য নয়। বিগত দিনে বইমেলায় অকারণে কিছু লোকের সমাগম মেলার প্রাণ হারিয়েছে। বইয়ের মেলায় বইকে কেন্দ্র করে সব আয়োজন, দর্শন হোক; অন্য কোনো প্রসঙ্গ না থাকুক।
জাগো নিউজ: বইমেলায় বইয়ের বিক্রি বাড়ছে নাকি কমছে?
মুনশি মুহাম্মদ উবাইদুল্লাহ: আসলে বইয়ের কাটতি বাড়ুক বা কমুক, বই লেখা বা প্রকাশে এটা কারোরই চাওয়া নয়। তবু দিন শেষে যেহেতু বইটির পেছনে লেখকের শ্রম, প্রকাশকের অর্থনৈতিক ইনভেস্টমেন্টের ব্যাপার থাকে, সেজন্য বেচাবিক্রির হিসাব-নিকাশ করতে হয়। সে হিসেবে যতটুকু জরিপে দেখা গেছে, বিগত দিনের মেলায় বেচাবিক্রি তুলনামূলক খারাপ নয়। তবে প্রচার-প্রসারে গণমাধ্যমের সক্রিয়তা আরও বেশি অনুভব করি। মানুষ তার মার্কেটিংয়ের সমান বড়। যার যত মার্কেটিং, সে তত বড় লেখক বা তার বই ততটা বেচাবিক্রিতে এগিয়ে; পেছনের দিনগুলোতে এমনটাই দেখা গেছে। তাই সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে লেখক-প্রকাশকের এ শিল্প রক্ষার্থে প্রচারণায় আর নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করে বেচাবিক্রি বাড়ানোর বিকল্প নেই।
আরও পড়ুন: টাকা দিয়ে বই প্রকাশে আগ্রহী নই: জোবায়ের মিলন
জাগো নিউজ: বইয়ের প্রচারণাকে কোন দৃষ্টিতে দেখেন?
মুনশি মুহাম্মদ উবাইদুল্লাহ: প্রচারেই প্রসার। প্রচার না করে চুপচাপ বই লিখে কিংবা প্রকাশ করে ঘরে বসে থাকলে সেটা পাঠকের দোরগোড়ায় কড়া নাড়বে না। পাঠক উপকৃত হতে পারবেন না। জাতি সে জ্ঞানে সমৃদ্ধ হবে না। তাই প্রচারের বিকল্প নেই। যে যত মার্কেটিং করতে পারবে, পাঠক সামান্য হলেও তার প্রতি ঝুঁকবে। এ ক্ষেত্রে আধুনিক যুগের নতুন নতুন পদ্ধতি-কৌশল অবলম্বনের বিকল্প দেখি না।
জাগো নিউজ: বইমেলার পাঠকের জন্য কী পরামর্শ দেবেন?
মুনশি মুহাম্মদ উবাইদুল্লাহ: বইমেলা আমাদের প্রাণের মেলা। এ মেলা আমাদের জীবনের সমৃদ্ধির মেলা। মেলায় যত বেশি সমাগম হবে; তত বেশি ঋদ্ধ হবে দেশ, সমাজ, জাতি। জ্ঞানের বিকল্প কিছু নেই। জ্ঞানের সমৃদ্ধিতে বইয়ের তুল্য অন্য কিছু নেই। তাই বইয়ের শিল্প টিকিয়ে রাখতে মেলাকে প্রাণবন্ত করতে হবে। লেখক, প্রকাশককে উৎসাহিত করতে হবে। সর্বোপরি নিজের জীবন সুন্দর করতে মেলায় নিজের উপস্থিতি জানান দিতে হবে।
এসইউ/জিকেএস