মানসম্মত বই বেশি প্রকাশ হোক: তাহমিনা শিল্পী
তাহমিনা শিল্পী একাধারে কবি, কথাশিল্পী, শিশুসাহিত্যিক এবং সাংবাদিক। ১৯৭৭ সালের ২ নভেম্বর মাদারীপুর জেলার রাজৈর উপজেলা সদরে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা তৈয়ব আলী মিয়া, মা মমতাজ জাহান নিলু। তিন বােনের মধ্যে তিনি সবার বড়। তিনি ছােটবেলা থেকেই কবিতা লেখা শুরু করেন। স্থানীয় পত্রিকা, স্কুলের বার্ষিকীতে কবিতা লেখা শুরু করলেও সপ্তম শ্রেণিতে থাকাকালীন বাংলাদেশ বেতারের কলকাকলি অনুষ্ঠানে নিয়মিত কবিতা প্রচারের মাধ্যমে তার আত্মপ্রকাশ ঘটে।
তাহমিনা শিল্পী ইডেন মহিলা কলেজ থেকে ভূগােল ও পরিবেশ বিজ্ঞানে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। বর্তমানে বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশন বাংলাভিশনের সম্প্রচার ও প্রকৌশল বিভাগে কর্মরত। তিনি কবিতার পাশাপাশি ছােটগল্প, সমসাময়িক ঘটনাবলী ও সামাজিক সচেতনতা বিশেষ করে নারী ও শিশু অধিকার বিষয়ে ফিচার লিখে থাকেন। বিভিন্ন অনলাইন জার্নাল ও জাতীয় দৈনিকে তার লেখা বেশ কিছু কবিতা গল্প ও ফিচার ছাপা হয়েছে। এ পর্যন্ত তার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ১২টি।
সম্প্রতি বইমেলা ও বই প্রকাশ সম্পর্কে কথা বলেছেন জাগো নিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কবি ও কথাশিল্পী সালাহ উদ্দিন মাহমুদ—
জাগো নিউজ: আগামী বইমেলায় আপনার কয়টি বই প্রকাশিত হচ্ছে?
তাহমিনা শিল্পী: দুইটি বই প্রকাশিত হওয়ার কথা। একটি গল্পগ্রন্থ হচ্ছে ‘লাল লিপিস্টিক’। অন্যটি প্রবন্ধগ্রন্থ ‘মননে চিন্তনে প্রেমের ঠাকুর: জীবনবোধের শিক্ষক’।
আরও পড়ুন: সার্বিকভাবে বই বিক্রির পরিমাণ কমছে: অঞ্জন হাসান পবন
জাগো নিউজ: বাংলা একাডেমি আয়োজিত আগামী বইমেলা কেমন দেখতে চান?
তাহমিনা শিল্পী: বইমেলা নিয়ে লেখক, পাঠক, প্রকাশক সবারই বাড়তি আগ্রহ ও ভিন্ন ভিন্ন প্রত্যাশা থাকে।আমারও রয়েছে বিশেষ কিছু প্রত্যাশা। প্রকৃত পাঠকের সংখ্যা ক্রমেই বাড়তে থাকুক এবং তাদের পদচারণায় উৎসবমুখর হয়ে উঠুক মেলাপ্রাঙ্গণ। অগ্রজ-অনুজ সব লেখকের আত্মীক মেলবন্ধনে মেলাপ্রাঙ্গণে প্রাণচাঞ্চল্য বিরাজ করুক। সংখ্যায় অধিক নয় বরং মানসম্মত লেখার বেশি বই প্রকাশ হোক। লেখকরা যেন তাদের নিজ নিজ বইয়ের মাধ্যমে পাঠকের প্রত্যাশিত তৃষ্ণা মেটাতে পারেন। কর্তৃপক্ষ লিটল ম্যাগ চত্বরকে গুরুত্বের সাথে দেখবেন; নির্বিঘ্ন, নিরবচ্ছিন্ন পরিবেশে একটি নির্দিষ্ট স্থান লিটল ম্যাগ চত্বরকে দেবেন। সব মিলে আশা করছি, এবারের বইমেলা সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে অনুষ্ঠিত হবে। সত্যিকারের প্রাণের মেলা হবে।
জাগো নিউজ: আপনার দেখা বিগত বইমেলায় কোনো অসঙ্গতি চোখে পড়েছে?
তাহমিনা শিল্পী: বইমেলার সাথে আমাদের প্রাণের স্পন্দন মিশে আছে। তাই একটি নিয়মতান্ত্রিক ও পরিপাটি মেলাপ্রাঙ্গণ আশা করি। কিন্তু কোনো কোনো অসঙ্গতি ভাবিয়ে তোলে। লিটল ম্যাগ চত্বর বইমেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। লেখকদের প্রাণের আড্ডার স্থান। কিন্তু বিগত কয়েকটি বইমেলায় চত্বরটি নিয়ে কর্তৃপক্ষ ছিল সবচেয়ে বেশি উদাসীন। গতবার তো মোড়ক উন্মোচন মঞ্চের ঠিক পাশেই লিটল ম্যাগ চত্বর থাকায় অতিরিক্ত শব্দের কারণে স্বাভাবিক সৌন্দর্য হারিয়েছে। এছাড়া শিশু চত্বর একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। কিন্তু সেখানে প্রচুর ধূলো ও পাশেই আবর্জনার স্তূপ থাকা শিশুদের জন্য মোটেও স্বাস্থ্যকর নয়। এ বিষয়ে আরও সচেতন হওয়া দরকার। বইমেলায় এত বেশি খাবারের দোকান বরাদ্দ হয় যে, মূল উদ্দেশ্য বইয়ের দোকানের গুরুত্ব কমে যায়। ফলে বই বেচাকেনায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
জাগো নিউজ: বইমেলায় বইয়ের বিক্রি বাড়ছে নাকি কমছে?
তাহমিনা শিল্পী: বইয়ের বিক্রি হতাশাজনক হারে কমছে। মেলাপ্রাঙ্গণে প্রচুর লোক সমাগম হয়। বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোতে থাকে উপচেপড়া ভিড়। কিন্তু প্রকৃত সত্য হলো, পাঠক মানে প্রকৃতই যারা বইয়ের ক্রেতা, তাদের চেয়ে দর্শনার্থীই বেশি। এ বিষয়ে পাঠের প্রতি অনাগ্রহ, কাগজের দাম বৃদ্ধির কারণে বইয়ের দাম বৃদ্ধি, মানসম্মত লেখার বই কমে যাওয়া, ওয়েব বুক, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখা পড়ার সহজলভ্যতা অনেকাংশে দায়ী বলে মনে করছি।
আরও পড়ুন: সারাবছরই বইয়ের প্রচার করা উচিত: ফখরুল হাসান
জাগো নিউজ: বইয়ের প্রচারণাকে কোন দৃষ্টিতে দেখেন?
তাহমিনা শিল্পী: অবশ্যই ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছি। কারণ প্রচারেই প্রসার। বর্তমানে সব কিছুই প্রচার নির্ভর। প্রযুক্তি আমাদের প্রচারের নানা দিক উন্মুক্ত করে দিয়েছে। সুতরাং সুযোগটি গ্রহণ করাই উচিত।তাছাড়া প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান বা লেখক স্বয়ং অর্থ লগ্নি করে একেকটি বই প্রকাশ করছে। সে কারণে বইয়ের বাণিজ্যিক বিপণনের বিষয়টিও প্রচারের সঙ্গে সম্পৃক্ত।
জাগো নিউজ: বইমেলার পাঠকের জন্য কী পরামর্শ দেবেন?
তাহমিনা শিল্পী: শিখতে হলে জানতে হবে। জানতে হলে পড়তে হবে। পাঠের বিকল্প নেই। সুতরাং বই কিনুন। প্রচুর বই পড়ুন। আর গঠনমূলক সমালোচনা করুন। অন্যকেও বই উপহার দিন, পাঠে আগ্রহী করে তুলুন। বিশেষ করে শিশুদের হাতে মোবাইল, ভিডিও গেমস না দিয়ে তাদের উপযোগী বই তুলে দিন।আজকের শিশু আগামীর কাণ্ডারি। ওদের আলোকিত ও যোগ্যজন হয়ে সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখার সুযোগ করে দিন।
এসইউ/জিকেএস